ভারত-ভুটানকে বাদ দিয়ে কূটনীতিকদের সঙ্গে চীনের বৈঠক
ভারতের সিকিম সীমান্তের কাছে দোকলাম অঞ্চলে ভারত-চীনের সৈন্য মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে গত একমাস ধরে। ১৭ জুলাই টানা ১১ ঘণ্টার যুদ্ধ মহড়া দিয়েছে চীনা সৈন্যরা। একটি চ্যানেল বলেছে, চীনের রকেট হামলায় ভারতের ১৫৮ জন সৈন নিহত হয়েছে। কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হয়েছ। এমন পরিস্থিতিতে চলমান উত্তেজনার বিষয় নিয়ে চীনে কর্মরত সকল বিদেশি কূটনীতিকদের নিজেদের অবস্থানের ব্যখ্যা দিয়েছে দেশটি।
চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে অনুষ্টিত সেই বৈঠকে চীনের ক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সীমান্তে অনন্তকাল অপেক্ষা করবে না তার সৈন্য। তিব্বত মালভূমিতে পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছে। তবে তারা অনন্তকাল ধৈর্য ধরে থাকবে না।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও কয়েকটি পত্রিকা জানায়, সিকিম-ভুটান-তিব্বতের মিলনস্থলের কাছে দোকলাম এলাকাটি ভুটান নিজের বলে দাবি করছে। অন্যদিকে, চীন বলছে ১৮৯০ সালে বৃটিশ রাজ ও চীনের মধ্যে মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ভূখণ্ডটি তাদের। ওই এলাকায় চীনের একটি সড়ক নির্মাণে বাধা দিতে গত মাসে ভারতীয় সেনারা সীমান্ত পেরিয়ে চীনা ভূখণ্ডে ঢুকে পড়ে। ভুটানের অনুরোধে সেনারা সেখানে গিয়েছে বলে ভারত দাবি করে। তখন থেকে ওই এলাকায় দুই দেশের সেনারা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। সেনাদের সরিয়ে নিতে ভারতের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে চীন।
গত সপ্তাহে বিদেশি কূটনীতিকদের এই ব্রিফিংয়ে ভারত ও ভুটানকে ডাকা হয়নি বলে ভারতীয় পত্রিকাটি জানায়। অন্যদেশের কূটনীতিকরা ভারত ও ভুটানের কূটনীতিকদের বিষয়টি অবহিত করেন বলে জানা যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সপ্তাহে এক রুদ্ধদ্বার ব্রিফিংয়ে চীনের কর্মকর্তারা বেইজিংয়ে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিদের কাছে ভারতের সঙ্গে চলমান অচলাবস্থার বিষয়টি তুলে ধরেন। জি-২০ভুক্ত কয়েকটি দেশের কূটনীতিকদের আলাদাভাবে ব্রিফিং করা হয়।
জাতিসংঘের স্থায়ী পাঁচ দেশের একজন কূটনীতিক ভারতীয় পত্রিকাকে বলেন যে, সীমান্তে অচলাবস্থা নিরসনের জন্য চীন অনন্তকাল অপেক্ষা করবে না এমন ধারণা দিতে এই ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়েছে। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বলেও মনে করেন তিনি। বিষয়টি ভারত ও ভুটানের কূটনীতিকদের অবহিত করা হয়েছে বলে তিনি জানান। বেইজিংয়ের কূটনৈতিক সূত্রগুলোর মতে সিকিম সীমান্তের অচলাবস্থা তীব্র হয়ে উঠেছে।ওই কূটনীতিক বলেন, বেইজিংয়ে আমাদের সহকর্মীদের জানানো হয়েছে যে ভারতীয় সেনারা সীমান্তে অনুপ্রবেশ করেছে। ফলে স্থিতাবস্থা আর নেই।
গত ৩০ জুন ভারতের এক বিবৃতিতে বলা হয় যে, চীনের সাম্প্রতিক তৎপরতায় নয়াদিল্লি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। সীমান্তে স্থাপনা নির্মাণের ফলে স্থিতাবস্থার পরিবর্তন ঘটবে এবং তা ভারতের জন্য গুরুতর নিরাপত্তা হুমকি হয়ে দাঁড়াবে বলে চীন সরকারকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
বেইজিংয়ের ব্রিফিংয়ে কূটনীতিকদের জানানো হয়, দোকলাম এলাকাটি যে চীনের সে বিষয়ে তাদের কাছে পর্যাপ্ত প্রমাণ রয়েছে। চীনের সীমান্ত অধিবাসীরা যুগ যুগ ধরে দোকলামকে চারণভূমি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এমনকি এই এলাকায় পশু চড়ানোর জন্য ভুটানের পশুমালিকরা চীনকে কর দিয়েছে এমন রশিদও চীনের আর্কাইভে রাখা আছে।
ভারতীয় সেনাদের নি:শর্তভাবে ও অবিলম্বে সীমান্তের ওপারে সরে যেতে হবে বলে চীন দাবি করে। এটি চীন ও ভারতের মধ্যে কোন অর্থবহ আলোচনার পূর্ব শর্ত।
এদিকে, নয়াদিল্লি বলছে ভারত, চীন ও ভুটানের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সিকিম এলাকায় সীমান্ত রেখা চূড়ান্ত করা হবে বলে ২০১২ সালে বেইজিংয়ের সঙ্গে চুক্তি হয়। তাই কেউ একতরফা সীমান্ত নির্ধারণের চেষ্টা করলে তা হবে ওই চুক্তির লঙ্ঘন।
কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে অচলাবস্থা নিরসনের চেষ্টা চলছে বলে নয়াদিল্লির সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় মিডিয়া জানায়। আগামী ২৬-২৭ জুলাই ‘ব্রিকস’ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের বৈঠকে যোগ দিতে ভারতের এনএসএ অজিত দোভাল চীন যাচ্ছেন। সেখানে চীনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা স্টেট কাউন্সিলর ইয়াং জেইচি’র সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে দোভাল আলোচনা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন