ভারী বর্ষণে হঠাৎ বন্যা, দুর্ভোগে লাখো মানুষ
মোরার ক্ষত শুকানোর আগেই ফের মৌসুমী নিম্নচাপের প্রভাবে ঝড়োবাতাস আর ভারী বর্ষণের কবলে পড়েছে উপকূলবাসী। রোববার সকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে কয়েকটি জেলার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন এসব এলাকার লাখো মানুষ।
কক্সবাজার ও বান্দরবানের কয়েকটি উপজেলা, ভোলার মনপুরা এবং চট্টগ্রাম নগরীর অধিকাংশ এলাকা এখন পানির নিচে। বান্দরবানে পাহাড়ধসের শঙ্কায় রয়েছে ৩০ হাজার পরিবার। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে এসব তথ্য জানা গেছে।
কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, রোববার সকাল থেকে শুরু হওয়া থেমে থেমে বর্ষণে তলিয়ে গেছে শহর-গ্রামের রাস্তাঘাট, বাড়ি-ঘর, ব্যবসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সাগরে স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়েছে জোয়ারের পানি। ঢুকে প্লাবিত হচ্ছে উপকূলের গ্রামের পর গ্রাম।
ঝড়ো ও দমকা হাওয়ায় গাছ পালা ভেঙ্গে পড়ে বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ যোগাযোগ। ফলে রোববার সন্ধ্যা থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা শহর ছাড়া কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকা বিদ্যুৎহীন রয়েছে। বিদ্যুতের অভাবে সোমবার কক্সবাজার থেকে স্থানীয় কোনো পত্রিকা প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।
ঝড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে সোমবার ভোররাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এতে দুজেলে নিখোঁজ রয়েছে। ভাসমান অবস্থায় ১২ জেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমদ জানান, ১২ জেলে ফিরে এসেছে। বাকি দুইজনকে উদ্ধারে নৌ-বাহিনী ও জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় পাহাড়ী ঢলে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উভয় পাশে বিস্তীর্ণ এলাকা পানির নিচে ঢুবে গেছে। আকস্মিক বন্যায় ভোগান্তিতে পড়েছে জেলার চকরিয়া, পেকুয়া, রামু, টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও সদরের নিম্নাঞ্চলের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, অকস্মাৎ প্রবল বর্ষণ চলছে। নদী ও সবখানে পানি বেড়ে যাওয়ায় নিচু এলাকার বাসাবাড়ি প্লাবিত হচ্ছে বলে খবর পেয়েছি। ব্যবস্থা নিতে ইউএনওদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক জানিয়েছেন, রোববার সকাল ৬টা থেকে সোমবার বেলা ৩টা পর্যন্ত ২১ ঘণ্টায় জেলায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ১২১ মিলিমিটার। মৌসুমী নিম্নচাপের কারণে সাগর উত্তাল রয়েছে। রোববার সকাল থেকে থেমে থেমে ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা ও ঝড়ো হাওয়া বইছে। পূর্ণিমা তিথি ও বাতাসের কারণে সাগরে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি বাড়ছে।
বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, গত দুইদিনের টানা বর্ষণে পাহাড়ি ঢলে বান্দরবান জেলা শহর, লামা ও আলীকদন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
বিভিন্ন পয়েন্ট বানের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সোমবার সকাল থেকে লামা,আলীকদম এবং রুমা উপজেলা সদরের সঙ্গে জেলা সদরের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে।
পাহাড় ধসের আশঙ্কায় রয়েছেন জেলা সদর, লামা, আলীকদম, রুমা, রোয়াংছড়ি, নাইক্ষ্যংছড়ি এবং থানচি উপজেলায় প্রায় ৩০ হাজার পরিবার। টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় জেলার প্রায় ২০ হাজার লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
সোমবার জেলা প্রশাসনসহ এসব উপজেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকাবাসীদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাবার জন্যে মাইকিং করা হয়েছে।
লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার খিনওয়ান নু জানিয়েছেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে পাহাড়ের পাদদেশ ও নিম্নাঞ্চলে ঝুকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। এছাড়া স্কুল ও মাদ্রাসা গুলোতে দুর্যোগ কবলিত মানুষদের নিরাপদে আশ্রয় নেয়ার জন্য খুলে দেয়া হয়েছে।
লামা পৌরসভা মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, কাউন্সিলরদের সমন্বয়ে পরিস্থিতি সার্বক্ষনিক তদারকি করার জন্য কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত বিভিন্ন এলাকা থেকে নৌকাযোগে লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে আনার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মনপুরা (ভোলা) প্রতিনিধি জানান, মনপুরা উপজেলার দুই ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি অন্তত ৪০ হাজার মানুষ রমযানের মধ্যে দুর্ভোগ পড়েছেন। কলাতলীর চর ও চরনিজামে ৪-৫ ফুট জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান শেলিনা আকতার চৌধুরী জানান, উপজেলার মনপুরা ও হাজিরহাট ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। দ্রুত ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য পাউবোর কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ হাওলাদার জানান, জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের জন্য পাঁচ টন জিআর চাউল ও ৫০ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট মৌসুমী নিম্নচাপের প্রভাবে ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চল। এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন নগরবাসী। বিশেষ করে অফিসগামী মানুষ পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।
সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ১৭৭ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস।
এতে নগরীর নিম্নাঞ্চল বিশেষ করে আগ্রাবাদ, সিডিএ আবাসিক, শান্তিবাগ, হালিশহর, ছোটপুল, চকবাজার, বাকলিয়া, কাতালগঞ্জ, দুই নম্বর গেটসহ কোথাও কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও কোমর সমান পানি জমে গেছে।
এদিকে দেশের প্রধান ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গুদাম পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে কয়েকশ’ কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা।
দুপুরে কোমর পানিতে তলিয়ে যাওয়া নগরীর আগ্রাবাদ এক্সেস রোড পরিদর্শন করেছে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ পরিস্থিতিতে মহেশখাল খনন, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, খালের দুপাড়ে রাস্তা নির্মাণ, এক্সেস রোড উঁচু করে পরিকল্পিত ড্রেনেজ সিস্টেম চালু করা হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন