ভালো নির্বাচন করা ছাড়া ইসি’র আর কোন বিকল্প নেই: ইসি মাছউদ

আগামী বছর ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে উৎসবমুখর পরিবেশে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কমিশন সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। একটা সুষ্ঠু, সুন্দর, নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কমিশনের যা-যা পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সব পদক্ষেপ নিচ্ছে। জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আব্দুর রহমানেল মাছউদ বাসসকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ভালো নির্বাচন করা ছাড়া ইসি’র কাছে আর কোন বিকল্প নেই। আমাদের ভালো নির্বাচন করতেই হবে জাতির জন্য, দেশের জন্য, মানুষের জন্য। আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা অর্জনের জন্য। ভালো নির্বাচন ছাড়া কোন বিকল্প নেই। দেয়ালে পিঠ টেকে গেছে। আর পিছনে যাওয়ার সুযোগ নেই।

ইসি মাছউদ বলেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঈদের আগে ভোট হবে। এটা সবাই জানি। আমরা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এখান থেকে পিছপা হবো না। আমরা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি। আপনি যদি জিজ্ঞেস করেন ভালো নির্বাচন করার জন্য কী করছি। তাহলে বলবো-সবই করছি। একটা সুষ্ঠু, সুন্দর, নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কমিশনের যা-যা পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থার অভাব রয়েছে। সবাই একটা আস্থাহীনতার মধ্যে রয়েছি। আস্থার জায়গাটাকে আমরা বলছি যে, এটা ন্যাশনাল ক্রাইসিস। সবাই মিলে এই বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য, বাংলাদেশের মঙ্গলের জন্য, মানুষের মঙ্গলের জন্য পরস্পরের প্রতি একটা আস্থা সৃষ্টি করতে হবে।

একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর নির্বাচন করার জন্য কী-কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন এবং আপনারা কতটা প্রস্তুত- এই প্রশ্নের জবাবে আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, ভালো নির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কমিশনের যে-যে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সব পদক্ষেপ ইনশাআল্লাহ নিচ্ছে। এ জন্য আমরা সবই করছি। সবার প্রতি আমাদের বার্তা হবে যে, কারো কথা চলবে না। তুমি তোমার নিজ দায়িত্বে থেকে নিজের কর্তব্যকে পালন করো। সবাই যদি আইন অনুযায়ী যে যার কর্তব্য পালন করে, তাহলে কোনো সমস্যা হবে না। মানুষ যদি ভালো হয় আইনের কোন প্রয়োজনই নেই।

ভোটের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য আপনারা কী-কী করছেন- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন এক পর্যায়ে চলে গেছি যে মানুষ, সমাজ, সাধারণ কৃষক, বিশ্বের কাছে যে ভালো নির্বাচন করে না। ভালো নির্বাচন করতে পারে না। নির্বাচন কমিশন অন্যের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়। অন্যের দ্বারা ডিক্টেড হয়। এই যে একটা মনোভাব নির্বাচনের প্রতি মানুষের। এখন আর ভালো নির্বাচন করা ছাড়া আর কোন বিকল্প নাই। ভালো নির্বাচন করতে হবে জাতি, দেশ ও মানুষের জন্য। আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা অর্জনের জন্য ভালো কাজ ছাড়া কোন বিকল্প নাই। আর পিছনে যাওয়ার কোন সুযোগ নাই।

তিনি বলেন, ‘আইনে একটা কথা বলা আছে যে, শুধু আপনি ন্যায় বিচার করলেন এটা যথেষ্ট নয়। যারা আমার বিচার প্রার্থী আসছে তাদেরকে বুঝতে হবে যে বিচার করছি। আমার চরিত্র-আমার আখলাক, আমার কাজ, আমার কর্ম, আমার চলন, আমার কথা, আমার বার্তা- তাতে সে বোঝে যে লোকটা সঠিক।’

ইসি মাছউদ আরো বলেন, ভালো নির্বাচনে পরাজয় নেই। আমি ভালো নির্বাচন করে হেরে গেছি তাও ভালো যে নির্বাচন তো ভালো হয়েছে। আমি আজকে ৫০টা ভোট পেয়েছি আগামীকাল চেষ্টা করব আমার আরো বেশি ভোট পেতে। কেউ কিন্তু হারে না। ভালো কাজ করলে কেউ হারে না। এক জায়গায় না এক জায়গায় ফল পাবে। অন্তত দু’জন মানুষ হলেও আপনার জন্য দোয়া করবে।

সুষ্ঠ নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আপনারা কোন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন-এমন প্রশ্নের জবারে তিনি বলেন, ঈদের আগে ফেব্রুয়ারিতে ভোট হবে, সবাই জানি। আমরা কিন্তু এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা পিছু পা হবো না। হয়তো একটু সামান্য রদবদল হবে। তাতে কিন্তু আমরা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি। তবে, মাঝখানে যদি এখন আমাদেরকে গণভোটের একটা বিষয় সিদ্ধান্ত হয়। সেক্ষেত্রে টাইম লাগবে। আমি মনে করি, যে একটা অর্ডিনেন্স বা একটা কিছু লাগবে। তখন আমরা পলিটিক্যাল পার্টির কনসেন্সাস নিয়ে, তারা কীভাবে বলে। আমরা যখন জাতীয় নির্বাচনের কর্মপন্থা ঠিক করেছি, তখন কিন্তু গণভোট ছিল না। আমরা ইলেকশন করব ফেব্রুয়ারিতে। আমরা সবাই প্রস্তুত হয়ে গেছি।

কর্মপরিকল্পনার আলোকে কতদূর অগ্রসর হয়েছেন- এ প্রশ্নের জবাবে ইসি আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, আমাদের প্রস্তুতি খারাপ না। খুব দ্রুত যাচ্ছি। আরেকটা বিষয় আইনশৃঙ্খলা বিষয়। আমাদের সবাই প্রস্তুত। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিটা যে পর্যায়ে রয়েছে, সেটা ভালো মনে করেছি। সবাই আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন যে আইনশৃঙ্খলা উন্নত হয়েছে। আমরা এই ইলেকশনটাকে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য যাতে করা যায়, সব ব্যাপারে তারা (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) সাহায্য সহযোগিতা করবে। তারা সবাই এক বাক্যে বলেছে, এই ব্যাপারে কোন সমস্যা নেই। আমরা বলেছি যে আনবায়াস ডিসিশন নিতে হবে। আপনার একজন প্রিজাইডিং অফিসারকে বুঝতে হবে যে সে স্বাধীন, পরাধীন না। আইনত অনুযায়ী তার উপর দায়িত্ব সে পালন করবে।

নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ ১৯৭৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে এলএলবি (অনার্স) (২য় শ্রেণিতে ৫ম স্থান) এবং ১৯৭৮ সালে এলএলএম (২য় শ্রেণীতে ২য় স্থান) ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ২০ এপ্রিল ১৯৮৩ সালে মুন্সেফ (সহকারী জজ) হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোট বিভাগে প্রেষণে প্রথম সহকারী রেজিস্টার ও ডেপুটি রেজিস্টার-১ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০০ সালের ১০ এপ্রিল জেলা জজ হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে ময়মনসিংহের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪, ঢাকা-এর বিচারকসহ চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী এবং কুমিল্লায় জেলাও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ২০১৩-২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল-১, ঢাকা’র সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি অবসর গ্রহণ করেন। নির্বাচন আইন, দুর্নীতি দমন আইন, ভূমি আইন ও ফৌজদারী কার্যিবিধিসহ আইনের বিভিন্ন বিষয়ে তার ১৮টি গ্রন্থ রয়েছে।