আমি বলছি আর কান্না করবো না। আর করতে চাইও না। অানিসুল হক ভালো মানুষ। তাইতো ভালো সময়ে তিনি চলে গেছেন। কিন্তু এমন দায়িত্ব আমাদের দিয়ে গেছেন যে আমরা কখনো খারাপ কাজ করতে পারবো না। এক বছর হলো তিনি চলে গেছেন। তার দেহ না পেলেও মানসিক ও তাত্ত্বিকভাবে তিনি আমাদের সঙ্গেই থাকেন। নিরন্তর আমি ওকে ফিরে পাই। সবসময় তার সঙ্গে কথা বলি; ও আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়। এটিকে ধারণ করেই এখন বেঁচে আছি।

আবেগে ভাসিয়ে দিয়ে এমন কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হক। বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের আয়োজনে প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের স্মরণে সভা ও দোয়া মাহফিলে এসব কথা বলেন।

রুবানা হক বলেন, অানিস ছিলেন আমার স্বামী, বন্ধু ও অভিভাবক। জীবনের তিন দশক আমি তার সঙ্গে কাটিয়েছি। একটু পাগলমনা মানুষ ছিলেন, কখন কী যে করতেন কিছুই বোঝা যেত না। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তিনি আমাদের শিখিয়েছেন। এখন অনুভব করছি।

রুবানা বলেন, সবসময় মানুষকে কাছে টেনে নিতেন। প্রতিপক্ষকে সম্মান করতেন। কোনো কাজে হেরে গেলে কীভাবে তা মেনে নিতে হয় তা সে জানতেন। যখন যেটা করবে বলেছেন তা করে দেখাতেন।

সভায় আনিসুল হকের ভাই সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আবু বেলাল মোহাম্মদ সফিউল হক বলেন, আনিস ভাই আমাদের পরিবারের সবার অভিবাবক ছিলেন। আমি মনে করতাম তার (আনিসুল হক) সব কথা আমি জানি। কিন্তু তার মৃত্যুর পর আমার এ ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। উনি যে কত বড় মানুষ ছিলেন তা আসলেই আমি জানতাম না। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন এটাই আমাদের কামনা।

এফবিসিসিআই সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মাহবুবর রহমান, মীর নাসির, কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, এ কে আজাদ, আনিসুল হকের ছেলে-মেয়ে ও পরিবারের সদস্যরা। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম, এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি মো. মুনতাকিম আশরাফসহ সংগঠনের সাবেক ও বর্তমান পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, আদর্শ নেতা একটি সমাজকে পরিবর্তন করতে পারে। যেমনটা করেছেন প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। যিনি তার নেতৃত্বে পরিবর্তন করেছেন ব্যবসায়িক সংগঠন। যখন যেটা করতে চেয়েছেন যেকোনো মূল্যে সেটা তিনি করে দেখিয়েছেন। যার জলন্ত উদাহরণ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন। তিনি সফল মেয়রই শুধু নন। একজন ব্যবসায়ী, সংগঠক, নেতা, সমাজসেবক ও অভিবাবক সব ক্ষেত্রেই সফল। আনিসুল হক সবসময় পক্ষ-বিরোধী সবাইকে আপন করে কাছে টেনে নিতেন। সফলতার স্বপ্ন দেখাতেন। তার যোগ্য নেতৃত্ব, অনুপ্রেরণা ও আদর্শের কারণে মানুষের মাঝে মরেও বেঁচে রয়েছেন।

আনিসুল হক ২০০৮-২০১০ মেয়াদকালে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এসসিসিআই) সভাপতি ছিলেন। এছাড়া পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদী গ্রুপের কর্ণধার আনিসুল হক। ৬৫ বছর বয়সে ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর লন্ডনের একটি হাসপাতালে মারা যান তিনি।