ভাষানচরেই রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া চলছে

নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাতিয়া উপজেলার ঠেঙ্গারচর থেকে (প্রকাশ) ভাষানচরেই হচ্ছে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন। আর এই ভাষানচরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য বাসস্থান হবে। ইতোমধ্যে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা দায়িত্বশীল মন্ত্রী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মাধ্যমে জানা গেছে।

এমনকি ‘ভাষানচরে’ রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ওয়াশিংটনে সফররত প্রধানমন্ত্রী ভয়েস অব আমেরিকার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, চরটি জালিয়ার চর, ঠেঙ্গার চর নামে পরিচিত হলেও তিনি ‘ভাষানচর’ নামটা পছন্দ করেছেন। এই নামেই চরটির নামকরণ করা হবে এবং সেখানেই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পুনর্বাসন করা হবে বলে জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের বিষয়টি এখন অনেকটাই চূড়ান্ত। ইতোমধ্যে চরটিতে কাজ শুরু করেছে সরকারসহ বিভিন্ন সংস্থা। চরটি বসবাসের উপযোগী করে তোলার পর সেখানে নেওয়া হবে রোহিঙ্গাদের।

ইতোমধ্যে চরটির অভ্যন্তরে হেলিপ্যাড ও সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে এবং সেখানে নৌ-বাহিনী সার্বিক তত্ত্ববধান করছে।

ভাষানচরের অবস্থান: হাতিয়া উপজেলা থেকে ২০ কিলোমিটার পূর্বে মেঘনা নদীপথ পার হলে ভাষানচরের অবস্থান। বর্তমানে ওই চরটির আয়তন প্রায় ৩৩০ বর্গকিলোমিটার অর্থাৎ হাতিয়ার মূল ভূখণ্ডের আয়তনের প্রায় সমান। এছাড়া দ্বীপটির চতুর্দিকে প্রতি বছর গড়ে ৩৫-৪০ বর্গকিলোমিটার ভূমি (চর) জেগে উঠছে। হাতিয়া থেকে ট্রলারযোগে ভাষানচর যেতে সময় লাগে প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা। ভাষানচরের পূর্বদিকে স্বদীপ উপজেলা এবং উত্তরে সেনাবাহিনীর (রিসার্চ সেন্টার) প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্বর্ণদ্বীপের অবস্থান।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯০ সালের দিকে স্থানীয় জেলেরা এখানে একটি ডুবোচরের অস্তিত্ব খুঁজে পান। পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে ডুবোচরটির আয়তন বৃদ্ধির পাশাপাশি একই সময় দক্ষিণে আরো একটি নতুন চর জেগে ওঠে। স্থানীয় জেলেদের কাছে এটি ‘গাঙ্গরিয়ার চর’ নামে পরিচিত। বিশেষ করে এর দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব এবং উত্তর দিকে প্রচুর ভূমি জাগছে। বিশাল চরটিতে মহিষের কয়েকটি বাথান রয়েছে। ভাষানচর (ঠেঙ্গারচর) এর তিন কিলোমিটার পশ্চিমে অর্থাৎ হাতিয়া মূল ভূখণ্ডের পূর্ব দিকে ‘ইসলাম চর’ নামে আরো একটি চর তিন দশক র্পূবে জেগে উঠে। ৪০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ওই চরটি বিলীন হয়ে বর্তমানে ১৫ বর্গকিলোমিটারে এসে পৌঁছেছে।

কয়েক বছর আগে স্থানীয় বন বিভাগ এখানে বনায়ন শুরু করে। ফলে ভাষানচরে বিভিন্ন অংশে গাছ-গাছালিতে ভরে গেছে। এক সময় এই চরসহ পুরো উপকূলীয় অঞ্চল জলদস্যু ও বনদস্যু অধ্যুষিত থাকলেও বর্তমানে এখানকার দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। বিশেষ করে হাতিয়ার ‘জাহাইজ্যার চর’ বর্তমান স্বর্ণদ্বীপে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পাশাপাশি নৌ-বাহিনী ও কোস্টগার্ডের ফাঁড়ি রয়েছে।

এ বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খোন্দকার মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, হাতিয়ার আশপাশের চরগুলোর একাধিক নাম রয়েছে। ঠেঙ্গারচরেরও একাধিক নাম রয়েছে। কেউ এটাকে বলে ভাষানচর, কেউ বলে জালিয়ারচর। নাম যাই হোক রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জন্য এই ভাষানচরটিকে নির্বাচন করা হয়েছে।

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, ‘সম্প্রতি ভূমি মন্ত্রণালয় হাতিয়া উপজেলার ভাষানচরটি নৌবাহিনীর সহায়তায় বসবাসের উপযোগী ও সার্বিক উন্নয়নের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘এ ভাষানচরটির কাজ গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে শুরু হয়েছে। চরটিতে এখনো জনবসতি গড়ে উঠেনি। তাই বসতি স্থাপনের জন্য কিছুটা সময় প্রয়োজন।’

রোহিঙ্গাদের বসবাসের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভাষানচরে পুনর্বাসিত করলে এখানে পুলিশ, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর টহল ও তৎপরতা বাড়নো হবে।’