ইভিএমে ভালো হবে ভোট, কারচুপি অসম্ভব : কাদের
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম নির্বাচন সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করবে বলে মনে করেন ওবায়দুল কাদের। এই যন্ত্র নিয়ে কারচুপি অসম্ভব বলেও জানিয়েছেন তিনি।
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে আলোচনা হঠাৎ তুঙ্গে উঠা, বিএনপির বিরোধিতা এমনকি একজন নির্বাচন কমিশনারের ‘বিদ্রোহের’ মতো পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার মধ্যে শুক্রবার সকালে সংবাদ সম্মেলনে সিলেটে এ নিয়ে কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
কাদের বলেন, ‘নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার দেশের নির্বাচন সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করবে। ইভিএম এ নির্বাচনী ফলাফল টেম্পারিং করা অসম্ভব।’
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে নির্বাচনে সীমিত পর্যায়ে হলেও ইভিএম ব্যবহারের প্রস্তাব করে। তবে বিএনপি তখন থেকেই এর বিরোধী ছিল।
গত বছর জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন দলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপের সময়ও এই বিষয়টি নিয়ে কথা হয়। আর তখনও বিএনপি বিরোধিতা করে, নির্বাচন কমিশনও সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানায়।
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন সচিব একশ আসনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা এবং দেড় লাখ ইভিএম কেনার পরিকল্পনার কথা জানানোর পর থেকেই শুরু হয়েছে আলোচনা।
এর মধ্যে বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন ভোটে ইভিএম ব্যবহারের সুযোগ রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ-আরপিও সংশোধনীর প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে। যদিও নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার এই বৈঠক বর্জন করেছেন।
বিএনপির আশঙ্কা, এই যন্ত্র নিয়ে কারচুপি করা সম্ভব আর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতেই যন্ত্রটির ব্যবহারের চেষ্টা করছে নির্বাচন কমিশন। যদিও চলতি বছর পাঁচ সিটি নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে কোনো বিতর্ক হয়নি, বরং ভোটাররা এই যন্ত্রকে তুলনামূলক ভালো বলেছেন। পাশাপাশি যেসব কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার হয়েছে, সেগুলোতে কোনো গোলযোগই হয়নি।
তবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ইভিএমে হেরে গেলে বিএনপির অযুহাত করার সুযোগ থাকবে না বলেই তারা এর বিরোধিতা করেছে।
‘জনগণের ওপর যাদের আস্থা নেই, তারা অজুহাত খুঁজে বেড়ায়’ মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘নিরপেক্ষ সরকারের চেয়েও বেশি দরকার নিরপেক্ষ ইলেকশন কমিশন, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ থাকলে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। যাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তাঁদের দরকার নির্বাচনটা নিরপেক্ষ হবে কি না? নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তাঁদের ভয় কোথায়?’
নির্বাচন কমিশনে কমিশনার মাহবুব তালুকাদরের ইভিএম নিয়ে আপত্তির বিষয়ে এক প্রশ্নে কাদের বলেন, ‘একজন নোট অব ডিসেন্ট দিতেই পারে, ভিন্নমত থাকতেই পারে, এটাই গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য। নির্বাচন কমিশনেও গণতন্ত্র আছে। নোট অব ডিসেন্ট দেয়ার অধিকারই গণতন্ত্র।’
কাদের বলেন, ‘কেউ যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, তা হলে নির্বাচনের ট্রেন থেমে থাকবে না। বিএনপি যদি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, আওয়ামী লীগের তাতে কিছু করার নেই।’
‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের ট্রেন কি থেমে থেকেছে কোনো একটা দলের জন্য? বিএনপি সেই নির্বাচনে অংশ নেয়নি, সেটা তাদের ভুল। সে ভুলের মাশুল তাঁরা আজও দিচ্ছে। সেই ভুলের জন্য যাঁরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন, তাঁদের অপরাধটা কোথায়?’
ওই নির্বাচনে দেড়শরও বেশি আসনে সংসদ সদস্যরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া নিয়ে এখনও বিএনপি কথা শোনায় আওয়ামী লীগকে।
এর জবাবে কাদের বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন হয়েছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ফ্রি, ফেয়ার নির্বাচন করেছে। এখন একটা দল নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের একটা ফাঁদ তৈরি করেছিল। সেটা তো সংবিধানের দোষ নয়। সেটা তো যাঁরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন, ওই ফাঁদের মধ্যে আটকা পড়ে, সেটা তো তাঁদের দোষ নয়। ইলেকশনে তো যাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বী, তাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্যই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল।’
‘এখন আপনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে গেলেন… এমন যদি হতো বিএনপি তখন নির্বাচনে যাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা যাতে না করতে পারে, সে জন্য কেউ বাধা দিয়েছে-এ রকম অভিযোগ তো নেই। তা হলে আমাদের বিরুদ্ধে কেন এ অপবাদ?’-পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন ওবায়দুল কাদের।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন