ভুলে ভরা শিক্ষক নিবন্ধনের প্রকাশিত মেধা তালিকা!
সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে শিক্ষক নিবন্ধন মেধা তালিকা। তালিকায় পুরুষের নামের স্থানে মেয়েদের নাম, বানান-নম্বর ভুলসহ নানা ভুল-ভ্রান্তির অভিযোগ উঠেছে।
ভুল সংশোধনে চাকরিপ্রত্যাশী নিবন্ধিত প্রার্থীরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ জানালেও তাতে কাজ হচ্ছে না বলে এনটিআরসিএ সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গত ১০ জুলাই শিক্ষক নিবন্ধনে স্কুল-কলেজ পর্যায়ে পাস করা সাড়ে ছয় লাখ প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। এ তালিকার ভিত্তিতে দেশের সব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শূন্য আসনের তালিকা চাওয়া হয়েছে। সে তালিকা পেলেই শূন্য আসনে মেধা তালিকা অনুযায়ী যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগের সুপারিশ করা হবে। তবে মেধা তালিকায় অসংখ্য ভুল-ভ্রান্তি পরিলক্ষিত হওয়ায় প্রার্থীরা বিপাকে পড়েছেন।
কুমিল্লার বাসিন্দা কবির হোসেন। তিনি নবম বেসরকরি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এনটিআরসিএ’র শিক্ষক নিয়োগ মেধা তালিকায় তিনি কলেজ পর্যায়ে বাংলা বিষয়ে ৭৩৬ ও স্কুল পর্যায়ে বাংলা বিষয়ে ১২৩৩ নম্বর তালিকায় স্থান পেয়েছেন। মেধা তালিকা তার রোল নম্বর স্থান পেলেও তার নামের স্থানে একজন নারীর নাম যুক্ত করা হয়েছে।
কবির বলেন, এতদিন অপেক্ষার পর মেধা তালিকা প্রকাশ করা হলেও তাতে নানা ধরনের ভুল তথ্য দেয়া হয়েছে। তার নামের স্থানে আরেক নারীর নাম যুক্ত করা হয়েছে। পরে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে গেলে তারা একটি অভিযোগ দিতে বলে। তবে কবে তা সংশোধন হবে সে বিষয়ে তারা কিছুই বলেনি।
১১তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে দুটি স্তরে পাস করেছেন রায়হান রহমান। মেধা তালিকায় স্কুল পর্যায়ে তার নামের অর্ধেক সঠিক থাকলেও কলেজ পর্যায়ে আরেক জনের নাম দেয়া হয়েছে। প্রথমে বুঝতে না পারলেও বারবার তা যাচাই করে দেখেন প্রতিষ্ঠান তার নাম পরিবর্তন করে দিয়েছে।
রায়হান রহমান বলেন, মেধা তালিকায় অসংখ্য ভুল-ভ্রান্তি রয়েছে। কলেজ স্কুল পর্যায়ে তার রোল নম্বরে দুটি নাম দিয়েছে। কীভাবে তা সংশোধন করবেন সে বিষয়ে নির্দেশনা না থাকায় তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
১১তম শিক্ষক নিবন্ধনে পাস করা রবিন নামে আরেক প্রার্থী জানান, কম্পিউটার বিষয়ে নিবন্ধন হলেও তাকে গণিতে বিষয়ে মেধা তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি কম্পিউটার বিষয়ে নিবন্ধিত হলেও আমাকে গণিত বিষয়ের মেধা তালিকায় আনা হয়েছে। আমার বিষয় পরিবর্তন হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছি। গণিতে শিক্ষকতা করা আমরা পক্ষে কঠিন হয়ে পড়বে। তাই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে তিনি লিখিত অভিযোগ দিব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমার মতো অনেকেরই নাম, রোল, বিষয়সহ নানা ভুল ধরা পড়েছে। অনেকে এনটিআরসিএ গিয়ে অভিযোগ করেছেন।
ভুক্তভোগী একাধিক প্রার্থী জানান, এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষের অযোগ্যতা ও দায়িত্বহীতার ফলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তাদের অদক্ষতার ফলে আমরা বিপাকে পড়েছি। এনটিআরসিএতে কোনো সমস্যা নিয়ে গেলে প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয় না। সব সময় দরজা বন্ধ থাকায় হতাশ নিয়ে সেবা প্রত্যাশীদের ফিরে আসতে হয়। জোর করে ভিতরে যেতে চাইলেও দায়িত্বরতরা নানাভাবে হয়রানী করে বের করে দেন।
এদিকে মেধা তালিকায় ভুল-ভ্রান্তির অভিযোগ অস্বীকার করলেও এ রকম কয়েকটি অভিযোগ জমা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এনটিআরসিএ’র চেয়ারম্যান এ এমএম আজহার।
তিনি বলেন, আমরা অনেক বড় ধরনের কাজ করছি। ১-১১তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রায় সাড়ে ছয় লাখ প্রার্থীর তালিকা করা হয়েছে। সেখানে কিছু ভুল ধরা পড়লেও তা বড় করে দেখার কিছু নেই।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে কয়েকটি অভিযোগ এসেছে। আমরা তা সংশোধন করে দিব। তালিকায় আরও যদি কারও কোনো ধরনের ভুল ধরা পড়ে তবে সেটি উল্লেখ করে এনটিআরসিএতে লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ১০ জুলাই এনটিআরসিএ’র ১-১১তম শিক্ষক নিবন্ধনে স্কুল-কলেজ পর্যায়ে উত্তীর্ণ প্রায় সাড়ে ছয় লাখ প্রার্থীর মেধা তালিকা প্রকাশ করে। সারাদেশে প্রায় ৩০ হাজার শূন্য আসনের ভিত্তিতে এ তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন