ভূয়া ওয়ারেন্ট সিন্ডিকেট প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করুন : সাবেক বিচারপতি ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজী

আদালতে কর্মরত অসাধু মুহুরি, স্টাফ ও কতিপয় অসাধু আইনজীবীর যোগসাজশে ভুয়া ভূয়া ওয়ারেন্ট সিন্ডিকেট ও ভূয়া গ্রেফতার বাণিজ্য বন্ধে সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের আহ্বান জানিয়ে ভার্চুয়াল বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচাপতি ফয়সাল মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, প্রতারকচক্র বিভিন্ন আদালতের সিল, স্বাক্ষর ও কাগজ জাল করে ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা তৈরির পর আদালত থেকে ডাকযোগে পাঠিয়ে দেয়। গ্রেফতারি পরোয়ানা তৈরি করে তারা পুলিশকে বিভ্রান্ত করছে। যার ফলশ্রুতিতে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সরকার ও আইন বিভাগকে কার্যকর ব্যাবস্থা গ্রহন করতে হবে। অন্যথায় বিচার বিভাগ সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে।

রবিবার (১৯ ডিসেম্বর) হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের কর্ণারে এশিয়া হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে “রুখে দাও- ভূয়া ওয়ারেন্ট সিন্ডিকেট ও ভূয়া গ্রেফতার বাণিজ্য” নাগরিকদের হয়রানি কমাতে ভূয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা রোধে মহামান্য হাইকোর্টের ৭ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নের দাবীতে নাগরিক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ঢাকা জজকোর্ট এলাকায় একশ্রেণীর প্রতারক নারী-পুরুষ রয়েছে। তারা ভাড়ায় বাদী সেজে মামলা করে। এ ধরনের প্রতারকের সংখা সবচেয়ে বেশি ঢাকার জজকোর্ট পাড়ায়। দেশের বিভিন্ন আদালতে গিয়েও মামলা করে তারা।। ঢাকার জজকোর্ট এলাকায় ভাড়া খাটা বাদী, সাক্ষী এবং অসাধু মুহুরি ও আইনজীবীদের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। ভাড়াটিয়া বাদীকে ভালো করে মিথ্যা নাম, ঠিকানা ও ঘটনা মুখস্থ করিয়ে আইনজীবীর কাছে নিয়ে মামলা করার জন্য হাজির করেন। সেভাবেই সাজানো ঘটনা লিখে এজাহার হিসেবে আদালতে দাখিল করেন আইনজীবী। ওই সময় আদালত বাদীর কাছ থেকে কিছু বিষয় জেনে নিয়ে এজাহারের উল্টো পিঠে লিখে রাখেন। যদি আদালত মনে করেন ঘটনাটি তদন্ত হওয়া দরকার, তাহলে সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশ দেন তদন্ত করার জন্য। আর যদি ঘটনাটি আদালত বিশ্বাসযোগ্য মনে করেন, সে ক্ষেত্রে তিনি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন।

সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান এ জে আলমগীরের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভূইয়া, জাসদ (ইনু) কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য এনামুজ্জামান চৌধুরী, বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসা, ক্ষতিগ্রস্ত প্রফেসর আব্দুল কাইয়ুম শিশির, সোনার বাংলা পার্টির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ হারুন অর রশিদ, গ্রীন পার্টির মহাসচিব বশির উদ্দিন, ক্ষতিগ্রস্ত জিয়াউর রহমান পারভেজ, গণফোরাম নেতা মোঃ আব্দুল রাজ্জাক, ন্যাপ যুগ্ম মহাসচিব কৃষক মো. মহসিন ভূইয়া, আরকে রিপন প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ভুয়া মামলা-ভুয়া ওয়ারেন্ট -সারা দেশেই ভুয়া মামলা ও ভুয়া ওয়ারেন্টের ধকলে অগণিত মানুষ সীমাহীন হয়রানির শিকার হচ্ছে। তারা এক জেলার বাসিন্দা হয়ে আরেক জেলার ভুয়া ওয়ারেন্টের ধকলে দিনের পর দিন হাজতবাস করেও মুক্তি পাচ্ছে না। আইনের কঠিন বেড়াজালে অন্তহীন দুর্ভোগ পোহাতে বাধ্য হচ্ছে তারা। একশ্রেণির দুর্নীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তা ও কোর্ট-কাচারির প্রতারক চক্রের যৌথ কারসাজিতে দেশজুড়েই এ ভয়ঙ্কর ভুয়াবাজি চলছে। এথেকে মুক্তির লক্ষে সরকারকে যথাযথ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। এটি এখন ভুক্তভোগিদের সময়ের দাবী।

তারা আরো বলেন, সম্প্রতি আদালতের সিলমোহর জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করার অভিযোগে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে অধ্যাপক কাজী মো: আবু কাইয়ুম ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন। গত মঙ্গলবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল করিম চৌধুরী ওরফে স্বপন চৌধুরী ও তার অফিসের কর্মকর্তা কায়েছুল ইসলামের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ মামলা করেন তিনি। এই স্বপন চৌধুরী ঐ ভূয়া সিন্ডিকেটের সদস্য হিসাবেই এভাবে নানা মানুষকে হয়রানি করতে। তাকে অভিলম্বে আইনের আওয়ায় আনা উচিত। তাহলে তার সাথে সকল অপরাধিকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে সহজ হবে।

বক্তারা বলেন, মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অধ্যাপক কাজী মো: আবু কাইয়ুম যিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক তিনিও এই ভূয়া সন্ডিকেটের আগ্রাস থেকে মুক্তি পান নাই। ঐ সিন্ডিকেট তাকেও বিভিন্ন সময় আদালতের সিল ব্যবহার করে ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা তৈরির মাধ্যমে হয়রানি করছে। ভূয়া এই সিন্ডিকেটের হাত থেকে অধ্যাপক কাজী মো. আবু কাইয়ূমসহ সকলকে রক্ষা করতে সরকার ও আইন বিভাগকে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।