ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর হলে কী প্রভাব পড়তে পারে আগামী নির্বাচনে?
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2025/01/Futage-07-01-2023-EC-02-659c05d970fde.jpg)
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2025/02/475351977_1256003665483861_2959209934144112011_n.jpg)
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ভোটার হওয়ার বয়স ১৮ বছর হলেও, তা কমিয়ে ১৭বছর করা উচিত বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। এরপরই এটি নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী আলোচনা চলছে।
অন্যদিকে, আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২০ জানুয়ারি থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা নিয়ে হালনাগাদ শুরুর কথা থাকলেও সেটি নিয়ে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
পৌরসভাগুলো বিলুপ্তির প্রস্তাব করা হবে: স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন প্রধান
কেননা নির্বাচন কমিশন মনে করছে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ কার্যক্রম শুরুর পর যদি আইনে পরিবর্তন হয়ে ভোটার হওয়ার বয়স কমানো হয়, তখন নতুন করে সংকট তৈরি হতে পারে।
নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, “আগামী ২০ তারিখের আগেই যদি আইনে পরির্বতন আসে তাহলে নির্ধারিত সময়ই বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু হবে। না হলে কয়েকদিন দেরিও হতে পারে”।
ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ করা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পর এ নিয়ে রাজনীতিতেও এক ধরনের আলোচনা তৈরি হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পরদিনই এক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এর মাধ্যমে নির্বাচন নিয়ে কালক্ষেপণ হতে পারে।
তবে, ১৭ বছর করার পক্ষে অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
নির্বাচন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করছেন, ভোটার হওয়ার বয়স কমিয়ে তালিকা হালনাগাদ করা হলে যথা সময়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে সংকট তৈরি হতে পারে।
এছাড়াও ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তি, বিবাহ আইন সংশোধনসহ বিভিন্ন আইনে পরিবর্তন আনতে হতে পারে বলেও মনে করছেন তারা।
সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের চেয়ারম্যান ও নির্বাচন বিশ্লেষক মুনিরা খান বলেন, “তখন দেশের অন্যান্য আইনের সাথে ভোটার আইন অসামঞ্জস্যপূর্ণ হবে, সেই সাথে নতুন করে হালনাগাদ করে আগামী বছরের মধ্যে নির্বাচন করা বেশ জটিল হবে”।
তবে নির্বাচন কমিশন এখনো মনে করছে এটি খুব জটিল কাজ নয়, এর জন্য নির্বাচন আয়োজনে খুব একটা প্রভাব পড়বে না।
রাজনীতিতে নানা আলোচনা
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার আনতে এরই মধ্যে ১৫টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
ওই সংস্কার কমিশনগুলো সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগসহ দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে নানা সংস্কার প্রস্তাবনা প্রস্তুত করছে।
এরই মধ্যে গত ২৭ ডিসেম্বর ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ করা নিয়ে নিয়ে তার মত দেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “কোন বয়সে একজন নাগরিক ভোটার হতে পারবে তার জন্য নানা দেশে নানা বয়স নির্ধারণ করা আছে। নির্বাচন সংস্কার কমিশন নিশ্চয়ই এরকম একটা বয়স সুপারিশ করবে। সে বয়স আমার পছন্দ হতেও পারে না-ও হতে পারে”।
প্রধান উপদেষ্টা অপেক্ষাকৃত তরুণদের তাড়াতাড়ি ভোটার করার পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, যে যত তরুণ, পরিবর্তনের প্রতি তার আগ্রহ তত বেশি।
এসময় অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “তরুণরা সংখ্যায়ও বেশি। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা আগ্রহী। নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে তার মতামত নেওয়ার জন্য আমি মনে করি ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারিত হওয়া উচিত”।
তারপর দিনই ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার এ প্রস্তাবনা নিয়ে আপত্তি তুলেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি এসময় বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার এমন পরামর্শ বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ নাকি ১৮ হবে তা নির্ধারণের কাজ নির্বাচন কমিশনের”।
যদিও ভোটার হওয়ার বয়স কমানো নিয়ে উল্টো অবস্থান নেয় বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী।
এর পরদিন রোববার নীলফামারীতে এক অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ভোটার করার বয়স ১৭ করার দাবি জানান।
এসময় তিনি বলেন, শিশু-কিশোর ও যুবকেরাই আমাদের নতুন বাংলাদেশ উপহার দিয়েছে। তাই তাদের ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দিয়ে আমরা কিছুটা হলেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আমাদের দায় শোধ করতে পারি।’
নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি কী?
নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী প্রতি বছর দোসরা জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়।
পরে দাবি আপত্তি নিষ্পত্তি শেষে আগামী দোসরা মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন।
এ এম এম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
সে অনুযায়ী আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরুর সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের বর্তমান ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি ২০২৫ যে সব ভোটারদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে তাদেরকেই ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু ভোটার হওয়ার বয়স নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পর কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন।
কেননা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ শুরুর পর ভোটার হওয়ার বয়স কমানো হলে সেক্ষেত্রে নতুন জটিলতায় পড়েতে হতে পারে নির্বাচন কমিশনকে।
যে কারণে প্রধান উপদেষ্টার ওই বক্তব্যের পর ২০ জানুয়ারি থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তাও তৈরি হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, “এখন যদি ১৭ বছর হয় তাহলে ১ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে যাদের বয়স ১৭ বছর হয়েছে তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এটা নিয়ে কোন সমস্যা নেই। শুধুমাত্র সংবিধান ও আইনে পরির্বতন আনতে হবে আগে।”
তাহলে কী নির্বাচন কমিশন এই নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার মাছউদ বলেন, “এটা একটা আইনের বিষয়। সরকার কিংবা রাষ্ট্র যদি ঠিক করে দেয় অমুক বছরে ভোটার হবে সেটা ইসি করবে”।
প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্যের পর ২০শে জানুয়ারির মধ্যে আইন কিংবা সংবিধানে পরিবর্তন না হলে হালনাগাদ কার্যক্রমে আরো কিছুদিন পরে শুরু হতে পারে বলেও জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
পক্ষে বিপক্ষে নানা যুক্তি
গত ২৭ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে স্পষ্ট করে বলেছেন, তরুণরা সংখ্যায়ও বেশি এবং তাদের পরিবর্তনের প্রতি আগ্রহও বেশি।
যে কারণে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এক বছর বয়স কমিয়ে তরুণদের ভোটার করার ব্যাপারে তার বক্তব্য তুলে ধরেন।
এ নিয়ে রাজনীতিতে পক্ষে বিপক্ষে নানা মতামত উঠে আসার পাশাপাশি কিছু সংকটের বিষয়কেও গুরুত্ব দিচ্ছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন নিজেদের প্রস্তাবনায় ভোটার হওয়ার বসয় কমানোর কোন সুপারিশ এখনো পর্যন্ত করে নি।
তবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার তরুণদের সুযোগ দেয়ার জন্য বয়স কমিয়ে ভোটার করার পক্ষে একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছেন।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “সাধারণ জনতাকে সাথে নিয়ে জেন-জি প্রজন্ম চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছে। স্বৈরাচারি সরকারের পতন ঘটিয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন আন্দোলনে তরুণদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে”।
“তরুণরা তাদের গুরুত্ব প্রমাণ করতে পেরেছে, যে কারণে সেটির স্বীকৃতি হিসেবে ভোটার হওয়ার বয়স কমানোর বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ”, বলেন বদিউল আলম মজুমদার।
তবে ভোটার করার বয়স কমানো হলে কিছু সংকটের কথাও বলছিলেন নির্বাচন বিশ্লেষক ও সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের চেয়ারম্যান মুনিরা খান।
মুনিরা খান বলেন, “প্রথমত বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনে আঠারো বছরের নিচে যারা তা অপ্রাপ্ত বয়স্ক। যে কারণে নানা নাগরিক সেবা কিংবা অপরাধ সংক্রান্ত বিষয়েও তাদের শিশু কিশোর হিসেবে গণ্য করা হয়। ভোটার তালিকায় বয়স কমানো হলে সেটি নিয়ে সংকট তৈরি হবে”।
চলতি বছরের শেষ কিংবা পরের বছরের শুরুর দিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।
বিশ্লেষক মুনিরা খান বলেন, “সেক্ষেত্রে বয়স কমিয়ে নতুন হালনাগাদ করে নির্বাচন আয়োজন করতে গেলে সময়ক্ষেপণ হবে অনেক। আমি মনে করি চলতি বছর দ্রুততম সময়ের মধ্যেই নির্বাচন হওয়া উচিত”।
একই সাথে উন্নত বিশ্বের ভোটার হওয়ার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই ভোটার হওয়ার বয়স ১৮।”
বাংলাদেশে এই বয়স এক বছর কমানোর পেছনে যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
বয়স কমালে কত ভোটার বাড়তে পারে?
গত ২ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করে জানায় বর্তমানে দেশে মোট ভোটার ১২ কোটি ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার। গত এক বছরে ভোটার বেড়েছে ১৮ লাখ ৩৩ হাজার।
বিদ্যমান ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী ১ জানুয়ারি ২০২৫ সালে যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে তাদেরকেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ভোটার তালিকায়।
নতুন করে সংবিধানের ১২২ ধারা ও ভোটার তালিকা আইনে পরিবর্তন এনে ভোটার হওয়ার বয়স কত হতে পারে সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডির সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে এ নিয়ে একটি তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যের বরাত দিয়ে এনআইডি অনুবিভাগ বলছে, অনুযায়ী প্রতি বছর বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির যে হার সে অনুযায়ী বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হলে ভোটার বৃদ্ধির হার হয় দুই দশমিক পাঁচ শতাংশ।
ইসির ওই কর্মকর্তা জানান, চলতি বছর যদি ভোটার হওয়ার বয়স এক বছর কমিয়ে ১৭ বছর করা হয় সেক্ষেত্রে ভোটার বৃদ্ধির হার হবে পাঁচ শতাংশ।
খসড়া ভোটার তালিকা অনুযায়ী বর্তমানে দেশের ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৩৬ লাখ।
ইসির এনআইডি দপ্তর জানিয়েছে, এক বছর বয়স কমিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার হালনাগাদ করা হলে আগামী ভোটার তালিকায় নতুন করে যুক্ত হতে পারে ৫০ থেকে ৬০ লাখ ভোটার।
নতুন ভোটার তালিকায় আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে নতুন এই ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন আগামী জাতীয় নির্বাচনে।
নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, “আমরা বলেছিলাম ২০ জানুয়ারি থেকে বাড়ি বাড়ি যাবো বলেছিলাম, এখন আমরা একটু ওয়েট করেই যাবো বলে আমার ধারণা”। -বিবিসি বাংলা
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2024/12/469719549_122234398946008134_2936380767280646127_n.jpg)
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন