ভোটের আগে দলত্যাগী ৮ বিধায়কই ‘ফ্যাক্টর’ হলো কেজরিওয়ালের!

দীর্ঘ প্রায় তিন দশক পর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে বিশাল ব্যবধানে জয় পেয়ে ক্ষমতায় বসতে যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)।

তবে এবারের নির্বাচনে চরম ভরাডুবি ঘটেছে দিল্লির দুবারের মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালে আম আদমি পার্টির (আপ)। ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ৬২টি আসন জিতে দিল্লির মসনদে বসা কেজরিওয়ালের দল এবারের নির্বাচনে পেয়েছে মাত্র ২২টি আসন।

যার ফলে এমন ভরাডুবির নেপথ্যের কারণ নিয়ে চলছে নানা রকম চুলচেরা বিশ্লেষণ। তবে অনেক বিশ্লেষকই ধারণা করছেন, ভোটের আগে আম আদমি পার্টির দলত্যাগী আট বিধায়কই বড় ভূমিকা রেখেছে এই ভরাডুবির নেপথ্যে।

জানা যায়, দিল্লি ভোটের আগেই একসঙ্গে দল ছেড়েছিলেন আটজন আপ বিধায়ক। তারা সবাই যোগ দেন বিজেপিতে। আপের দাবি ছিল, টিকিট না পেয়েই দল ছেড়েছেন আট জন।

তবে তাদের দলত্যাগকে খুব একটা পাত্তা দিতে নারাজ ছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল। যদিও ভোটের ফল অনুযায়ী, ওই আট আসনেই ধরাশায়ী হয়েছে আপ। বিজেপির কাছে হারতে হয়েছে আপ প্রার্থীদের। যার ফলে প্রশ্ন উঠছে, দলত্যাগী বিধায়কেরাই কি ‘ফ্যাক্টর’ হলেন ওই আট আসনের ফলাফলের নেপথ্যে?

দিল্লি বিজেপির মুখপাত্র প্রবীণ শংকর কাপুর বলেন, ‘‘আপত্যাগী বিধায়কেরা এক সময় কেজরীওয়ালের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। কিন্তু পরে তারা বুঝেছেন, এখন আর কেজরীওয়াল সেই ‘আম আদমি’ (সাধারণ মানুষ) নেই, যা তিনি প্রথমে দাবি করতেন। ফলাফল থেকেই স্পষ্ট, বিরোধী আন্দোলন ছিল কেজরিওয়ালের বিপক্ষে। তবে তিনি তা মানেননি। বরং বিরোধী আন্দোলনের জন্য দলেরই কয়েকজন বিধায়ককেই দায়ী করেছিলেন এবং তাদের বঞ্চিত করেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার জানিয়েছে, গত ৩১ জানুয়ারি, দিল্লি ভোটের ঠিক পাঁচ দিন আগে একসঙ্গে আট বিধায়ক আপ ছাড়েন। আপ আহ্বায়ক কেজরিওয়ালকে চিঠি লিখে দলের সদস্যপদ ছাড়ার কথা জানান তারা। কেন তারা দল ছাড়লেন, তা-ও চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন বিধায়কেরা।

দলত্যাগী বিধায়ক বন্দনা গৌর জানিয়েছিলেন, কেজরীওয়াল এবং আপের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলায় এই সিদ্ধান্ত। বন্দনা ছাড়াও আপ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন আদর্শ নগরের বিধায়ক পবন শর্মা, মেহরৌলীর বিধায়ক নরেশ যাদব, মাদিপুরের বিধায়ক গিরিশ সোনি, ত্রিলোকপুরীর বিধায়ক রোহিত কুমার, জনকপুরীর বিধায়ক রাজেশ ঋষি, কস্তুরবা নগরের বিধায়ক মদন লাল এবং বিজিওসানের বিধায়ক বিএস জুন।

আট জনের মধ্যে কেজরীওয়াল এবার সাত বিধায়ককে পুনরায় ভোটে টিকিট না দিয়ে নতুন মুখ এনেছিলেন। কিন্তু তাতেও সেই আট আসনে জয় হাসিল করতে পারেনি আপ। আদর্শনগর থেকে জয় পান বিজেপি প্রার্থী রাজকুমার ভাটিয়া। ত্রিলোকপুরীও গিয়েছে বিজেপির দখলে। জয় পেয়েছেন রবি কান্ত। এছাড়াও মাদিপুর থেকে কৈলাস গাঙ্গওয়াল, কস্তুরবা নগর থেকে নীরজ বসোয়া, জনকপুরী থেকে আশিস সুদ, বিজিওসান থেকে কৈলাস গহলৌত এবং মেহরৌলী থেকে জিতেছেন গজেন্দ্র সিংহ যাদব। তারা প্রত্যেকেই বিজেপির টিকিটে লড়ে জয় পেয়েছেন।

দিল্লিতে একলা চলো নীতিতে হেঁটে মাশুল দিতে হয়েছে আপকে। ভোটগণনার পর দেখা যাচ্ছে, কেজরীর অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসেরই মাশুল গুনতে হচ্ছে আপকে। ২২টি আসন আপের দখলে। বিজেপি পেল ৪৮টি আসন। শূন্য কংগ্রেস।