ভোটের বছরে দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের রেকর্ড!
মাদকবিরোধী অভিযানে বাংলাদেশে আরো চারজন নিহত হয়েছেন৷ সব মিলিয়ে গত সাড়ে পাঁচ মাসে নিহত হয়েছেন ২৭৬ জন৷ গত ১০ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে প্রায় সাড়ে চারশ’৷
বুধবার ভোরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকায় র্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানের সময় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে আব্দুস শহীদ (৪২) নামে একজন৷ র্যাব দাবি করেছে, সে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের একজন তালিকাভূক্ত মাদক ব্যবসায়ী৷প্রায় একই সময়ে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ি এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন আবুল হোসেন (৫০) নামে একজন৷ তিনিও মাদকব্যবসায়ী বলে জানিয়েছে র্যাব৷
এদিকে টেকনাফে বুধবার ভোরে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে নজির আহমদ (৩৮) ও আবদুল আমিন(৩৫)৷ পুলিশ দাবি করেছে, কক্সবাজারের টেকনাফে মেরিন ড্রাইভে ইয়াবা চালান খালাসকে কেন্দ্র করে দুই ইয়াবা ব্যবসায়ী গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় ওই দুই জন নিহত হয়৷ পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ইয়াবা ও অস্ত্রসহ তাদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে৷
বাংলাদেশে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হয় চলতি বছরের মে মাসে৷ আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর হিসবে ১৫ মে থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ মাসে মাদকবিরোধী অভিযানে নিহত হয়েছে ২৭৬ জন৷ আর জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন মোট ৪৩৭ জন৷
২০১৭ সালে ১২ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল ১৬২ টি৷ ২০১৬ সালে ১৯৫, ২০১৫ সালে ১৯২, ২০১৪ সালে ১৫৮ এবং ২০১৩ সালে নিহত হয়েছিলেন ২০৮ জন৷
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভোটের বছর ২০১৮ সালের ১০ মাসে ২০১৭ সালের ১২ মাসের চেয়ে তিনগুন বেশি বিচারবহির্ভূত হত্যা হয়েছে৷
বাংলাদেশে মে মাসে শুরু হওয়া মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে বিতর্ক আছে৷ ২৬ মে রাতে টেকনাফের কাউন্সিলর একরামুল হককে হত্যার পর এই অভিযান প্রশ্নের মুখে পড়ে৷ তারপর বেশ কিছুদিন অভিযান থমকে যায়৷ বিরতি দিয়ে শুরুর পর এখন তা আবার নতুন করে গতি পাচ্ছে৷ মাদকবিরোধী অভিযানে প্রথম মাসেই নিহত হয় ১৩৮ জন আর গ্রেপ্তার হয় ১০ হাজারেরও বেশি৷ এই অভিযানে গ্রেপ্তারবাণিজ্য এবং টাকা না পেয়ে ‘ক্রসফায়ারের’ অভিযোগও আছে৷
বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা মানবাধিকার কর্মীরা অনেক বছর ধরেই এই বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকলেও শাসকগোষ্ঠী কখনোই আমলে নেয়নি৷ আর এখন কেউ এর শিকার হলেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয় মাদকের সঙ্গে জড়িত৷ যে-কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থকালেই তো তাকে হত্যা করা যায় না৷ বিচারে সোপর্দ না করে হত্যা করা সংবিধান, আইন ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন৷ শাসকগোষ্ঠী একটা শর্টকাট পথ বেছে নিচ্ছে৷ আর যারা এই কাজ করছেন, তারাও মনে করছেন সরকার আমাদের ওপর নির্ভরশীল৷”
তিনি বলেন, ‘‘এখন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের দু’টি স্টাইল আমরা খেয়াল করছি৷ একটা হলো বন্দুকযুদ্ধ এবং আরেকটা হলো লাশ উদ্ধার৷ লাশ উদ্ধারের সংখ্যা এখন বাড়ছে৷”
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘নির্বাচনের বছরে একটু হাওয়া বদলের প্রবণতা থাকে৷ তখন অনেক কিছুই ঢিলেঢালা হয়ে যায়৷ এর সুযোগ নেয় অনেকেই৷ ফলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডও বেড়ে যায়৷”
মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এ বছর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বেড়ে যাওয়ার দুটি কারণ আছে বলে আমার কাছে মনে হয়েছে৷ মে মাস থেকে শুরু হওয়া চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে এরই মধ্যে দু’শরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন৷ আর এটা নির্বাচনের বছর৷ আমরা অতীতে দেখেছি, নির্বাচনসহ বিশেষ বিশেষ সময়ে ক্রসফায়ার, বন্দুযুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বেড়ে যায়৷”
মাদকবিরোধী অভিযানের পরও মাদকের ব্যবসা এবং মাদক ব্যাহারকারী কমছে না৷ নতুন মাদকবিরোধী আইন সংসদে পাশ হয়েছে৷ তাতেও কোনো ফল এখানো দেখা যাচ্ছে না৷ তারপরও কেন এই অভিযান? কেন এই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড? নূর খান মনে করেন, ‘‘যে-কেনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় এই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে একটা সাময়িক উপশম পাওয়ার চেষ্টা করা হয়৷ আসলে তা শেষ পর্যন্ত কাজে আসে না৷ আরেকটি হলো নির্বাচনের আগে একটা ভয়ার্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা, যাতে প্রতিবাদী মানুষও কথা বলতে সাহস না পায়৷’-ডয়চে ভেলে
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন