ভোট গ্রহণের সময় কারচুপির সুযোগ কতটা রয়েছে?

আসন্ন নির্বাচনের প্রচারণা পর্বকে একতরফা ও অসম বলে বিরোধী জোট যেমন অভিযোগ করে এসেছে, তেমনি ভোট গ্রহণের সময় কারচুপির আশঙ্কাও তারা প্রকাশ করেছে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অভিযোগ তুলেছে কারচুপি করে নির্বাচনে জয়লাভের ছক কেটেছে আওয়ামী লীগ। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন ভোট কারচুপি করে নির্বাচনে জেতার কোন অভিপ্রায় তার সরকারের নেই।

কিন্তু ভোটে কারচুপির যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে সেই কারচুপির সুযোগ কতটা রয়েছে।

এ ব্যাপারে সাবেক নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, নির্বাচনের অনেক ধাপেই এই কারচুপির আশঙ্কা থাকে।

তিনি বলেন, “এ পর্যন্ত বিভিন্ন নির্বাচনে হুমকি ধমকি থেকে শুরু করে ব্যালট কারচুপি বিশেষ করে ভোটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ এসেছে সবচেয়ে বেশি।”

নির্বাচন সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর ভূমিকা:

এক্ষেত্রে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার ভূমিকাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন তিনি।

তার মতে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একজন প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে অনেক ক্ষমতা দেয়া হয়।

এখন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা যদি সেই ক্ষমতা প্রয়োগ না করেন, বা তাকে বল প্রয়োগের মাধ্যমে সেই সুযোগ দেয়া না হয়, তাহলে তাকে যে উদ্দেশ্যে রাখা সেটা সফল হয়না।

কিন্তু নির্বাচন কমিশন এই কেন্দ্রগুলোকে কড়া পাহাড়ার মধ্যে রাখার কথা জানালেও এমনটা কেন হয়।

বিবিসি বাংলার এমন প্রশ্নের জবাবে এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, মূলত পোলিং কর্মকর্তা এবং প্রিজাইডিং কর্মকর্তা বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষপাত-মূলত দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই এমনটা হয়ে থাকে।

ব্যালট বাক্স নিয়ে কারচুপি:

এছাড়া ব্যালট বাক্স নিয়ে কারচুপির কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, আগে যেসব অভিযোগ আসতো তারমধ্যে একটি হল ভোট গ্রহণের আগের রাতে ব্যালট বাক্সগুলো পূর্ণ করে দেয়া।

তবে এখন স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স আসায় সেটা সম্ভব হয়না।

বর্তমানে দেশের প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে একটি করে বাড়তি ব্যালট বাক্স যুক্ত করা হয়। যেন দুর্ঘটনায় কোন ব্যালট বাক্স ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটাকে পাল্টানো যায়।

এই বাড়তি ব্যালট বাক্সটি প্রিজাইডিং কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে থাকে।

তবে ইদানীং যে অভিযোগ ওঠে সেটা হল যে, আগের রাতেই এই বাড়তি ব্যালট বাক্সটি দখলে নিয়ে ব্যালট পেপারে পূর্ণ করা হয়।

এজেন্ট ইস্যুতে কারচুপি:

এজেন্ট ইস্যুতেও ভোট কারচুপির সুযোগ থাকে বলে জানান এম সাখাওয়াত হোসেন।

মি. হোসেন বলেন, “আমি এমনও শুনেছি যে প্রতিপক্ষের এজেন্টকে ভোটকেন্দ্রে ঢুকতেই দেয়া হয়নি।”

এই এজেন্ট না থাকলে, বুথের ভেতরে ব্যালট পেপার ছিনতাই এবং সেগুলোয় সিল দিয়ে রেখে দেয়ার সুযোগ থাকে।

মূলত পোলিং কর্মকর্তা এবং প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কারসাজিতে এটা করা হয় বলে জানান তিনি।

যদিও এ ধরণের ঘটনাগুলো হাতে গোনা কয়েকটি কেন্দ্রেই ঘটে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ইভিএমে কারচুপির সুযোগ রয়েছে?

এবারের নির্বাচনে দেশের ছয়টি আসনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে শুরু থেকেই বিরোধীদের অভিযোগ, এই ইভিএমের মাধ্যমে ডিজিটাল কারচুপির সুযোগ রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে এম সাখাওয়াত হোসেন চৌধুরী জানান, ইভিএমে কারচুপির কোন সুযোগ আছে কিনা সেটা তিনি নিশ্চিত নন। কেননা এই প্রযুক্তির প্রোগ্রামিংয়ের সঙ্গে অনেক বড় একটি পক্ষ জড়িত থাকে।

তবে এবারের ফলাফল থেকেই আসলে আন্দাজ করা যাবে যে, ইভিএমের ওপর পরবর্তীতে কতোটা নির্ভর করা যায়।

মিস্টার হোসেন বলেন, “প্রত্যেকটি কেন্দ্রের ইভিএম মেশিনের আলাদা করে চিপ থাকে। সব চিপগুলোতে যখন প্রোগ্রামিং করা হয় বা প্রোগ্রামিংয়ের পর কপি করা হয়। তখন প্রোগ্রামটি স্বচ্ছ হতে পারে আবার করাপ্টেডও হতে পারে।”

তবে কেন্দ্রীয়ভাবে এই প্রোগ্রাম করাপ্টেড করা অনেক কঠিন বলে তিনি মনে করেন।

তার মতে, এবারের ইভিএম পরিচালনায় সেনাবাহিনীর পাশাপাশি কয়েকজন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা যুক্ত থাকায়, কারচুপির সুযোগ তেমনটা নেই।

ইভিএম-এর যন্ত্রগুলো একটি অপরটির সঙ্গে যুক্ত নয়। অর্থাৎ এগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে সার্ভারের সাথে যুক্ত নয়। তাই এগুলোকে হ্যাক করারও কোন সুযোগ নেই। এছাড়া এর গণনাও আলাদাভাবে হয়।

তাই বিএনপির অভিযোগ কতোটা যুক্তিযুক্ত সেটা নিয়ে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন।

মিস্টার হোসেন বলেন, ” এই অভিযোগটি যখন উঠেছিল তখন আমরা বলেছিলাম আপনারা আসেন, ব্লু টুথ দিয়ে করে দেখান। যদি আপনাদের আশঙ্কা সঠিক হয়, তাহলে আমরা ইভিএম রাখবোই না। কিন্তু তারা আসেও নাই, দেখেও নাই, দেখায়ও নাই, যে ব্লুটুথ দিয়ে আদৌ কারচুপি সম্ভব কিনা। তারা শুধু বলছে, কিন্তু তাদের কাছে কোন প্রমাণ নেই।”

তাছাড়া এখনকার ইভিএমগুলো দুইভাবে ভেরিফিকেশন করে, প্রথমত ভোটারের পরিচয় নিশ্চিত করে, দ্বিতীয়ত ভোট গ্রহণ ও গণনা করে। এই পদ্ধতিতে ভোট কারচুপি প্রায় অসম্ভব বলে মনে করেন সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার।