দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচন

ভোট ছাড়াই চেয়ারম্যান ৩১ ইউপিতে, বিদ্রোহী প্রার্থীদের ছড়াছড়ি

ভোটের আগেই দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ৩১ জন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়ে গেছেন। ফলে ৮৪৬টি ইউপির মধ্যে ৩১টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ভোট লাগবে না। নির্বাচিত হতে যাওয়া চেয়ারম্যান প্রার্থীরা সবাই আওয়ামী লীগ মনোনীত। যাচাই-বাছাই ও প্রত্যাহারের পরে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সংখ্যা আরো বাড়বে। আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

২ নভেম্বর সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের ও ১০ পৌরসভার ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। ঐ ১০ পৌরসভার মধ্যে ভোট ছাড়াই দুই জন মেয়র বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন।

ইসি সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

গত ২০ জুন অনুষ্ঠিত ২০৪টি ইউপির মধ্যে ২৮ জন এবং ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ১৬০ ইউপির মধ্যে ৪৫ জন চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। অর্থাৎ প্রথম ধাপের ৩৬৫ ইউপির মধ্যে ৭৩ জন চেয়ারম্যান জনগণের ভোট ছাড়াই নির্বাচিত।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপের ৮৪৬ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ৪১ হাজার ৭৮৫ জন। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৪ হাজার ৭৫ জন, সংরক্ষিত সদস্য পদে ৯ হাজার ৫৬১ জন এবং সদস্য পদে ২৮ হাজার ১৪৯ প্রার্থী হয়েছেন। গত রবিবার মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষ হয়। দ্বিতীয় ধাপে ৮৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করা হয়। তবে মনোনয়নপত্র দাখিল হয়েছে ৮৪৬টিতে। দুটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। এ ধাপের ৮৪৬টি ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ৪ হাজার ৭৫ জন। তাদের মধ্যে ২ হাজার ৬৫৫ জনই স্বতন্ত্র প্রার্থী। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বড় একটি অংশ আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। মনোনয়ন বঞ্চিতরা বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচন করছেন। ফলে এবারও বিদ্রোহী প্রার্থীদের ছড়াছড়ি।

১৭টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল দ্বিতীয় ধাপে প্রার্থী দিয়েছে। এ নির্বাচনে ৮৩৮টিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার সাতটিতে এবং রাঙ্গামাটি জেলার বরকল উপজেলার একটিতে এ দলটির কোনো প্রার্থী নেই। অন্যান্য দলের মধ্যে জাতীয় পার্টি-জাপা ১০৭, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ৩৬৮, জাতীয় পার্টি-জেপির তিন, জাকের পার্টির ৪৯, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের ২৬ ও বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির পাঁচ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। অন্য দলগুলোর দুই থেকে পাঁচ জন প্রার্থী হয়েছেন। বিএনপির কেউ এ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেননি।

ইসি জানিয়েছে, আগামী ২১ অক্টোবর জমা পড়া মনোনয়নপত্র বাছাই করবেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। বাছাইয়ে বাতিল বা গ্রহণ হওয়া মনোনয়নপত্রের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে আগামী ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত। ২৫ অক্টোবরের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তি করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ আগামী ২৬ অক্টোবর। চূড়ান্ত প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ ও আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু ২৭ অক্টোবর এবং ভোটগ্রহণ হবে ১১ নভেম্বর।

৩১ ইউপিতে ভোট ছাড়াই চেয়ারম্যান :

যে ৩১টি ইউপিতে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন সেই ইউপিগুলো হলো সিরাজগঞ্জ সদরের সয়দাবাদ, যশোর চৌগাছার ফুলসারা, মাগুরা সদরের হাজরাপুর, বাগেরহাট সদরের গোটাপাড়া, মোল্লাহাটের গাংনী, জামালপুর সদরের রশিদপুর, শেরপুর সদরের কামারেরচর, কিশোরগঞ্জ বাজিতপুরের বলিয়ারদি, হালিমপুর, মানিকগঞ্জের সিংগাইরের বায়রা, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল, ভুলতা, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সৈয়দপুর, মুরাদপুর, কুমিরা, সোনাইছড়ি, মিরসরাইয়ের করেরহাট, ধুম, ওসমানপুর, কাটাছাড়া, মঘাদিয়া, মায়ানী, হাইতকান্দি, ইছাখালী, কুমিল্লা লাকসামের কান্দিরপাড়, গোবিন্দপুর, উত্তরদা, আজগরা, লাকসাম পূর্ব, ফেনীর ফুলগাজীর ফুলগাজী, আনন্দপুর।

দুই পৌরসভায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় :

১০ পৌরসভার মধ্যে দুই পৌরসভায় এবার ভোট হচ্ছে না। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় আওয়ামী লীগের মো. গোলাম হাক্কানী এবং খাগড়াছড়ির রামগড়ে আওয়ামী লীগের মো. রফিকুল আলম (কামাল) এককভাবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন। ফলে ভোটের আগেই তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। ১০টি পৌরসভায় মেয়র পদে মনোনয়ন দাখিল করেছেন ৪১ জন।

সিরাজগঞ্জ-৩ আসন :

সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের উপনির্বাচনে তিন জন মনোনয়ন দাখিল করেছেন। এরা হলেন আওয়ামী লীগের মেরিনা জাহান, জাতীয় পার্টি-জাপার মো. মোক্তার হোসেন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. হুমায়ুন কবির। আগামী ২ নভেম্বর সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে উপনির্বাচনের দিনই সপ্তম ধাপের ১০ পৌরসভায় নির্বাচন হবে।
সৌজন্যে: ইত্তেফাক