ভোলার ১২ ইউপিতে সহিংসতা, কেন্দ্র দখলের মধ্য দিয়ে নির্বাচন, নিহত-১

ভোলার ৪ উপজেলার ১২ ইউনিয়নের সহিংসতা, কেন্দ্র দখল, গুলিবর্ষণ, হতাহত ও ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে সোমবার নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী সহিংসতা হয়েছে জেলার সর্বদক্ষিণের উপজেলা চরফ্যাশন। এ উপজেলার ৫ টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৫ টি কেন্দ্রে ৫২ টি কেন্দ্রে ২০৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন। ভোটার রয়েছে হাজার।

চরফ্যাশনে নিহত-১:
সকাল ৮ থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভাবে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটের আগের দিন ২০ জুন উপজেলার হাজারীঞ্জে ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডে দুই মেম্বার প্রার্থীর মধ্যে হামলা বাড়ি ভাংচুর এর ঘটনা ঘটেছিলো। সকাল ৯ টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই চলছিল ভোট। বৃষ্টির মাঝে মহিলা ভোটারদের উপস্থিতিও ছিলো চেখে পরার মতো। ওই সময় চর কলমী ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার প্রভাষক মাহবুব আলম জানান, উৎসব মুখর পরিবেশে ভোট গ্রহন চলছে। ওই কেন্দ্রের চরকলমী উত্তর মঙ্গল মোশারেফ হোসেন হাওলাদার বাড়ি নুরানী মাদ্রাসার কেন্দ্রে ১৭৭৮ জন ভোটারের মধ্যে ১ ঘন্টায় ভোট দিয়েছেন ১৫২ জন ভোটার।
অন্যদিকে, এ উপজেলায় নির্বাচনী সহিংসতায় মনির (২৫) নামে এক ব্যাক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও অন্ততঃ ৩-৪ জন আহত হয়েছে।
সোমবার সকাল ১১ টার দিকে উপজেলার হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের চর ফকিরা কো -ইড প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত মনির ওই এলাকার বশির মিস্ত্রীর ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, ভোটকেন্দ্রের বাইরে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ বাঁধে। এতে মনির হোসেন নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাকে চরফ্যাসন উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে তিনি মারা যান।
৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী ইয়াসিন ও ইউসুফ সিকদার গ্রুপের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়।
চরফ্যাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ শোভন বশাক মনির হোসেনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।
ভোলার পুলিশ সুপার সরকার মোঃ কায়সার সাংবাদিকদের জানান, দুই মেম্বার প্রাথীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন নিহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে পুলিশ ১২ রাউন্ড গুলি চালিয়েছে। তবে, পুলিশের গুলিতে কেউ নিহত হয়নি।

তজুমদ্দিনে সতন্ত্র প্রার্থীর ভোট বর্জন:
তজুমদ্দিন উপজেলার চাচড়া ইউনিয়নের সতন্ত্র
প্রার্থী রিয়াদ হোসেন হান্নান ভোট বর্জন করেছেন ভোট কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার, অনিয়ম, কর্মী সমর্থকদের মারধরসহ নানা অভিযোগ এনে তিনি ভোট বর্জন করেন।
সোমবার দুপুরে তিনি নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষনা দিয়েছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, নির্বাচন শুরু হওয়ার সাথে সাথে তার আনারস প্রতিকের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয় প্রতিপক্ষ প্রার্থী নৌকার কর্মীরা। যেসব কেন্দ্রে এজেন্ট ছিলো তাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
এ ছাড়াও নির্বাচনের শুরুর আগে বহিরাগত লোকদের দিয়ে তার সমর্থকদের ১৫০ টি ঘর ভাংচুর এবং হামলা চালায়। এতে ১০০ কর্মী আহত হয়েছে। ভোটের পরিবেশ না থাকা এবং নানা অনিয়ম হওয়ায় ভোট থেকে সরে দাড়িয়েছি। বিষয়টি প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনকেও লিখিতভাবে জানিনয়েছি। এ সময় তিনি ভোট বর্জন করে পুনরায় ভোটের দাবী জানান।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ আমির খসরু গাজী বলেন, সতন্ত্র প্রার্থীর একটি লিখিত অভিযোগ আমরা পেয়েছি।

মনপুরা:
বড় ধরনের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া মনপুরা উপজেলার ২ নং হাজীর-হাট ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। সকালে বৃষ্টির জন্য ভোট কেন্দ্রে এসে ভোট দিতে কিছুটা বিলম্ব হলেও সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে নারী-পুরুষ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে স্বতস্ফূর্ত ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়েছেন। এ উপজেলায় কেন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। নির্বাচন অবাধ-নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু করতে প্রশাসন পুলিশের পাশাপাশি কোস্টগার্ড, র‌্যাব সহ অতিরিক্ত আনসার মোতায়েন ছিল।
এই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ২ প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। তারা হলেন নৌকার মনোনীত প্রার্থী শাহারিয়ার চৌধুরী দ্বীপক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন (প্রতীক আনারস)। মনপুরার হাজীরহাট ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা রয়েছে ১৯ হাজার ৬শ ৯৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১০ হাজার ৩১ ও নারী ভোটার ৯ হাজার ৬শ ৬৫ জন।
ইউনিয়নে মোট ভোট কেন্দ্র রয়েছে ১৩ টি।

চর-বইজউদ্দিন ভূইয়ার-হাট সরকারি প্রাথমিক সরকারি বিদ্যালয় নারী কেন্দ্রে নিয়োজিত পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মিলন সাংবাদিকদের বলেন, সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ভোটাররা স্বতস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছেন।
ভোটাররা বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে ভোট দিয়েছেন। ভোট দিতে পেরে অনেকের মনে আনন্দ বিরাজ করছে।
এ সময় ভোট দিতে আসা জুলেখা বেগম নামের একজন নারী ভোটার জানান, সকাল থেকে গুড়িগুড়ি বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে ভোট কেন্দ্রে এসে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরেছি। এতে কোন ধরণের হয়রানি ও বাঁধার শিকার হননি।

বোরহানদ্দিনের সাচড়া ৬নং ওয়ার্ডের কেন্দ্রে প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে উৎসব মুখর পরিবেশে ভোটগ্রহন শেষ হয়েছে। প্রশাসনের তৎপরতাও চোখে পড়ার মতো।
জেলা নির্বাচন অফিসার মো. আলা উদ্দিন আল মামুন বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণের লক্ষে জেলার ১২ ইউনিয়নে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নেওয়া হয়েছে ৩ স্তরের নিরাপত্তা। শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণের লক্ষে নির্বাচনী এলাকায় পুলিশ, র‌্যাব, কোস্টগার্ড, বিজিবি ও আনসার এবং ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত ছিল।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, জেলার ৪ উপজেলার ১২ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মোট ২৬ জন, পুরুষ সদস্য পদে ৪০৬ জন এবং সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১১৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।