ভোলায় জেলেদের নামের তালিকা নিবন্ধনের নামে টাকা নিলো মেম্বররা!

ভোলা সদর উপজেলার চরফ্যাশনের আহম্মদপুর ইউনিয়নে সরকারি সুবিধার জন্য জেলে তালিকাভুক্তি ও জেলে তালিকায় নিবন্ধনের নামে স্বজনপ্রীতির ও অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ৫ ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।

টাকা দেয়ার পরও তালিকাভুক্ত না হওয়ায় বঞ্চিত হচ্ছে সরকারি সহায়তা থেকে জেলেরা। আবার প্রকৃত জেলেদের পরিবর্তে টাকার বিনিময়ে অন্য পেশার লোকজনকে তালিকাভুক্ত করছেন।

অভিযুক্ত ইউপি সদস্যরা হলেন, ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম, ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরনবী বিল্লাহ, ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুল মান্নান, সংরক্ষিত ৪, ৫, ৬ আসানের নারী ইউপি সদস্য সুরাইয়া বেগম, ৭, ৮, ৯ আসানের নারী ইউপি সদস্য জুলেখা বেগম।

নদীতে ২ মাস মাছ ধরা বন্ধ থাকায় এবং করোনায় লকডাউনের কারণে সরকারি সহায়তার জন্য আগ্রহীর সংখ্যাও বেড়েছে।

৬নং ওয়ার্ডে কামাল মাঝি অভিযোগ করেন, গত একবছর আগে স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম তার কাছ থেকে জেলে তালিকায় নাম অর্ন্তভুক্তির জন্য ১ হাজার ৫শ’ টাকা নেন। একবছর পেরিয়ে গেলেও জেলে তালিকায় নাম উঠেনি তার। ফলে সরকারি সহায়তা থেকেও তিনি বঞ্চিত রয়েছেন।
২ মাসের নিষেধাজ্ঞা চলায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।

৮নং ওয়ার্ডের জেলে বাবুল গাজী অভিযোগ করেন, জেলে তালিকায় তার নাম নিবন্ধন করার জন্য ১ হাজার টাকা দেন। কিন্তু তালিকায় তার নাম আসেনি, পাননি জেলে কার্ডও। কারণ জানতে চাইলে তালবাহানা শুরু করেন ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম।

৮নং ওয়ার্ডের জেলে মাসুদ অভিযোগ করেন, জেলে তালিকায় তার নাম নিবন্ধন করতে সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য জুলেখা বেগম তার কাছ থেকে ১হাজার ৫শ’ টাকা নেন। কিন্ত এক বছর পেরিয়ে গেলেও জোটেনি জেলে তালিকায় তার নাম।

এছাড়াও ওই ওয়ার্ডের জেলে ইকবাল হোসেন অভিযোগ করেন, তার কাছ থেকেই দেড়হাজার টাকা নিয়েছিলেন ইউপি সদস্য জুলেখা বেগম। জেলে তালিকায় তার নাম আসেনি। জেলে তালিকায় নাম না থাকায় পাননি সরকারি জেলে চালের সহায়তাও।

একই ভাবে ওই ইউনিয়নের জেলে আবুল কালাম, মো. হারুন, আবু তাহের মাঝির মতো অনেক জেলেরাই ইউপি সদস্যদের হাতে ১হাজার থেকে দেড়হাজার টাকা দেয়ার পরও জেলে তালিকায় নাম আসেনি তাদের। পাননি কোন সরকারি সুবিধা।

ওই ইউনিয়নে বিপুল সংখ্যক জেলেদের কাছ থেকে বিভিন্ন অংকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা করেছেন ইউপি সদস্যরা। ইলিশ ধারার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় সরকারি কোন সুবিধা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ইউপি সদস্যদের প্রতারণার শিকার ওই ইউনিয়নের কয়েক হাজার জেলে।

এমনিভাবে চরফ্যাসন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রকৃত জেলেদের জেলে নিবন্ধনের আওয়াতায় আনার সুবিধা দেয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ৬ মাস আগে ১শ’ ৩৩ জন জেলের ভোটার আইডি কার্ড চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। সেসব জেলেদের তালিকা এখনও প্রস্তুত হয়নি।

৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুল মান্নান জানান, পুরাতন কার্ডধারীদের চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। নতুনদের তালিকায় নাম এখনও প্রনয়ণ করা হয়নি। টাকা নেয়ার বিষয়টি প্রতিপক্ষ আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে।

নারী ইউপি সদস্য জুলেখা জানান, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সঠিক নয়। জেলে নিবন্ধনের নামে কারো কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়নি।

আহাম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফখরুল ইসলাম জানান, নতুন জেলে তালিকা এখনও মৎস্য অফিসে জমা দেয়া হয়েছে। সেসব জেলেদের তালিকা এখনও চুড়ান্ত হয়নি। নিবন্ধন বঞ্চিত কোন জেলে ইউপি সদস্যদের বিরুদ্ধে আমার কাছে এমন কোন অভিযোগ করেননি। বঞ্চিত জেলেদের অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হবে।

চরফ্যাসন সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার জানান, উপজেলার পুরাতন ও নতুন মিলিয়ে সকল জেলেদের তালিকাভুক্ত করে জেলে নিবন্ধনের আওয়াতায় আনা হয়েছে এবং তালিকাভূক্ত জেলেদের মধ্যে ৪০ কেজি করে চাল বিতরণও কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পর্যায়ক্রমে তালিকাভুক্ত সকল জেলেকেই চালের সুবিধায় আনা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রুহুল আমিন জানান, ভূক্তভোগি জেলেদের লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।