ভয়ঙ্কর অস্ত্র ‘মাইক্রোওয়েভ ট্যাঙ্ক’!

‘মাইক্রোওয়েভ ট্যাঙ্ক’ তৈরির কথা ঘোষণা করল রাশিয়া। এই ‘ট্যাঙ্ক’ দিয়ে ড্রোন, যুদ্ধবিমান বা গাইডেড মিসাইলের ইলেক্ট্রনিক ব্যবস্থা অকেজো করে দিয়ে তা ব্যবহারের অনুপযোগী করে ফেলা যাবে। রাশিয়ার সরকারি মালিকানাধীন রোসটেক কর্পোরেশনের শাখা ইউনাইটেড ইনস্ট্রুমেন্ট ম্যানুফেকচারিং কর্পোরেশন বা ইউআইএমসি এই নতুন অস্ত্র তৈরি করেছে। অতি উচ্চ-কম্পাঙ্ক বা সুপার হাই-ফ্রিকোয়েন্সি (এসএইচএফ) কামান দেশের সীমান্তে মোতায়েন করা হবে।

এই ভ্রাম্যমান কামান যেখানে স্থাপন করা হবে, তার ১০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ জুড়ে কাজ করতে সক্ষম হবে। নেটওয়ার্ক এলাকায় যেকোনো দিক থেকে আগত বিমানের বিরুদ্ধে অর্থাৎ ৩৬০ ডিগ্রি জুড়ে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলবে এই ট্যাঙ্ক। এই ব্যাসার্ধের মধ্যে যে কোনও বিমান, ড্রোন বা গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র ঢুকলে তার ইলেক্ট্রনিক ব্যবস্থা অকেজো হয়ে যাবে এবং একই সঙ্গে সেটি অচলও হয়ে পড়বে।

রুশ নির্মিত টকব্যাক বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার জন্য ব্যবহৃত মিসাইলের উপর এই এসএইচএফ ট্যাঙ্ক বসানো যাবে। অবশ্য এ ট্যাঙ্ক পূর্ণ বিবরণ এখনও প্রকাশ করা হয় নি। তবে এ ধরনের ট্যাঙ্ক বিশ্বের আর কোনো দেশের কাছে নেই বলে দাবি করেছে রাশিয়া।

উত্তর কোরিয়া নিয়ে পুতিনের হুঁশিয়ারিউত্তর কোরিয়া নিয়ে পুতিনের হুঁশিয়ারি

উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে কূটনৈতিক সমাধান না হলে বিশ্ব বিপর্যয়ের হুশিয়ারি পুতিনের রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মঙ্গলবার উত্তর কোরিয়ার সাথে কূটনৈতিক সমাধান ছাড়া বিশ্ব বিপর্যয়ের ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে পুনরায় নিষেধাজ্ঞা জারি হবে অর্থহীন।
পুতিন সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এর ফলে বিশ্বে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। পুতিন একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদিতে বর্তমানে চীন সফর করছেন।

গত রোববার উত্তর কোরিয়ার হাইড্রোজেন বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোতে জাতিসংঘ নতুন করে দেশটির উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয়ার প্রেক্ষিতে রুশ নেতা এ কথা বলেন। খবর এএফপি’র।
পুতিন উত্তর কোরিয়ার রোববারের হাইড্রোজেন বোমা বিস্ফোরণের নিন্দা জ্ঞাপন করে বলেন, এটা করা হয়েছে উস্কানিমূলক উদ্দেশ্যে।

পাঁচ জাতির “ব্রিকস ক্লাবের” সম্মেলনে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের পুতিন বলেন, ‘জাতিসঙ্ঘের নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে তা হবে অকার্যকর এবং অদক্ষতার পরিচয়।’
রুশ নেতা সংকট সমাধানে সংলাপের জন্য উদ্যোগ নিতে আহবান জানিয়ে বলেন, ‘তা না হলে পরিস্থিতি খারাপ হবে, আর তাতে করে বিশ্ব বিপর্যয় নেমে আসবে এবং বহু লোক বিপদগ্রস্ত হবেন।’
আরো নিষেধাজ্ঞা!‌

বেপরোয়া হয়ে উঠেছে উত্তর কোরিয়া। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষা করেছে। তাদের জব্দ করতে তাই একবার ফের মাঠে নামছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আরও কড়া নিষেধাজ্ঞা চাপানোর প্রস্তাব আনতে চলেছে। শিগগির জাতিসঙ্ঘে তার একটি খসড়া জমা দেবে তারা। জানালেন রাষ্ট্রপুঞ্জে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি।

তিনি বলেছেন, ‘আগ্রাসন বন্ধ করতে আর্জি জানিয়েছিল আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী। কিন্তু কথা কানে তোলেনি উত্তর কোরিয়া। উল্টে হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষা করে সপাটে চড় কষিয়েছে। আসলে যুদ্ধে নামার জন্য ছটফট করছেন কিম জঙ উন। যথেষ্ট হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কখনো যুদ্ধ চায় না। এই মুহূর্তে তো একেবারেই নয়। কিন্তু আমাদের অসীম ধৈর্য্য নেই। তাই অবিলম্বে আরও কড়া নিষেধাজ্ঞা চাপানো উচিত।’‌

চলতি সপ্তাহেই তার একটি খসড়া পেশ করবেন বলে জানিয়েছেন নিকি। তারপর সোমবার ভোটাভুটির জন্য সেটি তুলবেন। তবে নিষেধাজ্ঞা চাপালেই সমস্যার সমাধান হবে বলে নিশ্চিত নন রাষ্ট্রপুঞ্জে রুশ রাষ্ট্রদূত বাসিলি নেবেনজিয়া। তার মতে, ‘‌নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। সন্ধি স্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে। আলাপ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার।’‌ রবিবার সকালে হাইড্রোজেন বোমার সফল পরীক্ষার কথা ঘোষণা করে উত্তর কোরিয়া। তদের পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করে জাতিসঙ্ঘ। তারপরই জরুরি বৈঠক ডাকা হয়। সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা চাপার প্রস্তাবে একমত জাপান এবং ফ্রান্স। জাপানের ওপর দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ায় গত মাসেই উত্তর কোরিয়ার ওপর একডজন নতুন নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছিল জাতিসঙ্ঘ।

বিশ্বের ভয়াবহতম কিছু পারমাণবিক বিস্ফোরণ
উত্তর কোরিয়ার পরীক্ষা করা বোমাটি যদি হাইড্রোজেন বোমা হয়ও, তার পরেও এখন পর্যন্ত বিশ্বে ভয়াবহ যেসব পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা হয়েছে, সেগুলোর সাথে এটির তুলনা কতটা করা যায়? এখন পর্যন্ত পৃথিবীর বুকে মানুষের সৃষ্ট সবচেয়ে বড় বিস্ফোরণ হয়েছিল ১৯৬১ সালে যখন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ‘জার বোমবা’ বা ‘বোমার রাজা’ নামে একটি পারমাণবিক বোমা পরীক্ষা করে। ওই হাইড্রোজেন বোমার শক্তি ছিল ৫০ হাজার কিলোটন।

আর্কটিক অঞ্চলে নোভায়া জেমলিয়া নামে দ্বীপপুঞ্জের যে জায়গায় ওই দানবীয় বোমাটি পরীক্ষা করা হয়েছিল, তার ৩৫ মাইলের মধ্যে সব ভবন, স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এমনকি শত শত কিলোমিটার দূরেও ভবনে ক্ষতি হয়েছিল। ফিনল্যান্ড, নরওয়ের মতো অনেক দূরের দেশেও বহু বাড়ির জানালার কাচ ভেঙে পড়েছিল। তবে বিশ্বের প্রথমবারের মতো হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্র ১৯৫২ সালে, প্রশান্ত মহাসাগরের মার্শাল দ্বীপে। সেটির শক্তি ছিল ১০ হাজার কিলোটন।
৫০ কিলোমিটার দূরে একটি জাহাজে বসে সেই পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ করেছিলেন মার্কিন পদার্থ বিজ্ঞানী হ্যারল্ড অ্যাগনিউ। তিনি পরে বলেছিলেন, ‘অত দূরে বসে যে তাপ সে দিন বোধ করেছিলাম তা জীবনেও ভুলব না। ক্রমাগত তাপ আসছিল। ভীতিকর এক অভিজ্ঞতা ছিল সেটি।’

পরীক্ষার পর ধোঁয়ার কুণ্ডুলি ৫০ কিলোমিটার উপরে উঠে গিয়েছিল, ছড়িয়ে পড়েছিল ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে শক্তিশালী পারমাণবিক পরীক্ষা ছিল ১৯৫৪ সালে ওই মার্শাল দ্বীপেরই বিকিনি অ্যাটল এলাকায়। শক্তি ছিল ১৫ হাজার কিলোটন। পরীক্ষার পর ১১ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছিল। শত শত বহু মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল, যারা আর কখনই বাড়িতে ফিরতে পারেনি।