ভয়াবহ সেই গুজরাট দাঙ্গার দুই মুখ, কেমন আছেন তারা?

গুজরাট দাঙ্গার প্রতীকি হিসাবে মনে আছে দু’‌টি মুখকে? ‌কমলা কাপড় মাথায় বেঁধে হাতে খোলা তরোয়াল নিয়ে অশোক মোচি এবং আর একটি মুখ হল কুতুবুদ্দিন আনসারি যাকে দেখা গিয়েছিল হাতজোড় করে কাঁদতে।

এই দু’‌টি চিত্রই স্পষ্ট করে দিয়েছিল ২০১২ সালে গুজরাট দাঙ্গার ভয়াবহতা। এখন কোথায়, কেমন আছেন অশোক ও কুতুবুদ্দিন?‌ কেমন ছিল তাঁদের ১৫ বছরের সফর। অশোক মোচি বর্তমানে আহমেদাবাদের টি দেশাই সরকারি স্কুল সংলগ্ন এলাকায় থাকেন। রাস্তার ধারে বসে তিনি জুতো সারাইয়ের কাজ করেন।

অনেকটাই বয়স হয়েছে অশোকের, বয়সের ভারে দুর্বলও হয়ে পড়েছেন তিনি। অশোক মোচি জানান, গুজরাট দাঙ্গার সময় ওই একটি ফটোই তার জীবনে আমূল বদল এনেছিল। অশোক বলেন, ‘গুজরাট দাঙ্গার সময়ে এমন একটা পরিস্থিতি আসে, যখন আমায় একটা পক্ষ বেছে নিতে হয়। গেরুয়া কাপড় আমার মাথায় বাঁধি এবং তরোয়াল হাতে নিই নিজের সুরক্ষার জন্য।’‌

২০১২ সালের দাঙ্গার অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে অশোক বলেন, ‘‌ওইদিন বেশ কিছু জন মুসলিমদের ওপর হামলা চালায়। আমার বাড়িও যেহেতু মুসলিম এলাকায় ছিল, তাই নিজেকে আলাদা করার জন্যই গেরুয়া কাপড় মাথায় বাঁধি।’‌

অশোক জানান, তার রাজনীতি বোঝার মতন এখনও বয়স হয়নি। দাঙ্গার পেছনে কী রাজনীতি থাকতে পারে তা এখনও অজানা অশোকের। ‘‌এখন ছবিটা দেখে খুব অনুশোচনা হয়।’‌ বলেন অশোক। গুজরাট নির্বাচন নিয়ে তিনি জানান, গুজরাটে এখন বিভেদমূলক রাজনীতি চলছে। যা গুজরাটের পক্ষে ক্ষতিকর। অন্যদিকে কুতুবুদ্দিন আনসারি, যিনি বর্তমানে পেশায় একজন দর্জি। স্ত্রী ও তিন বাচ্চা নিয়ে বেশ সুখেই জীবন কাটাচ্ছেন তিনি।

কুতুবুদ্দিন বলেন, ‘‌আবার যেন ওই পরিস্থিতির সম্মুখিন না হতে হয়। দাঙ্গার সময় নিজেকে বাঁচাতে আমি ঘরের মধ্যে বন্ধ অবস্থায় ছিলাম। আমার চোখের সামনেই খুন করা হচ্ছিল সকলকে। দাঙ্গার দু’‌দিন পর আমি পুলিস ভ্যান দেখি এবং সেটা দাঁড় করাই। সেই পুলিস ভ্যানে সংবাদমাধ্যমেরও কিছুজন ছিলেন। আমি পুলিসের কাছে হাতজোড় করে নিজের ও নিজের পরিবারকে বাঁচানোর আর্জি জানাই। সেই সময় আমার ছবি তোলা হয়।’‌

তবে কুতুবুদ্দিন কোনও রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে রাজি নন। নিজের কাজ এবং পরিবার এখন এটাই কুতুবুদ্দিনের প্রধান লক্ষ্য। তবে অশোক ও কুতুবুদ্দিন দু’‌জনেই এখন গুজরাটে শান্তি চান। প্রত্যেক সপ্তাহেই দু’‌জনে দেখা করেন এবং একঘণ্টা গল্প করেন। আলোচনা করেন কীভাবে সমাজ ক্রমশ সাম্প্রদায়িকভাবে বিভাজন হয়ে যাচ্ছে।