মঠবাড়িয়ায় ধর্ষণ মামলার আসামী এখন মাদ্রাসার সভাপতি
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার মধ্য দেবত্র এন এস দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি ইলিয়াস খানের বিরুদ্ধে একাধিক নারী কেলেঙ্কারিসহ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ইলিয়াস খান মঠবাড়িয়া উপজেলার দাউদখালী ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড দেবত্র গ্রামের মৃত হাবিবুল ইসলামের পুত্র।
জানা গেছে, ২০২০ সালে মধ্য দেবত্র এন এস দাখিল মাদ্রাসায় নবসৃষ্ট পদে একজন করে সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম কম্পিউটার, নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া আবশ্যক হয়।বিষয়টি অবগত হয়ে নিয়োগ বানিজ্যের একটি চক্র তাদের পছন্দের লোককে সভাপতি বানাতে সক্রিয় হয়ে ওঠে। অবশেষে ওই দুষ্ট চক্রটি আধিপত্য ও প্রভাব খাটিয়ে স্হানীয় ধর্ষণ মামলার আসামী ইলিয়াস খানকে সভাপতির চেয়ারে বসায়।
ইলিয়াস খান ২০২০ সালের ৩০ জুন সিলেকশনে সভাপতি হয়ে ওই তিনটি পদে নিয়োগের জন্য ম্যানেজিং কমিটির মিটিং ডেকে রেজুলেশন করেন।২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। এরপর একাই একশ হয়ে যান সভাপতি।
পছন্দের প্রার্থীর আবেদন নিয়ে তাকে তার পরিচিত ও আত্মীয় স্বজনের মধ্য থেকে আরও তিনটি আবেদন গোপনে জমা দিতে বলেন। এরপর সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে নিয়োগ বোর্ড গঠনের অনুমোদন পেয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলাম ভুঁইয়ার যোগসাজশে অতিগোপনে ও সুকৌশলে ওই তিনটি পদে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ সম্পন্ন করেন। মঠবাড়িয়া উপজেলার বাইরে অন্য কোন একটি উপজেলায় ডিজির প্রতিনিধিকে ঢাকা থেকে তড়িঘড়ি করে হেলিকপ্টারযোগে নিয়োগ বোর্ডে আনা হয়।
নিয়োগপ্রাপ্ত তিনজনই ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার।নিয়োগের ৬ মাস পর বিষয়টি জানাজানি হলে মাদ্রাসাটির দাতা সদস্য ও অভিভাবক সদস্যরা নড়েচড়ে বসে। শুরু হয় গোপন নিয়োগ ও নিয়োগ বানিজ্যের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ ও মানববন্ধন।
নিয়োগ বানিজ্যের মূল হোতা মাদ্রাসার সভাপতি ইলিয়াস খানের কল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। কল রেকর্ডে নিয়োগ বানিজ্য ও একাধিক নারীকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ চেষ্টাও প্রকাশ পেয়েছে।
মাদ্রাসার সভাপতি ইলিয়াস খানের বিরুদ্ধে মঠবাড়িয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। দেবত্র এলাকার রাবেয়া নামে এক নারী ধর্ষণের শিকার হয়ে ১১/০৬/২০২০ খ্রি. তারিখ মামলাটি দায়ের করেন। ধর্ষণের ঘটনার ১৯ দিন পরেই ধর্ষণ মামলার একমাত্র আসামী ইলিয়াস খান মাদ্রাসার সভাপতি সিলেকশন হন।
এ ব্যাপারে মাদ্রাসার সভাপতি ইলিয়াস খান বলেন, নিয়োগে কোন অনিয়ম হয়নি।সরকারী বিধি মোতাবেক নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা ধর্ষণ মামলাটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক।
নিয়োগ প্রক্রিয়া গোপনে কোথায় বসে সম্পন্ন করা হয়েছে তা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন মাদ্রাসার সুপার মাওঃ মোঃ এনামুল হক। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই। আমি একজন ভারপ্রাপ্ত সুপার। আমার সাথে কথা বললে আগে অনুমতি নিতে হবে।
এ ব্যাপারে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিদর্শক (বরিশাল বিভাগ) শহীদ লতীফ জানান, নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর ওই নিয়োগ ম্যানেজিং কমিটির মিটিংয়ে অনুমোদন হতে হবে।ম্যানেজিং কমিটির মিটিংয়ে অনুমোদন না হলে নিয়োগ অবৈধ বলে গন্য হবে।গোপনে নিয়োগ দেওয়ার কোন সুযোগ নেই।অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা নিবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন