মন্ত্রীর আশ্বাসেও কমছে না মসলার দাম, সবজিও চড়া
রাজধানীর বাজারে হঠাৎ মসলাজাতীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্যমন্ত্রীর আশ্বাস ছিলো ১৫ দিনের মধ্যেই বাজার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। মন্ত্রীর আশ্বাসের একদিন পরই অনেক পণ্যের দাম কমলেও এক সপ্তাহ না যেতেই আবারও হ-য-ব-র-ল অবস্থা। ফের চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে পিঁয়াজসহ অন্যান্য মসলা। স্বস্তি আসেনি সবজিতেও।
তবে দাম কমেছে সব ধরনের মাংসের। অপরিবর্তিত রয়েছে চাল, ডাল ও তেলের দাম। মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র উঠে এসেছে।
এর আগে গত ১৬ জুলাই সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে অধিবেশন শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কিছু কারণ ছিল। কোথাও কোথাও বৃষ্টি হয়েছে। এতে ভারত থেকে আমদানিকৃত পিঁয়াজ কিছুটা নষ্ট হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে বাজারে। তবে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পিঁয়াজ, আদা, রসুনের দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ভোক্তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা ও বাজারে যাতে কোনো ধরনের ফরমালিনযুক্ত খাবার বা ভেজাল খাবার না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে বলা হয়েছে।
মন্ত্রীর এ আশ্বাসের পরদিন থেকেই পিঁয়াজের দাম কমে কেজিপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। এর এক সপ্তাহ না যেতেই আবারও বেড়ে যায় পিঁয়াজের দাম। এখন খুচরা বাজারে প্রতিকেজি পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। অন্যদিকে ভারতীয় পিঁয়াজ প্রতিকেজি বিক্রি করতে দেখা যায় ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে। রাজধানীতে এখনও কাঁচা মরিচ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়।
ঈদুল আজহা আসতে তিন সপ্তাহ বাকি থাকলেও চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে আদা, রসুন, গোল মরিচ, হলুদ, মরিচ গুড়া, জয়ত্রী, এলাচ, দারুচিনি। কারওয়ান বাজার, কাঁঠাল বাগান কাঁচাবাজার, হাতিরপুল কাঁচাবাজারে প্রতিকেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে ২৭০০ থেকে ২৮০০ টাকা কেজি দরে, জয়ত্রী বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ থেকে ২৬০০ টাকায়, লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকায়, গোল মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকায়, জিরা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, দারুচিনি ৪৫০ টাকায়। খোলা হলুদ ও মরিচ ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। অন্যদিকে দেশি রসুন ১৭০ টাকা, ভারতীয় ১৯০ টাকা, আদা ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
কারওয়ান বাজারের খুচরা মসলা বিক্রেতা হাসিবুল ইসলাম বলেন, গত এক মাস ধরেই মসলার পাইকারি বাজারে বাড়তি দাম। পাইকারি বাজারে বাড়তি দাম হওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে খুচরাতে। তবে অন্য বছরের তুলনায় বর্তমানে মসলার বাজার বেশ ভালো অবস্থানে আছে বলে মন্তব্য করেন হাসিবুল।
শান্তিনগর, মতিঝিল টিঅ্যান্ডটি কাঁচাবাজার, সেগুন বাগিচা, মালিবাগ কাঁচাবাজারে প্রতিকেজি পটল বিক্রি করতে দেখা গেছে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা, ঝিঙা ৫০ থেকে ৭০ টাকা, উস্তা ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকা, করলা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ১২০ টাকা, ঢেঁড়শ ৪৫ থেকে টাকা ৫০ টাকা, শসা ৭০ থেকে ১১০ টাকা, কচুর ছড়া ৬০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৫০ টাকা, টমেটো ১০০ থেকে ১৪০ টাকা, গাজর ৯০ থেকে ১২০ টাকা, বাঁধাকপি ও ফুলকপি প্রতি পিস ৪৫ থেকে ৬০ টাকা, কলা ২৫ থেকে ৪০ টাকা হালি, লাউ প্রতি পিস ৫০ থেকে ৮০ টাকা, জালি কুমড়া প্রতি পিস ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এসব বাজারে প্রতি আঁটি লাল শাক ১০ থেকে ১৫ টাকা, মুলা ১৫ থেকে ২০ টাকা, লাউ শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কুমড়ার শাক ২৫ থেকে ৩৫ টাকা, পুঁই শাক ২০ থেকে ৩০ টাকা, কলমি শাক ৭ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।
মোশাররফ হোসেন নামে শান্তিনগর বাজারের সবজি বিক্রেতা বলেন, এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বন্যা হওয়ায় পাইকারি বাজারে মালামালের সরবরাহ কম। মাল সরবরাহ কম থাকায় সেখানে বাড়তি দাম দিয়েই আমাদের তা সংগ্রহ করতে হচ্ছে। তাছাড়া এখন শীতকাল না হওয়ায় সব পণ্যের কিছুটা বাড়তি দাম আছে। তাই আমাদের বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে তার মতে, পাইকারি ও খুচরা বাজারের ব্যবধান খুব বেশি না।
যদিও ক্রেতারা বলছেন, কোরবানিকে পুঁজি করে অসাধু ব্যবসায়ী প্রতিবছরই এসময় সব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। এ সময় সবচেয়ে বেশি বাড়ানো হয় মসলার দাম।
রেনু ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের এক দিন পর বাজারের পরিস্থিতি বেশ ভালো ছিলো, তবে আবারও বাড়তি দাম সব পণ্যের। গত ১৫ দিন আগে এলাচ কিনেছি দাম অনেক কম ছিলো, এখন চার থেকে পাঁচশ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে কেজিতে। তাছাড়া পিঁয়াজ, রসুন, আদার দামও সাধ্যের মধ্যে নেই। তার মতে, শুধু মন্ত্রীর আশ্বাসে কাজ হবে না, নিয়মিত বাজার তদারকি করলেই নিত্যপণ্যের দাম সাধ্যের মধ্যে আনা সম্ভব।
উত্তরাঞ্চলে বন্যার কারণে পশুর দাম কমায় এর প্রভাব পড়েছে মাংসের বাজারে। এসব বাজার কেজিপ্রতি ৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে কমেছে গরু ও খাসির মাংস। গরুর মাংস এর আগে ৬০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ৫২০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। একই দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে মহিষের মাংস। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজি দরে। দেশি মুরগি ৫০০ গ্রাম ওজনের প্রতি পিস ২৩০ টাকা, সোনালি মুরগি ৫০০ গ্রাম প্রতি হালি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, বয়লার ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
অপরিবর্তিত রয়েছে চাল, ডাল ও ভোজ্যতেলের দাম। তবে চিনির দাম কিছুটা বেড়েছে। কেজিপ্রতি ৫ টাকা বেড়ে এখন চিনি বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন