ময়মনসিংহের ভালুকা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদের বহিস্কার চায় অধিকাংশ নেতা

বিগত ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় একজন দৈনিক হাজিরার দিনমজুর থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম শহিদ ওরফে বাউন্ডারী শহিদের বহিস্কার দাবিতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা। গতকাল মঙ্গলবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দপ্তরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর এ লিখিত অভিযোগ দিয়েছে উপজেলা বিএনপি।

অভিযোগে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম শহিদের বহিস্কার দাবি করা হয়। শহিদকে বিএনপির নামধারী ভাবমুর্তি বিনষ্টকারী মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ভয়ংকর ভূমি দস্যু, ঝুট সন্ত্রাসী, জমি জবর দখলকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, শহিদ আগে দৈনিক ৫ কেজি চাউলের বিনিময়ে বনকর্মী হিসেবে নিজের জীবন ও সংসার চালাতো।

কিন্তু বিগত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলে আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতা, এমপির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে রাতারাতি নিজের আখের গুছিয়ে ফেলে। আওয়ামীলীগের নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে বন বিভাগের সম্পত্তি অবৈধভাবে দখলে নিয়ে বিভিন্ন শিল্পপতিদের কাছে বিক্রি কওে সেই জমিতে দ্রুত বাউন্ডারী কওে দখল নিয়ে দেয়।

এই কারনেই স্থানীয়ভাবে তার নাম ‘বাউন্ডারী শহিদ’ হিসেবে পরিচিতি পায়। এছাড়াও, আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আঁতাত করে দীর্ঘ ১৬ বছর যাবত প্রায় ৫০-৬০টি কল কারখানায় একক বাহিনীর মাধ্যমে ঝুট ব্যবসার পরিচালনা করে আসছে।
আবেদনে বলা হয়, বিগত হাসিনাসরকারের আমলে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে যেখানে শত শত মামলা হয়েছে, জেল-জুলুম সইতে হয়েছে; সেখানে ভালুকা উপজেলা বিএনপির এই যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদের নামে কোনো মামলাতো দূরের কথা একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) পর্যন্ত নেই।

যেখানে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে নিজের ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে থাকতে হয়েছে, সেখানে বাউন্ডারী শহিদের অবাদ বিচরণ ছিল ভালুকা থানায়। পতিত সরকারের মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, নসরুল হামিদ দিপু, শিল্পপতি সালাম মুর্শেদি প্রভাব বলয়ে শোষণ নির্যাতনের মাধ্যমে ভালুকায় নামে বেনামে শত শত একর জমি দখল করে নিয়ে গড়ে তোলে বনের জমিতে গ্রীণ অরণ্য রিসোর্ট এন্ড পার্ক। পার্কটি ছিলো মূলত সাবেক মন্ত্রী আমলা প্রভাবশালী আওয়ামীলীগের প্রমোদ বালাখানা।

এতে বলা হয়, বিশিষ্ট শিল্পপতি গিয়াস উদ্দিন আল মামুন কারাবন্দী থাকাকালে তার প্রতিষ্ঠিত পিসিআইএলের মালামাল লুট নেয় বাউন্ডারী শহিদের নেতৃত্বে যুবলীগ নেতা আমান উল্লাহ খান মাখন, যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক এজাদুল হক পারুল, উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি জাকির হোসেন শিবলী, আওয়ামীলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ খান, যুবলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক তসলিম খান, স্বেচ্ছাসেবকলীগ সাধারণ সম্পাদক কেবিএম সানা, যুবদল সভাপতি আবু সায়েদ জুয়েল, যুবলীগ সভাপতি হানিফ মাহম্মুদ নিপুন, ইউপি চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা তোফায়েল আহম্মেদ বাচ্চুসহ আরো অনেকে। পরবর্তীতে এসব ব্যক্তি যোগসাজশে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের কোম্পানীটি ব্যাংকের মাধ্যমে অবৈধভাবে নিলামে নিয়ে নেয়।

আরও অভিযোগ করা হয়, সদ্য ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ভালুকা থানার জামিরদিয়া কালার মাস্টার ফ্যাক্টরীর সামনে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী গার্মেন্টস কর্মীদের উপর সশস্ত্র হামলা চালায়, উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী রফিক, ইউপি চেয়ারম্যান তোফায়েল আহম্মেদ বাচ্চু, যুবলীগ নেতা হানিফ মাহমুদ নিপুনের নেতৃত্বে। ওই হামলায় দুইজন গার্মেন্টস কর্মী ঘঠনাস্থলেই নিহত হয়। পরবর্তীতে গাজীপুর জেলাধীন শ্রীপুর থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তোফাজ্জল হোসেন (২২) নামে আরও একজন মারা যান। আন্দোলনে নিহতদের কোন রকমের ময়না তদন্ত ছাড়াই বাউন্ডারী শহিদ মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে লাশ দাফন করে এবং সন্ত্রাসীদের রক্ষা করে, যা সুষ্ঠু তদন্ত করলেই প্রমাণিত হবে।
হবে।

এতে বিগত ভোটার বিহীন অবৈধ সরকারের বিএনপি বর্জনকৃত স্থানীয় নির্বাচন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণায় শহিদের স্বশরীরে অংশগ্রহণ ও নির্বাচনে সহায়তা করার বিভিন্ন স্থিরচিত্র এবং ভিডিও চিত্র সংযুক্ত করা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, বাউন্ডারী শহিদের ঢাকার উত্তরায় বিলাস বহুল ২টি বহুতল ভবন, ভালুকায় ৪/৫টি বিলাসবহুল বাড়ি, সুপ্তি সুয়েটার কারখানা, সুপ্তি প্যাকেজিং ও কার্টুন, সুপ্তি ওয়েল মিল, গ্রীণ অরণ্য পার্ক এন্ড রিসোর্ট, হবির বাড়িতে ভালুকা উপজেলা বন কর্মকর্তার কার্যালয়ের পাশে বন বিভাগের জায়গায় বিলাস বহুল একটি বাড়ি আছে। বাউন্ডারী শহিদ ও তাহার ছেলে মুস্তাফিজুর রহমান মামুনের ব্যবহৃত ২টি গাড়ির আনুমানিক মূল্য ৫ কোটি টাকার উপরে।

আবেদনে বলা হয়, আমরা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে উদ্ভুদ্ধ হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে স্বৈরাচারী এরশাদ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জননেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে নব্য স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলনে রাজপথে থাকা নেতা কর্মীবৃন্দ আপনার নিকট আকুল আবেদন জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, আদর্শ ও দল রক্ষার স্বার্থে ভালুকা বিএনপির সুনাম ক্ষুন্নকারী মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা বাউন্ডারী শহিদ ও তাহার ছেলে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মোস্তাফিজুর রহমান মামুনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও আইনী বিচারের জোর দাবী জানাচ্ছি। তাছাড়া, আপনি (ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) বলেছেন দলের ভাবমুক্তি বিনষ্টকারী দুষ্কৃতি কারীদের কোন স্থান বিএনপিতে নাই।

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর এ আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন, মজিবুর রহমান মজু, যুগ্ম আহ্বায়ক ভালুকা উপজেলা বিএনপি, আহসান উল্যাহ খান রুবেল, যুগ্ম আহ্বায়ক পৌর বিএনপি, সাখাওয়াত হোসেন পাঠান, যুগ্ম আহ্বায়ক উপজেলা বিএনপি, রকিবুল হাসান রাসেল, সাধারণ সম্পাদক উপজেলা যুবদল, আসাদুল্লা চৌধুরী দ্রুব, আহ্বায়ক উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল, তারিকুল ইসলাম তারা আহ্বায়ক উপজেলা কৃষক দল, মেজবা উদ্দিন মাসুদ সদস্য সচিব উপজেলা কৃষকদল, মফিজুল ইসলাম আহ্বায়ক উপজেলা মৎসজীবী দলসহ বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলের মোট ২৭জন নেতা।

অভিযোগের বিষয়ে শহিদুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, ভালুকা উপজেলা বিএনপিতে দুইটি গ্রুপের রাজনীতি চলে। কয়েকদিন আগে নিজের বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে ফখরুদ্দিন আহমেদ বাচ্চু দল থেকে বহিস্কার হয়েছেন। আমি তার প্রতিদ্বন্দ্বি গ্রুপ মোর্শেদ আলমের গ্রুপ করি। এই গ্রুপিংয়ের কারণে বাচ্চুর গ্রুপের লোকজন আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে, যার কোনো ভিত্তি নেই।

বিগত সরকারের আমলে আমার নামেও বিভিন্ন অভিযোগে ৩৫টির মতো মামলা ছিল, যার কিছু রাজনৈতিক কিছু সম্পত্তি সম্পর্কিত স্বীকার করে তিনি বলেন, তবে এটা ঠিক শেষের দিকে এসে আমার নামে কোনো মামলা হয় নাই। আর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আমি আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আন্দোলনের বিরুদ্ধে কাজ করেছি বলে তারা যে অভিযোগ করেছে, তার কোনো প্রমাণ, ভিডিও থাকলে তারা দেখাক। যেকেউ তো আপনার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিতে পারে, পারে না; প্রশ্ন করে শহিদ বলেন, অভিযোগ দিলেই কি আপনি দোষী হয়ে যাইবেন?