ময়মনসিংহে আন্তর্জাতিক শব্দদূষণ দিবস উদযাপিত

“শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্ব মূলক প্রকল্প’ এর আওতায় ময়মনসিংহে আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার (২৪ এপ্রিল) ময়মনসিংহ পরিবেশ অধিদপ্তর এর আয়োজনে জেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাছুম আহাম্মদ ভূঞা বিপিএম, পিপিএম, পুলিশ সুপার, ময়মনসিংহ।

এ সময় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় ময়মনসিংহ পরিবেশ অধিদপ্তর এর পরিচালক দিলরুবা আহমেদ বলেন,শব্দ দূষণকে বলা হয় নীরব ঘাতক।যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্রমশে হুমকিস্বরূপ হয়ে উঠছে। শব্দদূষণ মূলত একটি আপেক্ষিক বিষয়। শব্দস্তরের গ্রহণযোগ্য পরিমাণ প্রায় ৪০ থেকে ৬৫ ডেসিবেল, একটি সাধারণ কথোপকথনের সমান।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ৮৫ ডেসিবেলের বেশি শব্দের মাত্রা কারো কারো শ্রবণশক্তি কমে যাওয়ার কারণ হতে পারে।টেক্সটাইল মিল, যানজটের কারণে বেশি মাত্রা হরণের ব্যবহার, নির্মাণ কাজ, ভারী ধরনের যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ব্যবহার, মাইকের শব্দ,মিউজিকের শব্দ, পটকা ও আতশবাজির শব্দ শব্দদূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।তিনি আরো বলেন, শব্দ দূষণের প্রতিরোধ যদি আমরা এখনি না করতে পারি তাহলে ভবিষ্যতে এর ভয়াবহতা আমাদেরই ভোগ করতে হবে।

শব্দ দূষণ এখন শব্দ সন্ত্রাসে পরিণত হয়েছে।তাই শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবহন সেক্টরের শব্দ নিয়ন্ত্রণ, হাইড্রোলিক হর্ন পরিহার, নগর পরিকল্পনা-ট্রেনিং কোড এর ব্যবহার, শব্দহ্রাসকারী স্থাপত্য নকশা বাস্তবায়নের জন্য নির্দিষ্ট সংস্থার ব্যবস্থা নিতে হবে। বাংলাদেশ শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০০৬ অনুসারে,শব্দ দূষণ একটি দণ্ডনীয় অপরাধ।

প্রথমবার অপরাধের জন্য অনধিক এক মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ৬০০০ টাকা অর্থদণ্ড বা উভদন্ড।আর পরবর্তী অপরাধের জন্য অনধিক ৬ মাস কারাদণ্ড বা অনঅধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড হতে পারে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ময়মনসিংহ একটি সাংস্কৃতিক নগরী, এই নগরীর পরিবেশ রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদেরই। তাই আমাদের নিজেদের জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে সম্মিলিত ভাবে আমাদের শব্দদূষণ প্রতিরোধ করতে হবে।শব্দ দূষণ কারণে দুশ্চিন্তা, উগ্রতা ,উচ্চ রক্তচাপ, শ্রবণ শক্তিরাশ ,ঘুমের ব্যাঘাতসহ অন্যান্য ক্ষতিকর ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটে।

যা আমাদের মানব দেহের নীরব ঘাতক বলে পরিচিত।
তিনি আরো বলেন, আগামী প্রজন্ম যাতে শব্দ দূষণ ও পরিবেশ দূষণ ব্যাপারে আগে থেকেই আরো সোচ্চার হতে পারে,সেই জন্য স্কুল -কলেজে শব্দদূষণ ও পরিবেশ দূষণের মতো বিষয়গুলো নিয়ে সচেতনতামূলক বাস্তব ধারণা ও পাঠ্যপুস্তকে ব্যাপকভাবে জানাতে হবে।সভাপতির বক্তব্যে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে আমরা যদি ব্যর্থ হই, অবশ্যই পরিবেশের বিরূপ আচরণের সম্মুখীন আমাদের হতে হবে।

তাই নিজেদের স্বার্থে ও পরিবেশের স্বার্থে আমাদের এখনই সচেতন হতে হবে।স্ব স্ব জায়গা থেকে আমাদের শব্দ দূষণ ও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য কাজ করতে হবে। যদিও আমরা শব্দ দূষণের প্রভাব বুঝতে পারি না। শব্দ দূষণের প্রভাবরোধে আমরা নিজে সচেতন হই এবং অন্যদেরকেও সচেতন করি।আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে সকল অতিথি এবং বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, জনসাধারণ,প্রিন্ট‌ মিডিয়া ও গণমাধ্যম কর্মীর উপস্থিতিতে এ দিবস উপলক্ষে বিভাগীয় কর্যালয়ের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।