ময়মনসিংহে আসামি খুঁজে না পাওয়ায় মামলার বাদী সহ আহত তিনজন গ্রেফতার

বাড়ির পাশে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে তর্কাতর্কি ও সংঘর্ষ হয়। এই ঘটনায় এক পক্ষ প্রতিপক্ষের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ১০ জনকে কুপিয়ে আহত করে। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এরমধ্যে গুরুতর আহত ৪ জনকে পাঠানো হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

এই ঘটনায় থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়েরের পর কোন আসামিকে গ্রেফতার করতে পারে নি পুলিশ। কিন্ত ঘটনার ৭ দিন পর আসামিরা পাল্টা মামলা করে, রাতেই বাদী সহ ৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এমন ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিহের গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের খাজান্দর গ্রামে। এ নিয়ে এলাকায় আলোচনা সমালোচনা ছাড়াও উত্তেজনা বিরাজ করছে। শনিবার দুপুরে গ্রেফতারকৃতদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।

আসামীদের করা মামলায় গ্রেফতারকৃতরা হলেন- উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের খাজান্দর গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে হাবিবুল ইসলাম (৫২), তাইজুল ইসলাম (৪৫), রুবেল মিয়া (৩২)।

স্থানীয় ও মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত ৮ জুন বোকাইনগর ইউনিয়নের খাজান্দার একটি ফুটবল খেলা নিয়ে রুবেল মিয়ার পরিবারের সদস্যদের সাথে বিরোধ হয় প্রতিবেশী মকবুল হোসেনের পরিবারের সদস্যদের সাথে। ওই বিরোধকে কেন্দ্র করে দ্ইু পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ ও মারামারির ঘটনা ঘটে।

এ সময় মকবুল হোসেনের লোকজনের হামলায় রুবেলের বাড়ির নারী পুরুষসহ কমপক্ষে ১০জনতে কুপিয়ে ও লাঠির আঘাতে গুরুতর আহত করে। আহতদের মধ্যে হেলেনা বেগম(৪৫),তাইজুল ইসলাম(৬০),রানা (২০) ও লিপি আক্তার(৪০) কে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এই ঘটনায় গত ১৪ জুন রুবেল মিয়া বাদী হয়ে গৌরীপুর থানায় নাম উল্লেখ ৫জন ও অজ্ঞাত ৫জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলার পর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসে আসামিরা। এ ঘটনা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জানালেও পুলিশ কোন আসামি ধরতে পারেনি।

এমনাবস্থায় ঘটনার ৭ দিন পর ২০ জুন শুক্রবার রাতে আসামি পক্ষের মকবুল হোসেন বাদী হয়ে প্রতিপক্ষের নাম উল্লেখ ১০ জন ও অজ্ঞাত ৪ জনকে আসামি করে গৌরীপুর থানায় মামলা করে। আর এই মামলায় রাতেই পুলিশ গুরুতর অসুস্থ মাথায় ১২সেলাইসহ তাইজুল ইসলাম (৪৫), হাবিবুল(৫২) ও ও মামলার বাদী রুবেল মিয়া (৩২) কে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আহত তাইজুল ইসলামের মেয়ে এনামনি জানান, ঘটনার দিন আসামি পক্ষের লোকজন আমাকে চুলের মুঠি ধরে মারধর করে। আমাদের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের হলেও কোন আসামি গ্রেফতার হয়নি। উপরুন্ত সাতদিন পর আসামিদের মিথ্যা মামলায় গুরুতর আহত আমার বাবা ও দুই চাচাকে গভীর রাতে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ।

আগামী ২৬ জুন আমার এইচএসসি পরীক্ষা। আসামিদের হুমকি-ধামকিতে পরীক্ষার প্রস্ততি নিতে পারছি না, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। অনুনয়-বিনয় করে অসুস্থ বাবাকে ছাড়তে বললেও টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়।
এনামনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, এটা কি ধরনের আইন? মাইর খাইলাম আমরা আর আসামীদের মামলায় আমাদেরকেই ধরে নিয়ে আসা হলো।

এদিকে মকবুল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

জানতে চাইলে প্রথম মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (এসআই) আসাদুজ্জামান বলেন, ঘটনার পর আমি আসামি ধরতে একাধিক অভিযান পরিচালনা করেছি। কিন্ত আসামি ধরতে পারি নি। আসামীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কাউন্টার (দ্বিতীয়) মামলার আসামি আমি গ্রেফতার করিনি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গ্রেফতার করেছে।

অপর দিকে দ্বিতীয় পাল্টা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিমকে ফোন দিলে বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দিদারুল ইসলাম বলেন, ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষই পাল্টাপাল্টি মামলা করেছে। দুটো মামলাই পুলিশ গুরুত্বের সাথে তদন্ত করছে।

প্রথম মামলার আসামিরা পলাতক থাকায় পুলিশ আসামি ধরতে পারে নি। কিন্ত আসামি ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দ্বিতীয় মামলার আসামিদের গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।