মসজিদ নির্মাণে অনুমতি না দেয়ার জরিমানা ২৬ কোটি
যুক্তরাষ্ট্র বিচার বিভাগের মধ্যস্থতায় অবশেষে নিউ জার্সির বার্নার্ডস টাউনশীপে মসজিদ নির্মাণের অনুমতি মিললো। একইসাথে অনুমতি প্রদানে গড়িমসির খেসারত হিসেবে বার্নার্ডস টাউনশীপকে ৩.২৫ মিলিয়ন ডলার জরিমানা গুণতে হবে। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৬ কোটি টাকা।
মসজিদ নির্মাণের ব্যয় মেটানো এবং মামলা-পরিচালনার ব্যয় সমন্বয়ের জন্যে এই জরিমানা করা হয়। পবিত্র রমজান মাসের চতুর্থ রমজানের দিন মঙ্গলবার আমেরিকান মুসলমানদের জন্যে ‘ঐতিহাসিক’ এ সমঝোতা সম্পন্ন হয়।
নগদ অর্থ প্রদানের পাশাপাশি টাউনশীপকে ১৮০ দিনের মধ্যে জোনিং বোর্ডের সকল কর্মকর্তাকে ট্রেনিং দিতে হবে মুসলমানসহ সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অনুভূতি সম্পর্কে। ভবিষ্যতে অন্য কোন ধর্মের অধিবাসী যাতে এমন বিমাতাসুলভ আচরণের শিকার না হন এবং সকলেই যাতে নিজ নিজ ধর্ম-কর্ম অবাধে চালাতে পারেন-সে ব্যাপারে এলাকার অধিবাসীদেরকেও সজাগ করতে হবে।
প্রসঙ্গত: ইসলামিক সোসাইটি অব বাসকিন রীজ তাদের ক্রয়কৃত স্থানে মসজিদ নির্মাণের জন্যে জোনিং বোর্ডে আবেদনের পর গত চার বছরে ৩৯ বার শুনানি হয়। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে আবেদনটি নাকচ করে জোনিং বোর্ড। এরপরই আবেদনকারীরা ফেডারেল কোর্টে মামলা করেন। এ মামলার শুনানির সময়ে বিচার বিভাগ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। আবেদনকারীগণের পক্ষাবলম্বন করে জোনিং বোর্ডের সাথে সমঝোতার উদ্যোগও নেয়া হয়।
সমঝোতা অনুযায়ী পরিকল্পিত নকশায় মসজিদ নির্মিত হলেও আশপাশে গাড়ি রাখার জন্যে পার্কের সংখ্যা ১০৭ থেকে কমিয়ে মাত্র ৫০টি করা হয়েছে। এছাড়া ভবনে মুসল্লী ধারণের ক্ষমতাও হ্রাস করে ১৫০ জন করতে হবে অর্থাৎ ভবনের আয়তন ছোট করতে হবে। মসজিদে খুৎবা প্রদানের সময় বাইরে কোন মাইক লাগানো যাবে না। এমনকি আজানের ধ্বনিও মসজিদ ভবনের বাইরে প্রচারের কোন সুযোগ থাকবে না। মসজিদের যে দুটি মিনার নির্মাণ করা হবে, সেগুলোতে মাইক লাগানো চলবে না। শুধু ভবনের শোভা বর্দ্ধনে কাজ করবে মিনার দুটি।
বিচার বিভাগের সমঝোতাকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রস্তাবিত মসজিদ কমিটির প্রেসিডেন্ট আলী চৌধুরী। তিনি এই টাউনশীপের নির্বাচিত মেয়র ছিলেন। তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা খুবই খুশি। আশা করছি খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই মসজিদ ভবনের নির্মাণ শুরু করতে পারবো। আমাদের এই মসজিদে এলাকার সকল ধর্মপ্রাণ মানুষের উপাসনার ক্ষেত্র অবারিত থাকবে। সকলকে আরও দেখিয়ে দিতে চাই যে, ইসলাম হচ্ছে শান্তি আর সম্প্রীতির ধর্ম। ইসলাম অন্য ধর্মের প্রতি বিদ্বেষপোষণ করে না।
সমঝোতা অনুযায়ী দেড় মিলিয়ন ডলার পাবে মসজিদ কমিটির ক্ষতিপূরণ বাবদ এবং অবশিষ্ট ১.৭৫ মিলিয়ন ডলার পাবে মামলা পরিচালনাকারী ল’ ফার্ম প্যাটারসন, ওয়েব এ্যান্ড টাইলার। ফার্মটি সে অর্থ ব্যয় করবে এলাকার ধর্মপ্রাণ মানুষদের সেবামূলক প্রকল্পে।
ফার্মটির প্রধান আইনজীবী আদীল এ মাঙ্গি বলেছেন, সারা আমেরিকার নগর প্রশাসনের বোধোদয় ঘটা উচিত যে, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানেই সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উপাসনার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। সে অনুযায়ী যে কোন স্থানে মসজিদ স্থাপনের অনুমতি পেতে আমেরিকান মুসমানদেরও অধিকার সুসংসহত করা হয়েছে।
কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স তথা কেয়ারের নিউ জার্সি চ্যাপ্টারের নির্বাহী পরিচালক জিম সুয়েজ বলেছেন, জোনিং ইস্যুকে সামনে এনে মসজিদ নির্মাণের অনুমতি প্রদানে যারা গড়িমসি করছে, সে সব সিটির জন্যে এটি একটি অনুকরণীয় বিষয় হয়ে থাকবে। ধর্মীয় কারণে কারও সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করা চলবে না।
প্রসঙ্গত: এই সিটির নিকটবর্তী বিয়োন টাউনশীপের মুসলিম সম্প্রদায়ও গত সপ্তাহে ফেডারেল কোর্টে মামলা করেছেন জোনিং বোর্ডের বিমাতাসুলভ আচরণের প্রতিবাদে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন