মহানবী (সা.) যেসব সুগন্ধির ব্যবহার করতেন
সুগন্ধির সৌরভে মানুষকে সতেজতা অনুভব করতে শেখায়। সুগন্ধি মনকে প্রফুল্ল করে তোলে। অনেকে আবার একে রুহের খোরাকও বলে থাকে। নবীজি (সা.)-এর সুন্নতও বটে এটি। সুগন্ধির প্রতি প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রচণ্ড অনুরাগ ছিল। মহানবী (সা.) নিজেও ছিলেন সুগন্ধির আকর (আধার)।
শুধু নবীজিই নন সুগন্ধি সব নবীদের অন্যতম সুন্নতও ছিল। হাদিস শরিফে ইরশাদ আছে, আবু আইয়ুব আল-আনসারি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘চারটি জিনিস নবীদের চিরাচরিত সুন্নত—লজ্জা-শরম, সুগন্ধি ব্যবহার, মিসওয়াক করা এবং বিয়ে করা।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১০৮০)
আমাদের নবীজি (সা.)-ও প্রচুর সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। তিনি রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে সুগন্ধির ঝরনা বয়ে যেত। তখন সবাই বুঝতে পারত, নবীজি (সা.) এ রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেছেন। সুগন্ধিপ্রিয়তা নবী-রাসুলদের আদর্শ। আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘চারটি বস্তু সব নবীর সুন্নত, আতর, বিয়ে, মিসওয়াক ও লজ্জাস্থান ঢেকে রাখা।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২২৪৭৮)
সুগন্ধি বা আতর নবীজি (সা.) এত বেশি পছন্দ করতেন যে কেউ তাকে সুগন্ধি/আতর উপহার দিতে চাইলে তিনি কখনও তা প্রত্যাখ্যান করতেন না। (বুখারি, হাদিস : ৫৯২৯)
কিছু কিছু জিনিস আছে, কেউ এগুলো দিতে চাইলে নবীজি (সা.) যেগুলো প্রত্যাখ্যান না করার পরামর্শ দিয়েছেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তিনটি বস্তু প্রত্যাখ্যান করা যায় না; (১) বালিশ, (২) সুগন্ধি তেল ও (৩) দুধ। (তিরমিজি, হাদিস : ২৭৯০)
আরেকটি হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কারও সামনে সুগন্ধি পেশ করা হলে, সে যেন তা ফেরত না দেয়। কেননা, তা ওজনে হালকা, অথচ ঘ্রাণে উত্তম। (নাসায়ি, হাদিস : ৫২৫৯)
এবার জেনে নেয়া যাক নবীজি (সা.) কোন সুগন্ধিগুলো বেশি ব্যবহার করতেন, নিম্নে হাদিসের আলোকে সেগুলোর কয়েকটি তুলে ধরা হলো—
মেশক : মহানবী (সা.) যে সুগন্ধি পছন্দ করতেন, তার মধ্যে অন্যতম মেশক। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, মেশক প্রসঙ্গে রাসুল (সা.)-কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, উত্তম সুগন্ধি হলো মেশক। (তিরমিজি, হাদিস : ৯৯২)
মেশককে আমাদের দেশে কস্তুরিও বলে। এটি অত্যন্ত মূল্যবান সুগন্ধি। পুরুষ হরিণের পেটে অবস্থিত সুগন্ধি গ্রন্থি নিঃসৃত সুগন্ধির নাম। মিলন ঋতুতে পুরুষ হরিণের পেটের কাছের কস্তুরি গ্রন্থি থেকে সুগন্ধ বের হয়, যা মেয়ে হরিণকে আকৃষ্ট করে। ঋতুর শেষে তা হরিণের দেহ থেকে খসে পড়ে যায়। সেটি সংগ্রহ করে রোদে শুকিয়ে কস্তুরি তৈরি করা হয়। একটি পূর্ণাঙ্গ কস্তুরির ওজন ৬০ থেকে ৬৫ গ্রাম হয়।
চন্দন ও জাফরান : কখনো কখনো রাসুল (সা.) চন্দন ও জাফরানের সুগন্ধিও ব্যবহার করতেন। আল্লামা ইবনে আবদুল বার (রহ.) ‘তামহিদ’ নামক কিতাবে আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)-এর একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) জাফরানের সুগন্ধি ব্যবহার করেছেন।’
জাফরান শুধু সুগন্ধি হিসেবেই ব্যবহৃত হয় না, ব্যবহৃত হয় মসলা ও খাবার হিসেবেও। এর স্বাস্থ্যগত উপকারিতাও কম নয়। জাফরানে ঘন কমলা রঙের জলে মিশে যায় এমন এক ধরনের ক্যারোটিন থাকে, যাকে ক্রোসিন বলা হয়। এই ক্রোসিন আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার কোষ, যেমন, লিউকেমিয়া, ওভারিয়ান কারসিনোমা, কোলন অ্যাডেনোকারসিনোমা প্রভৃতি ধ্বংস করতেও সাহায্য করে।
সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে, জাফরান স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। জাপানে পারকিনসন ও স্মৃতিশক্তি হারিয়ে যাওয়ার বিভিন্ন অসুখে জাফরান ব্যবহার করা হয়। এক কেজি জাফরানের মূল্য বাংলাদেশি টাকায় চার লাখ টাকা। এটি তৈরি করতে এক লাখ ৬৬ হাজারের বেশি ফুলের দরকার হয়।
আম্বর : রাসুল (সা.) যে সুগন্ধিগুলো ব্যবহার করতেন, তার আরেকটি হলো আম্বর। হজরত আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, রাসুলুল্লাহ (সা.) কী ধরনের সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। জবাবে তিনি বলেছেন, ‘মেশক ও আম্বরের সুগন্ধি রাসুলুল্লাহ (সা.) ব্যবহার করতেন।’ (নাসায়ি শরিফ, হাদিস : ৫০২৭)
সমুদ্রে বিশেষ একধরনের মাছ আছে, যা থেকে মোমের মতো দ্রব্য পাওয়া যায়। সে জিনিস দিয়েই বানানো হয় মহামূল্যবান এই সুগন্ধি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন