মহাপবিত্র মিরাজ শরীফের ফজিলত

সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন নুরে মুজাসসাম হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরুদ শরীফ ও সালাম। পবিত্র ২৭ শে রজবুল হারাম শরীফ, পবিত্র লাইলাতুল মিরাজ শরীফ! যা পবিত্র মি’রাজ শরীফ বিশ্বের সকল মুসলমান উনাদের জন্য খুবই তাৎপর্য মন্ডিত এবং ফযীলত পূর্ণ দিন।

কেননা,পবিত্র মিরাজ শরীফ লক্ষ-কোটি কারনের মধ্যে অন্যতম হল মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে নুরে মুজাসসাম হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিদার বা স্বাক্ষাৎ মুবারক হয়েছে! সুতরাং পবিত্র মিরাজ শরীফের আমল ও রোযার ফযিলত অনেক!

যা দলীল ভিত্তিক আলোচনা করা হলঃ—এ প্রসঙ্গে, আওলাদে রসূল, ৬ষ্ঠ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ, ক্বাদিরিয়া তরীক্বার ইমাম, গাউছুল আযম, বড়পীর হযরত মুহিউদ্দীন শায়খ সাইয়্যিদ আবদুল ক্বাদির জ্বিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে খবর দিয়েছেন হযরত শায়েখ আবুল বারাকাত হাব্বাতুল্লাহ সাকতী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

উনার এ সনদটি এসেছে বিশিষ্ট তাবিয়ী হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে। হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা ২৭ রজব আসলে সারারাত্র ইতিকাফ করে কাটাতেন। সকাল হতে যোহর পর্যন্ত নফল নামায আদায় করতেন। যখন ছলাতুয যোহর আদায় করতেন আবারো নফল নামাযে মশগুল হয়ে যেতেন।

এভাবে তিনি চার রাকায়াত নফল নামায আদায় করতেন। এতে প্রত্যেক রাকায়াতে সূরা ফাতিহার পর সূরাতুল ফালাক্ব একবার, সূরা নাস একবার, সূরাতুল ক্বদর তিনবার, সূরাতুল ইখলাছ পাঁচবার পড়তেন। অতঃপর আছর নামায পর্যন্ত দুয়া কালাম, তাসবীহ-তাহলীল, দুরূদ শরীফ, মীলাদ শরীফ-এর মধ্যে ব্যস্ত থাকতেন। এ ব্যাপারে তিনি বলতেন, এই ২৭ রজব তারিখ দিন-রাতে সাইয়্যিদুনা হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরূপই করতেন।

(গুনইয়াতুত ত্বালিবীন ৩য় পর্ব, ৩৩২ পৃষ্ঠা)পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত রয়েছে;-অর্থ: হজরত সাইয়্যিদুনা সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, রজব মাসে এমন একটি দিন ও একটি রাত রয়েছে, যিনি এদিন রোযা রাখবেন, আর রাত জেগে ইবাদত করবেন, তবে তিনি যেন ১০০ বছরের রোযা রাখলেন এবং ১০০ বছরের রাত জেগে ইবাদত করলেন, আর তা হচ্ছে পবিত্র রজব উনার ২৭ তারিখ।

সুবহানাল্লাহ! (শোয়াবুল ঈমান লিল বায়হাক্বী- বাবু তাকছিছু শাহরী রজব বিয যিকরী, ৫ম খন্ড ৩৪৫পৃ, হাদিস-৩৫৩০, ফাদ্বায়িলুল আওকাত লিল বায়হাক্বী ১/৯৬, জামিউল আহাদীছ ১৪/৪৯৬: হাদীছ ১৪৮১২, কানযুল উম্মাল ১২/৩১২: হাদীছ ৩৫১৬৯, জামেউ জাওয়ামে ১ খন্ড,নেদায়ে রাইয়ান ফি ফিক্বহিস সওমে ওয়া ফদলী রমাদ্বান ১/৪২১) হাদীছ শরীফের বিখ্যাত ইমাম হযরত বায়হাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সনদ সহকারে হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে-“অর্থ: পবিত্র রজব মাসে একটি রাত আছে সে রাতের আমল কারীর সমস্ত আমলের ছওয়াব ১০০ গুণ করে লিপিবদ্ধ করা হয় সে রাতটি হলো পবিত্র ২৭শে রজব।

যে ব্যক্তি ওই রাতে ১২ রাকায়াত নামায আদায় করবে যাতে পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ সহ অন্য কোনো পবিত্র আয়াত শরীফ পাঠ করবে প্রতি দু’রাকায়াতে তাশাহুদ (পবিত্র দুরূদ শরীফ ও দুয়ায়ে মাছুরাসহ) পাঠ শেষে সালাম ফিরাবে। এবং নিম্নোক্ত দুআ ১০০ বার পাঠ করবে,(সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহি ওয়া আল্লাহু আকবার) অতপর ১০০ বার ইস্তেগফার পাঠ করবে অতপর ১০০ বার পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করবে।

ওই ব্যক্তি দুনিয়া ও আখিরাতের সমস্ত কল্যাণকর যত দোয়া করবে এবং সকালে রোযাদার অবস্থায় অবস্থান করবে তার সকল দোয়াই কবুল করা হবে,শুধুমাত্র গুনাহের কাজের জন্য দোয়া ব্যতীত। সুবহানাল্লাহ।

(শোয়াবুল ঈমান লিল বায়হাক্বী- বাবু তাকছিছু শাহরী রজব বিল যিকরী, ৫ম খন্ড ৩৪৬ পৃ,হাদিস-৩৫৩১, ফাদ্বায়িলুল আওকাত লিল বায়হাক্বী ১/৯৭ : হাদীছ ১২, তাবয়িনুল আযাব বিমা উরিদা ফি ফাদলি রজব ১/৩১, জামিউল আহাদীছ ১৪/৪৯৬: হাদীছ ১৪৮১২, কানযুল উম্মাল ১২/৩১২: হাদীছ ৩৫১৭০, জামেউ জাওয়ামে ১ খন্ড বাবু হারফূ ফা, আসারুল মারফুয়া ১/৬১ ,তানযিয়াতু শরীয়াতিল মারফুয়া ২/৮৯)!

সুতরাং, পবিত্র মিরাজ শরীফের আমল ও রোযার ফযিলত অনেক! তাই,পবিত্র মিরাজ শরীফে খালিছ-তওবা,দোয়া-ইস্তিগফার,,দুরুদ শরীফ পাঠ,জিকির-আসগার,ও মীলাদ ও ক্বিয়াম শরীফ পাঠ করে মুনাজাত করা! মহান আল্লাহ পাক যেন হযরত মুজাদ্দিদে আযম সুলতানুন নাছীর মামদুহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার উছিলায় পবিত্র মিরাজ শরীফের আমল করার তাওফিক দান করুন।