মহাসড়কে চলছে লেগুনা-সিএনজি, বাড়ছে দুর্ঘটনা

এবারের ঈদের ছুটিতে গত পাঁচ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫০ জনের বেশি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে শনিবার নাটোরে একটি বাস-লেগুনা সংঘর্ষে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ঈদের ছুটি ছাড়াও বছরের অন্যান্য সময়ে মহাসড়কে বিভিন্ন সময় সিএনজিচালিত অটোরিকশা, লেগুনা কিংবা নসিমন-করিমন নামের ছোট বাহনগুলো দুর্ঘটনায় পড়ছে।

সরকার মহাসড়কগুলোতে এ ধরনের যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করলেও সেগুলো থেমে নেই। নানা ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়কে চলছে এসব বাহন। কিন্তু কেন এসব যানবাহন মহাসড়কে চলাচল থামানো যাচ্ছে না?

মহাসড়কে যাতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলতে না পারে সেজন্য প্রায় তিন বছর আগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।

এর বছরখানেক আগে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল যাতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলার মহাসড়কে শ্যালো ইঞ্জিন চালিত নসিমন, করিমন এবং ভটভটি চলতে না পারে।

কিন্তু পুলিশ যখন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে যায় তখন সিএনজি-চালিত অটোরিকশার চালকরা ব্যাপক বিক্ষোভে নামে। এরপর থেকে বিভিন্ন জায়গায় এসব বাহন মহাসড়কে চলছে।

সাথে রয়েছে ছোট আকারের লেগুনা কিংবা কোথাও কোথাও-কোথাও ব্যাটারি চালিত হালকা অটোরিকশা।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ সেন্টারে পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলছেন, মহাসড়কে দ্রুত এবং ধীরগতির বাহন একসাথে চলাচল দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অধ্যাপক রহমান বলেন, মহাসড়কে যদি বিভিন্ন গতির যানবাহন একসাথে চলে এবং সেগুলোর মধ্যে যদি গতির পার্থক্য বেশি হয়, তাহলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

তার কথায়, ‘এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধের জন্য হাইওয়েতে ধীরগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করতেই হবে।’

স্থানীয় মানুষজন মনে করে এসব বাহন মহাসড়কের ওপর দিয়ে চলতে না পারলে তাদের জীবন থমকে যাবে। তাছাড়া অনেক সময় বিকল্প রাস্তা না থাকায় মহাসড়কের উপর দিয়েই এসব বাহন চালাতে হয়।

রাজশাহীর বাসিন্দা রোজেটি নাজনীন বলছেন, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত তিন চাকার টমটম কিংবা লেগুনা এবং নসিমন-করিমনের মতো বাহনগুলো গ্রামীণ সমাজের মানুষের জীবনে অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কারণ এতে সময় এবং খরচ দুটোই কম লাগে। বিকল্প ব্যবস্থা না করে এসব বাহন বন্ধ করা যাবে না বলে তিনি মনে করেন।

মহাসড়কে কম গতির বাহনগুলোর চালকরা দুর্ঘটনার জন্য সবসময় দায়ী করেন বাস কিংবা ট্রাক চালকদের বেপরোয়া মনোভাবকে।

অন্যদিকে বাস-ট্রাকের চালকরা পাল্টা অভিযোগ তোলেন কম গতির বাহনগুলোর বিরুদ্ধে। পুলিশ বলছে মহাসড়কে এসব বাহন যাতে চলতে না পারে সেজন তারা তৎপর আছে।

হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি মো. আতিকুল ইসলাম দাবি করেন, গত কয়েক বছরে মহাসড়কে ধীরগতির ছোট যান চলাচল ৮০ শতাংশ কমে গেছে। তিনি বলেন, উপজেলা পর্যায়ে এসব যান চলাচলে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। কিন্তু বিভিন্ন সময় এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় যাতায়াতের সময় মহাসড়কের কিছু অংশ যখন ব্যবহার করা হয় তখন ‘সমস্যা তৈরি হয়’ হলে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ছোট আকারের ধীরগতির বাহনগুলোর সাথে মানুষের প্রয়োজন যেমন জড়িত তেমনি কর্মসংস্থানের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য এসব বাহনের বিরুদ্ধে পুলিশ সর্বাত্মক কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। -বিবিসি বাংলা