মাইগ্রেনের অসহনীয় যন্ত্রণা কমানোর সহজ উপায়

জীবনে কোনোদিন মাথাব্যথা হয়নি এমন লোক বোধহয় খুঁজে পাওয়া একটু কঠিনই হবে। অনেকেই প্রায়ই মাথা ব্যথার যন্ত্রণায় ভুগে থাকেন। মাঝেমাঝেই মাথার বাম পাশে কিংবা মাথার পিছন দিকটায় ব্যথা করতে পারে। মাথা ব্যথার একটা বড় কারণ হলো মাইগ্রেন। তবে এটি কোনো সাধারণ মাথা ব্যথা নয়।

মাইগ্রেন বহু পুরোনো একটি সমস্যা। সারা বিশ্বে কোটি কোটি মানুষ মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগে থাকে। বয়সের সঙ্গে মাইগ্রেন-এর তীব্রতা বা ঘন ঘন আক্রমণ কমে গেলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সারাজীবন মাইগ্রেন-এর ব্যথা হওয়ার ভয় থেকেই যায়। তবে কোনো প্রকার ওষুধ ছাড়াই একটু নিয়মানুবর্তী হলেই মাইগ্রেন-এর আক্রমণ অনেকটা কমিয়ে ফেলা সম্ভব।

এ সমস্যা সমাধানে কিছু ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করতে পারেন।
মাইগ্রেনের ব্যথা কমানোর জন্য যে-সব উপায় অবলম্বন করতে পারেন–

১. আদার মধ্যে রয়েছে এমন কিছু উপাদান যা মাইগ্রেনের সমস্যা কমাতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হলেই এককাপ আদা চা খেয়ে ফেলুন। সমস্যা থাকবে দূরে। এক্ষেত্রে চাইলে আপনি কাঁচা আদাও রোজ সকালে খেতে পারেন।

২. এই ভেষজটি ভারতীয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ স্থান পেয়ে এসেছে। এক্ষেত্রে মাইগ্রেনের সমস্যাতেও এই ভেষজ হয়ে উঠতে পারে দারুণ কার্যকরী। এক্ষেত্রে অশ্বগন্ধা পানিতে ফুটিয়ে নিন। তারপর দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেয়ে নিন। তাহলে এই সমস্যা অনেকটাই দূর হবে।

৩. লবঙ্গের মধ্যে রয়েছে অনেক উপকারী উপাদান। এই উপাদান খুব সহজেই আপনার মাইগ্রেনের সমস্যা দূর করতে পারে। এক্ষেত্রে লবঙ্গ চিবিয়ে খেতে পারেন বা লবঙ্গের পাওডার দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেয়ে নিন।

৪. মাইগ্রেনের সমস্যা কমাতে চাইলে ল্যাভেন্ডার তেল হতে পারে অন্যতম হাতিয়ার। এক্ষেত্রে এই তেলে থাকা অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি গুণ এই সমস্যা কমায়। মাইগ্রেনের ব্যথা উঠলে এই তেলে নাক দিয়ে ১৫ মিনিট শ্বাস নিতে হবে। সমস্যা কমবে।

৫. মাইগ্রেনের সমস্যা কমাতে চাইলে ব্যায়াম করতেই হবে। ব্যায়াম অথবা ইয়োগা করলেও এই সমস্যা কাটবে।

৬. মাইগ্রেনের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে চেরি ফলের জুসও বেশ উপকারী। চেরিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পলিফেনলস নামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। চেরি স্ট্রেস দূর করে, মাথাব্যথা কমায়।

৭. মাইগ্রেনের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে আরেকটি বিশেষ খাবার হচ্ছে মাশরুম। মাশরুমে ম্যাগনেশিয়াম ও রিবোফ্লোবিন থাকায় মাইগ্রেনের ব্যথা কমে।

এছাড়াও বাড়িতেও কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলতে পারেন। আপনার দৈনন্দিন জীবনে সামান্য কিছু পরিবর্তন আনলেই আপনি মাইগ্রেনের সমস্যা এবং যন্ত্রণা থেকে কিছুটা উপকার পাবেন।

নিয়মগুলো জেনে নেওয়া যাক-

১. খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন যেমন, ডার্ক চকলেট, কফি, ইত্যাদি এড়িয়ে চলা ভালো।

২. জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি যারা সেবন করেন, মাইগ্রেন-এর ব্যথার প্রকোপ বেড়ে গেলে

৩. চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বড়ি সেবন বন্ধ করে দিতে হবে।

৪. দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ মুক্ত থাকতে হবে।

৫. দীর্ঘক্ষণ যাবত টিভি দেখা, কম্পিউটার-এ কাজ করা, মোবাইলে কথা বলা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে।

৬. অনিদ্রা জনিত সমস্যা বা রাত জাগার বাজে অভ্যাস থাকলে তা পরিবর্তন করতে হবে।

৭. কড়া রোদ বা তীব্র ঠান্ডা পরিহার করতে হবে।

৮. মাইগ্রেন শুরু হয়ে গেলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা (বিশেষ করে বমি হয়ে থাকলে), বিশ্রাম করা, ঠান্ডা কাপড় মাথায় জড়িয়ে রাখা উচিত।

৯. গর্ভাবস্থাতেও মাইগ্রেন-এর সমস্যা হতে পারে ঘন ঘন। সেক্ষেত্রে ডাক্তারকে প্রথমেই মাইগ্রেন-এর ব্যাপারে জানিয়ে রাখা দরকার।

১০. হাসি-খুশি থাকার চেষ্টা করতে হবে, জীবনের আনন্দকে উপভোগ করতে হবে।