"সিমান্তে মাদকের লাগামহীন বিস্তার"
মাদকে ধুঁকছে রংপুরের যুবসমাজ, বাড়ছে চুরি, ছিনতাই, হত্যা
একটা সময় দিনাজপুরের বাংলা হিলি ছিলো মাদককের তীর্থস্থান। বিভাগীয় শহর রংপুর কিংবা আশেপাশের জেলা উপজেলা গুলোতে ফেনসিডিলের ৯০% চালান দিনাজপুরের সিমান্তবর্তী এলাকা থেকে সরবরাহ করা হতো।হাঁড়িপুকুর, সাতকুঁড়ি রেলগেইট, ক্যাটরা, কাটলা,চুড়িপট্টি, বাংলাহিলি, বিরামপুর, দাউদপুর,ফুলবাড়ি,নবাবগঞ্জেরআনাচে-কানাচের সিমান্তবর্তী এলাকাগুলোর প্রায় ৪০% নারী পুরুষ মাদক চোরাচালানে যুক্ত ছিলো। মাদক সেবিরাও সস্তায় মাদক সেবন উদ্দেশ্যে মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার নিয়ে ছুটতেন মাদক সেবনের জন্য। হাকিমপুর উপজেলায় বহিরাগত মোটরবাইক নিয়ে ছুটে চলা যুবকদের মধ্যে প্রায় ৬০% ছিলো মাদকসেবী।
পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভা নির্বাচন এবং করোনার প্রাক্কালে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সীমান্তবর্তী ফেনসিডিল তৈরীর কারখানা গুলো সিলগালা করে দিলে ফেনসিডিল উৎপাদন ব্যাহত হয়। সিমান্তেই ফেনসিডিলের দাম আকাশচুম্বী হয় এবং মারাত্মক সংকটের সৃষ্টি হয়। ফলে থমকে যায় চোরাচালান এবং ফেনসিডিল পাচার। অন্যদিকে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি’র জোরদার টহলে মাদক কারবারি এবং মাদকসেবীরা মাদকের স্পট পরিবর্তন করে সস্তায় পেতে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রামের সিমান্তবর্তী এলাকাগুলোর দিকে অগ্রসর হয়।
👉প্রশাসনের বিভিন্ন সোর্সরা মাদক কারবারির সহযোগী হিসেবে কাজ করছে।
দিনাজপুরের সিমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে ফেনসিডিল সংকট তৈরি হলে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ,হাতিবান্ধা উপজেলা এবং কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলার ভারতীয় বর্ডার থেকে মাদক কারবারিরা বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল এবং গাঁজা আমদানি করছে। সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় এবং নতুন বর্ডার দিয়ে মাদক পাচারের কারনে হিলি বর্ডারের চেয়ে প্রায় তিনগুন কম দামে লালমনিরহাট এবং কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি বর্ডার এলাকায় মাদক কারবারিরা মাদক পাচার,সেবন এবং চোরা চালানে আকৃষ্ট হন। এমনকি যে হাকিমপুর উপজেলা ফেনসিডিলের স্বর্গ ছিলো সেখানেই লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম থেকে হাজার হাজার ফেনসিডিল,গাঁজা প্রতিনিয়ত পাঠানো হচ্ছে।
👉মাদক দ্রব্যের কর্মকর্তাদের এলাকাভিত্তিক চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
মাদেকের নিরাপদ রুট হিসেবে পরিচিত গংগাচড়া মহিপুর ব্রিজ, কাউনিয়া তিস্তা সেতুর উপর রংপুর জেলা পুলিশ, ডিবি পুলিশ তৎসহ থানাগুলো যে পরিমান মাদক উদ্ধার করে তার প্রায় ৯০℅ লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ,হাতিবান্ধা চাপারহাট, ছাতুর ডিগি,দইখাওয়া বাজার,কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি বিডিআর বাজার এবং বালারহাট থেকে চোরাচালান করা হয়। বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করে জেলা পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট এলাকার থানাগুলো। রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল মানেই মাদকের চালান আটক এবং মাদক কারবারি গ্রেফতার।
👉মোটরবাইককে ছুটে চলা ৭০ শতাংশ তরুণ, ১০ শতাংশ শিক্ষক, ৫% চাকরিজীবি, বিভিন্ন দলের নেতাও রয়েছেন।
সম্প্রতিককালে র্যাবের মাদকের কয়েকটি বড় বড় চোরাচালান আটকের তথ্য দেখলেই বোঝা যায়,লালমনিরহাট আর কুড়িগ্রামের সিমান্ত পার হয়ে আসা মাদকের চোরাচালান দেশব্যাপী কতটা বেপরোয়া ভাবে বেড়েছে। বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তথ্যমতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো যে পরিমান মাদকের চালান আটক করছে তা প্রায় মোট চোরাচালানের ১০ ভাগ। বাকী ৯০ ভাগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অগোচরে বিভিন্ন রুটে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা শহর গুলোতে প্রবেশ করেছে।
👉সিমান্তে একটি ফেনসিডিল গ্রিক ৮০০ টাকা রংপুরে প্রায় দ্বিগুন ,এজন্যই আমরা এখানে আসি- মাদকসেবী তরুণ।
সরেজমিনে কালীগঞ্জ উপজেলাধীন চাপারহাট ছাতুর ডিগি বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন গিয়ে দেখা যায়, একের পর এক মাদকসেবী ফেনসিডিল সেবনের জন্য জিয়াউর নামে এক মাদক ব্যবসায়ির বাড়িতে প্রবেশ করছে। ফেনসিডিল সেবন করতে আসা বেশ কয়েকজন যুবক ও তরুণের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, রংপুর শহরে ফেনসিডিলের বর্তমান দাম ৩৫০০-৩৭০০ টাকা, আর এখানে মাত্র ২৫০০-২৭০০ টাকা। ফেনসিডিল গ্রিক এখানে ৮০০ টাকা। কিন্তু রংপুরে এর দাম ১৬০০ টাকা এজন্য আমরা রংপুর থেকে আসি। ফেনসিডিল ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমানের সঙ্গে কৌশলে এক মাদকসেবীর পরিচয় বহন করে কথা বললে তিনি জানান, রংপুর থেকে প্রতিদিন আমার এখানে ২০০-৩০০ গাড়ি আসে। আমি কম দামে দেই। আপনারা ফেনসিডিল পাইকারি নিলে আমার লাইনম্যান আছে আপনার ঠিকানায় পৌঁছে দেবে। সে আরো জানায়,প্রতিরাতে আমার দু’তিনটা চালান রংপুরে যায়। পুলিশ আর বিজিবিকে তার বাবা সাবেক ইউপি সদস্য ম্যানেজ করেন।
👉বিপথগামী তরুণদের সচেতনতার জন্য কমিউনিটি পুলিশিং এবং বিট পুলিশিং কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে- ফেরদৌস আলী চৌধুরী।
চন্দ্রপুর বর্ডারের ফেনসিডিল ব্যবসায়ী খবিরের বাড়িতে যেনো ফেনসিডিলের ছোটখাটো একটা কারখানা। তার বাড়িতে অবস্থানকালে দেখা যায়, ভ্রাম্যমান মাদক পাচারকারীরা সিমান্ত থেকে বস্তায় বস্তায় ফেনসিডিল নিয়ে এসে তার কাছে পাইকারি বিক্রি করছেন। ভয়ডরহীন খবির জানালেন, সবাইকে ম্যানেজ করে ব্যবসা করেন। তার নাম শুনলে সব জায়েয। একটু সামনে এগিয়ে চাপারহাটে গেলে কালু মিয়া নামে আরেক মাদক কারবারির দেখা হয়। তার বাড়ির সামনে ১৫/২০টি মোটরসাইকেল নিয়ে মাদক সেবীরা ফেনসিডিল সেবন করছেন। তবে পরিচিত মাদকসেবী ছাড়া তিনি ফেনসিডিল বিক্রি করেন না বলে এ প্রতিবেদককে জানান।
👉গডফাঁদার আর রাঘবরা ধরা ছোঁয়ার বাহিরে, ছোটদের উপর যত চাপ, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদক ব্যবসায়ী।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে পরিমাণ গাঁজা, ফেনসিডিল উদ্ধার করে তার প্রায় ৭০%কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি এবং বালার হাটের বলে জানিয়েছেন। কয়েকটি গাঁজার বড় চালান আটক করা হলে গ্রেফতারকৃত মাদক কারবারিরা জানান, এসব তারা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি সিমান্ত থেকে সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাচার করছেন।
👉প্রতিমাসে গড়ে ৩০/৩৫ টি মাদক মামলা দায়ের করা হচ্ছে- রংপুর জেলা পুলিশ সুপার।
এ বিষয়ে রংপুর জেলা পুলিশ সুপার মোঃ ফেরদৌস আলী চৌধুরী প্রতিবেদককে জানান, সামাজিক সচেতনতার উপর আমরা বেশী গুরুত্ব দিয়েছি। পাশাপাশি সবার দায়বদ্ধতা রয়েছে মাদক নির্মূলে। পুলিশ এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথেষ্ট চেষ্টা করছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন