মাদারীপুরের লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটা দখলমুক্ত করেন প্রশাসন

মাদারীপুরের লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটা দখলমুক্ত করেছে প্রশাসন। মাদারীপুরের ডাসারে বিএনপির নেতার দখল থেকে প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ে পৈতৃক ভিটা দখলমুক্ত করেছে প্রশাসন।

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টার দিকে উপজেলার পূর্ব মাইজপাড়া এলাকায় কালকিনি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার দাশের নেতৃত্বে পুলিশ ও সেনা সদস্যের বহর নিয়ে লেখকের পৈতৃক ভিটা পরিদর্শন শেষে পুরো বাড়ি ও জমি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে নেয় প্রশাসন।

এ সময় লেখকের ঘরে বিএনপির নেতার লাগানো তালা ভেঙে নতুন তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযুক্ত দখলদারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি প্রশাসন।

এর আগে কালকিনি উপজেলা বিএনপির সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক সোহেল হাওলাদার লেখকের পৈতৃক ভিটা নিজের পারিবারিক জমি দাবি করে দখলে নেন বলে অভিযোগ তোলেন স্থানীয়রা। এ সময় লেখকের ঘরে থাকা একাধিক ছবি, লেখকের ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে ওই ঘরে ওএমএসের চাল মজুত করে ঘরটি তালাবদ্ধ করে রাখেন তিনি।

ডাসার ও কালকিনি উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ডাসার উপজেলার কাজীবাকাই ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়ায় মৌজায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ে ৭ একর ১৫ শতাংশ পৈতৃক জমি রয়েছে। এসব জমির মধ্যে ২ একর ৯৭ শতাংশ জমি সরকারের খাস জমি হিসেবে রেকর্ড রয়েছে।

গত শনিবার দুপুরে লেখকের পৈতৃক ভিটার একটি টিনসেড ঘরের (সুনীল স্মৃতি পাঠাগার) তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে বিএনপি নেতা সোহেল হাওলাদার ও তার লোকজন। পরে তারা লেখকের ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি, আসবাবপত্র, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিসহ একাধিক ছবি ভাঙচুর করে।
লেখকের ঘরে বিএনপির নেতার লাগানো তালা ভেঙে নতুন তালা লাগিয়ে দিয়েছে প্রশাসন।

এরপর তাঁরা ওই ঘরে ওএমএসের প্রায় এক ট্রাক চাল মজুত রেখে নতুন তালা ঝুলিয়ে দেয়। এ ছাড়াও লেখকের বাড়ির সামনে জেলা প্রশাসক কতৃক লাগানো একটি সাইনবোর্ডও ভেঙে সরিয়ে ফেলা হয়। বিভিন্ন ইলেকট্রিক মিডিয়া ও প্রিপ মিডিয়ায় প্রচার হলে

এরপরেই সাহিত্য প্রেমী, সাংস্কৃতি অঙ্গন ও সচেনত নাগরিকরা এই ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

সোমবার রাতেই জেলা প্রশাসন থেকে লেখকের বাড়িটি পুনরুদ্ধারের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরে মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে লেখকের স্মৃতিবিজড়িত পৈতৃক ভিটায় পুলিশ ও সেনা সদস্যদের বহন নিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করেন কালকিনি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার দাশ। এ সময় ইউএনও সঙ্গে উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুবা ইসলাম, ডাসার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম শফিকুল ইসলাম, কাজীবাকাই ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাসহ গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটার ‘দখল নিল’ বিএনপি নেতাসুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটার ‘দখল নিল’ বিএনপি নেতা কালকিনি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার দাশ বলেন, ‘সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ে পৈতৃক ভিটা ও জমি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে প্রশাসন। লেখকের ঘরে নতুন তালা লাগানো হয়েছে। এই জমিতে অনুমতি ছাড়া কেউ যেন প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য সকলকে সতর্ক করা হয়েছে।

অতি শিগগিরি আমরা লেখকের পৈতৃক ভিটায় সুনীল স্মৃতি মিউজিয়াম, সুনীলের আবক্ষ মূর্তি স্থাপন, পুকুর পাড় সংলগ্ন উন্মুক্ত মঞ্চ, শান বাধানো ঘাট নির্মাণ করে হবে। এর ফলে লেখকের পৈতৃক ভিটা একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে সকলের কাছে পরিচিতি লাভ করবে।’

ইউএনও আরও বলেন, ‘অভিযুক্ত ওই নেতার বিরুদ্ধে আইন ব্যবস্থা এখনো নেওয়া হয়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের সিদ্ধান্ত অনুসারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

লেখকের পৈতৃক ভিটায় বহিরাগতদের প্রবেশ ঠেকাতে নজরদারিতে থাকবে ডাসার থানা পুলিশ। জানতে চাইলে ওসি এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন থেকে দখলদারের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলেই আমরা অনুপ্রবেশকারী দখলদারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এ ছাড়া এ ধরণের ঘটনা আর যেন না ঘটে সেই বিষয় পুলিশ লেখকের বাড়িটি নজরদারিতে রাখবে।

উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৩৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতের মাদারীপুর মহকুমার রাজৈরের আমগ্রামের মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি তৎকালীন মাদারীপুর মহকুমার কালকিনির পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে। যা বর্তমানে ডাসার উপজেলায় অবস্থিত। তিনি ২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর কলকাতায় মারা যান।