মাদারীপুরে সমাজসেবা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধীদের ভাতা আত্মসাৎতের অভিযোগ
মাদারীপুরে প্রতিবন্ধীভাতা দুই সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা নিজেদের বিকাশ নম্বর দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভাতাভোগীরা জানেন না যে সরকার থেকে প্রাপ্ত প্রতিবন্ধী ভাতার তালিকায় তাদের নাম রয়েছে। মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নে ঘটেছে এমন ঘটনা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মাদারীপুর সদরের সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন,‘বিপদে ফেলতে চলতি মাসেই আমার মোবাইল নম্বর এডিট করে তালিকায় দিয়েছে কেউ। আমার কাছে বিকাশ স্টেটমেন্ট রয়েছে। আমি থানায় জিডিও করেছি।’
এদিকে ভুক্তভোগী একাধিক ভাতাভোগী সদর উপজেলার সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন হাওলাদার এবং কালকিনি উপজেলা সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে,মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রুপাই হাওলাদারের নামে মাদারীপুর সদর উপজেলা হতে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে একটি প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হয়। তবে রুপাই হাওলাদার নিজেই বিষয়টি জানেন না। সম্প্রতি তিনি অফিসে গিয়ে জানতে পারেন তার নামে ৫ কিস্তির ১২ হাজার ৭শত ৫০ টাকা এবং বিগত দুই কিস্তির আরও ৫ হাজার ১শত টাকা তার বিকাশ নম্বরে যাচ্ছে না। যে দুই বিকাশ নম্বরে রুপাই হাওলাদারের টাকা যাচ্ছে তা হলো সদর উপজেলা সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেনের। বর্তমানেও তার নামের টাকা ০১৬৭০১৩৯১১১ এই নম্বরেই যাচ্ছে। অথচ নম্বরটি প্রকৃত ভাতাভোগীর নয়!
এছাড়াও একই ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের মো. মামুন খান ও ছালমা বেগম দম্পতির বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মেয়ে ফাতেমা আক্তার এর নামে ২০২০-২০২১ অর্থ বছর হতে নিয়মিত ভাবে ০১৯২৮১১৩৭৩০ এই নম্বরে টাকা গেলেও হঠাৎ গত ৩ কিস্তির টাকা উক্ত নাম্বারে আসেনি। পরে ভুক্তভোগীর মা অফিসে গিয়ে জানতে পারেন মেয়ের নামের টাকা বর্তমানে ০১৯২২১৮১২২৩ নম্বরে যাচ্ছে। বিকাশ নম্বর পরিবর্তনের জন্য ভাতাভোগী ও পরিবার কোন আবেদন সমাজসেবা অফিসে করেনটি বলে জানান। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ওই নম্বরটি সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন এর এক ঘনিষ্ঠজনের।
মাদারীপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের ঘটকচর গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর সরদার অভিযোগ করেন যে, অনেক আগে প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার জন্য মেম্বারের কাছে আইডি কার্ড দিয়েছিলেন তিনি। সম্প্রতি জানতে পেরেছেন যে তার নামে মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়ন হতে ২০২২-২৩ সালে একটি প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি অফিসে গিয়ে জানতে পারেন তার নামের প্রথম ৫ কিস্তির ১২৭৫০ টাকা ০১৩৩০৯৫৩৭৪৭ এই মোবাইল নম্বরে দেওয়া হয়েছে এবং বিগত ২ কিস্তির ৫১০০ টাকা ০১৭১৫১৯৯৫৯৪ এই বিকাশ নম্বরে ঢুকেছে। অথচ উক্ত নম্বর দুটি ভাতাভোগী মিজানুর রহমানের নয়। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন নম্বরটি কালকিনি উপজেলা সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমানের। এছাড়াও কালকিনি পৌর সভার ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগমের বয়স্ক ভাতার টাকাও এই নম্বরে যাচ্ছে!
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কালকিনি উপজেলা সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান সদর উপজেলা সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তারা দুইজন ১৯৯৮ সালে ফিল্ড সুপারভাইজার হিসেবে সমাজসেবা অধিদফতরে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই তারা ঘুরে-ফিরে মাদারীপুরের বিভিন্ন উপজেলাতেই তারা কর্মরত আছেন। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তারা একই সাথে পদোন্নতি পেয়ে ফিল্ড সুপারভাইজার হতে সহকারী সমাজসেবা অফিসার হিসেবে বিধি বহির্ভূতভাবে পূর্ববর্তী কার্যালয়েই পদায়ন পেয়েছেন।
ভুক্তভোগী রুপাই হাওলাদারের ছেলে রাকিব বলেন,’আমাদের বিকাশ নম্বরের স্থানে অন্য লোকের নম্বর দিয়ে তারা টাকা তুলে নেয়। আমরা কোন টাকা পাইনি। পরে আমরা ডিসি বরাবর অভিযোগ দিয়েছি।’
আমেনা বেগম নামের আরেক ভুক্তভোগী বলেন,’আমার বিকাশ নম্বরের জায়গা অন্য একজনের বিকাশ নম্বর। অথচ আমি আমার নম্বর পরিবর্তন করিনি। গত ৮/১০ মাস ধরে কোন টাকা পাই না আমি। অফিসের লোকেরা এভাবেই আমার টাকা নিয়ে যাচ্ছে।’
ভুক্তভোগী মিজানুর রহমান বলেন,’আমার মোট সাত কিস্তির টাকা আমার মোবাইলে আসেনি। আমার মোবাইলের পরিবর্তে অফিসের স্যারের মোবাইল নম্বর দেওয়া। ওই বিকাশ নম্বরেই টাকা গেছে। আমাকে কোন টাকা দেয় নাই।’
এছাড়াও সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন সমাজসেবা অধিদফতরের (রেজিস্ট্রেশন রেজি: মাদা-৩৮৪ তাং০৮/০২/২০১২)নিয়ে ‘ভদ্রখোলা আদর্শ সংস্থা’ নামে একটি ভূয়া স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে প্রতিবছর সমাজকল্যাণ পরিষদসহ সরকারি দফতর থেকে আর্থিক অনুদান নিচ্ছেন বলেও একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
অভিযুক্ত সদর উপজেলা সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন,’আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে কাজটি করেছে। ভাতাভোগীদের নামের পাশে চলতি মাসেই আমার নম্বর যুক্ত করে দিয়েছে। আমি বিকাশের পুরো স্টেটমেন্ট তুলেছি। কোন টাকা আমার বিকাশে আসেনি। আমি থানায় জিডিও করেছি। শীঘ্রই সংবাদ সম্মেলন করবো।’
অভিযুক্ত অপর সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বিষয়টিকে ষড়যন্ত্র বলে জানিয়েছেন।’
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ আশাদুল ইসলাম বলেন,বিষয়টি আমি জানিনা।আমি খোঁজ খবর নিচ্ছি। যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) নুসরাত আজমেরি হক বলেন,’ ভাতাভোগীদের অর্থ আত্মসাৎ কোন ভাবেই মেনে নেয়া যাবে না। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন