মাদ্রাসা শিক্ষককে লাঞ্ছনার ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ২ (ভিডিও)
বরিশালে বাকেরগঞ্জের কাঠালিয়া ইসলামিয়া দারুচ্ছুন্নাৎ দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক, তত্ত্বাবধায়ক ও মসজিদের ইমাম মো. আবু হানিফাকে লাঞ্ছনার দায়ে দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দুর্বৃত্তদের বিচারের দাবিতে বুধবার (১৬ মে) মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দিয়েছে স্থানীয় আলেমসমাজ । পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, শুক্রবার (১১ মে) বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নে প্রকাশ্যে লাঞ্ছনা করা হয় আবু হানিফাকে। সেই লাঞ্ছনার দৃশ্য ভিডিও করে পরে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় প্রতিপক্ষের লোকজন। এ ঘটনায় নিজের ছোটভাই জাকারিয়া হোসেন জাকিরসহ ১৩ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন আবু হানিফা।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী মাওলানা আবু হানিফার ছেলে মো. মহিবুল্লাহ বলেন, ‘লোকলজ্জার ভয়ে বিষয়টি চেপে যেতে চাইলেও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার পর থানায় মামলা করা হয়েছে। এ কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে আসামিরা এখন প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে।’
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া গ্রামে ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘কাঠালিয়া ইসলামিয়া দারুচ্ছুন্নাৎ দাখিল মাদ্রাসা’। এই মাদ্রাসার তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করছেন মাওলানা মো. আবু হানিফা। মাদ্রাসার সংশ্লিষ্ট মসজিদের ইমামও তিনি।
এ ব্যাপারে মাওলানা মো. আবু হানিফা বলেন, ‘কাঠালিয়া গ্রামে দারুল উলুম দীনিয়া আরাবিয়া কমপ্লেক্স ও এতিমখানা নির্মাণের জন্য ২০০৯ সালে জায়গা ক্রয় করা হয়। জামায়াতপন্থী কিছু ব্যক্তি ওই জায়গা দখল করে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার পাঁয়তারা করলে ২০১৪ সালে একটি মামলা হয়। এ অবস্থায় চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি অ্যাডভোকেট এইচ এম মজিবুর রহমান কাঠালিয়া ইসলামিয়া দারুচ্ছুন্নাৎ দাখিল মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। লাঞ্ছনাকারীদের সমর্থিত খন্দকার মো. জাহাঙ্গীর আলম এ নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। এসব কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে লাঞ্ছনাকারীরা বিভিন্ন সময়ে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় তারা আমাকে নানান ধরনের হুমকি ও মাদ্রাসা থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার দিন ১১ মে সকাল ৭ টায় হাঁটতে বের হয়ে বাড়ির ৫শ’ গজ দূরে গেলে মামলার নামধারী আসামি ও অজ্ঞাতনামাসহ ১৪-১৫ জন ব্যক্তি আমার পথরোধ করে পাঁচ লাখ চাঁদা টাকা দাবি করে। এসময় তারা আমাকে মারধর করে। একপর্যায়ে মাটির হাড়ির ভেতরে থাকা মানুষের পরিত্যক্ত মল মাথায় ও গায়ে ঢেলে দেয়।’
বিষয়টি চেপে যেতে চেয়েছিলেন দাবি করে তিনি আরও বলেন, ‘তারা বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার হুমকি দিলে লজ্জায় বাড়িতে চলে যাই। কিন্তু ফেসবুকে এ ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেই।’
এ ব্যাপারে রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বশির উদ্দিন বলেছেন, ‘মাদ্রাসার কমিটি নিয়ে বিরোধের জের ধরে জামায়াত-শিবিরের লোকজন তার ওপরে এমন অমানবিক ঘটনা ঘটিয়েছে।’
বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) আব্দুল হক বলেন, ‘ফেসবুকে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজ দেখে ও প্রাথমিক তদন্তে বাদীকে লাঞ্ছনার প্রমাণ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি চাঁদাদাবি ও টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
এ ঘটনায় সঙ্গে জড়িত মিনজু ও বাদল নামে দুজনকে রবিবার (১৩ মে) দিবাগত রাতে বাকেরগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
গ্রেফতার হওয়া মিনজু (৪৫) বাকেরগঞ্জ উপজেলার ১২ নম্বর রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া গ্রামের মৃত মো. হাসেম মুসল্লীর ছেলে এবং দায়েরকৃত মামলার এজাহারভুক্ত ৫ নম্বর আসামি। অন্যদিকে বাদল (২৫) বাকেরগঞ্জ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নূর মোহাম্মদের ছেলে। বাদলকে ফেসবুকে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজ দেখে লাঞ্ছনাকারী হিসেবে গ্রেফতার করা হয়। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন ওসি (তদন্ত) আব্দুল হক।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন