মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩ দিনের ধর্মঘট
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিন দিনের ধর্মঘট আহ্বান করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের ব্যানারে আন্দোলনকারী শিক্ষকরা টানা অষ্টম দিনের মতো আমরণ অনশন অব্যাহত রেখেছেন।
আন্দোলনকারীদের প্রেস সচিব এনামুল হক বলেন, ‘জাতীয়করণের দাবিতে আমরা টানা ১৩ দিন ধরে খোলা আকাশের নিচে প্রচণ্ড শীতে দিন-রাত অতিবাহিত করছি। কিন্তু সরকারের দিক থেকে কোনো রকম সাড়া না পেয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছে এবং আমরণ অনশন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। একই দাবিতে রোববার সারা দেশে ধর্মঘট পালন করা হয়েছে। আর পুরো সপ্তাহজুড়ে ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে। কারণ আজকে সোমবার ধর্মঘট না থাকলেও পূজার জন্য বন্ধ আছে।’
শিক্ষকরা গত ১০ জানুয়ারি থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পরে গত ১৫ তারিখ একই স্থানে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করেছেন। এদিকে তীব্র শীতের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে টানা ১৩ দিন অতিবাহিত হতে চললেও সরকারের দিক থেকে কোনো রকম সাড়া মেলেনি বলে জানা গেছে।
সরেজমিন বেলা ১টার দিকে দেখা গেছে, জাতীয়করণের দাবিতে কয়েকশ শিক্ষক রাস্তায় বসে তাদের দাবির পক্ষে স্লোগান দিচ্ছেন। এদের মধ্যে ২০-২৫ জন মহিলা রয়েছেন। অনশন করায় ৯৮ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়েছেন। এদের মধ্যে সুনামগঞ্জের সালমা আক্তার ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের মামুনুর রশিদ গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)-এর সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার এমপি সংহতি প্রকাশ করেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষকরা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে জাতীয়করণ সংক্রান্ত ইতিবাচক বক্তব্য দিয়েছি। কিন্তু আমরা সুস্পষ্ট নীতিমালা ও সময়সীমা ঘোষণা করে শিক্ষকদের দাবি পূরণের আহ্বান জানাচ্ছি। সেই দাবির জন্য প্রেসক্লাবের সামনে অনশন অব্যাহত রাখবো, অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্মঘট পালন করা হবে।’
বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারি ফোরাম, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (নজরুল), বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (শাহ আলম-জসিম), জাতীয় শিক্ষক পরিষদ বাংলাদেশ, বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়ন সমন্বয়ে গঠিত ৬টি বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের ব্যানারে শিক্ষকরা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করছেন।
বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ লিয়াজোঁ কমিটির আহ্বায়ক মো. আব্দুল খালেক বলেন, এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকরা জাতীয়করণের দাবিতে সারা দেশের প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী এ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। দেশের ৯৭ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেসরকারিভাবে পরিচালিত হচ্ছে। তারা সেসব প্রতিষ্ঠান চালালেও নামেমাত্র বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। তা দিয়েই মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। অথচ ৩ শতাংশ সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা উচ্চমানের বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। এ কারণে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করতে হবে। এ দাবিতে আমরা রাজপথে নেমেছি।
এর আগে ৩১ ডিসেম্বর থেকে টানা ছয় দিন আমরণ অনশন চলাকালে প্রধানমন্ত্রী নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্ত করার আশ্বাস দিলে শিক্ষকরা অনশন প্রত্যাহার করেন। এর পর ৯ জানুয়ারি থেকে টানা আট দিন আমরণ অনশন শেষে ইবতেদায়ী মাদ্রাসাকে শিক্ষামন্ত্রী জাতীয়করণের প্রক্রিয়ার আশ্বাস দিলে তারাও অনশন প্রত্যাহার করে ফিরে যান।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন