মানিকগঞ্জের সিংগাইরে দুর্নীতির শীর্ষে এটিইও ফারুক হোসেন

আবারো আলোচনায় দুর্নীতির শীর্ষে থাকা মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার (এটিইও) মো. ফারুক হোসেন। তার বিরুদ্ধে এবার স্কুলের নামে বরাদ্দকৃত স্লিপ ফান্ডের টাকায় ভাগ বসানোর অভিযোগ ওঠেছে । এ নিয়ে শিক্ষকরা মুখ খুলতে না পারায় তাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।

এর আগে এটিইও ফারুকের বিরুদ্ধে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন ক্রয়ে ব্যাপক দুর্নীতি, ২০১৯-২০ অর্থবছরে স্লিপের টাকায় কেনাকাটা নিয়ে অনিয়ম, বিনামূল্যের বই বিতরণে টাকা হাতিয়ে নেয়া ও শিক্ষক বদলিতে তার বিরুদ্ধে জনৈক সহকারী শিক্ষক বাদী হয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর অনিয়ম- দুর্নীতির লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

এ নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশিত হয়। উপজেলা প্রশাসন থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হলেও তদন্ত রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি।

এটিইও ফারুক হোসেন আবারো স্লিপ ফান্ডের টাকায় ভাগ বসানোর কথা জানাজানি হলে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে তিনি বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরা তার এ অনিয়ম- দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন।

শিক্ষা অফিস ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মোট ৯৭ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। পুরো এলাকাকে ৪ টি ক্লাস্টারে ভাগ করে বলধারা ও জামশা ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ২১ টি স্কুল নিয়ে গোলাইডাঙ্গা ক্লাস্টারের দায়িত্ব দেয়া হয় এটিইও ফারুক হোসেনকে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ওই স্কুলগুলোর নামে স্লিপ ফান্ডের টাকা জুনের মধ্যেই ছাড় দেয়া হয়।

চলতি মাসের শুরুতে বস হওয়ার সুবাদে স্কুলের প্রধানদের কাছ থেকে বরাদ্দকৃত ওই টাকার বিপরীতে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা করে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেন ফারুক । বিষয়টি প্রকাশ পেলে শিক্ষা অফিসসহ উপজেলার বিভিন্ন স্কুলে কর্মরত শিক্ষকদের মধ্যে চলছে নানা গুঞ্জন। ভুক্তভোগীদের মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক এর সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমরা তো শিক্ষক,স্যারদের বিরুদ্ধে অনেক সময় বলা যায় না। মুখ বুঝে সহ্য করতে হয়।

চাকুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মমতা রানী সরকার বলেন,আমার স্কুলে ১৫৫ জন শিক্ষার্থী। স্লিপ ফান্ডের ৫০ হাজার টাকা পেয়েছিলাম। প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। জৈল্লা সরকরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোশারফ হোসেন বলেন,১৫% ভ্যাট- ট্যাক্সের ৯ হাজার ১০০ টাকা আগেই জমা দিতে হয়। পরে ৭০ হাজার টাকা পেয়েছি।

গোলাইডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাঁশীনাথ মন্ডল বলেন, আমার ৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। অভিযুক্ত এটিইও ফারুক হোসেন বলেন, স্লিপের টাকা ধরার কোনো সুযোগ নেই। এটা সরাসরি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়। এর আগে ও আপনারা আমার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেছেন। বুঝতে পারেন তো কারো কোনো স্বার্থে আঘাত লাগলে মিথ্যা অভিযোগ দেয়া স্বাভাবিক ন্যাচার আমাদের।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার সুলতানা আছমা খান বলেন,বিষয়টি আমার জানা নেই। এটা তো বাইরের অনুদান যাকাতের টাকা, শিক্ষার্থীদের পেছনে খরচ না করে শিক্ষকরাই কেন দিলেন? আমি খোঁজ- খবর নিয়ে ওই অফিসারকে কৈফিয়ত তলব করব।

এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পলাশ কুমার বসু বলেন, আমার কাছে যে কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত প্রতিবেদন দিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।