মানিকগঞ্জের সিংগাইরে মজির উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার চাপরাইল মজির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক —কর্মচারী নিয়োগে অর্থ বানিজ্যের অভিযোগ ওঠেছে । এ নিয়ে নিয়োগ বঞ্চিত ও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

জানাগেছে, ওই বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক, একজন নৈশ প্রহরী ও আয়া নিয়োগের জন্য একটি জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেই অনুযায়ী গত ২৫ মে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে ১৫ জন প্রার্থী আবেদন করেন। আবেদনকারী মো.বাদল মিয়া, মো. শহিদুল ইসলাম ও মুজিবুর রহমান পরীক্ষায় অংশ নেন। এদের মধ্যে বাদল মিয়া ওই স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। ,সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে প্রধান শিক্ষক মো. আব্বাস উদ্দিন ও ম্যানেজিং কমিটির কতিপয় সদস্য তার কাছ ৩ লাখ টাকা চুক্তিতে নগদ ২ লাখ টাকা অগ্রিম হাতিয়ে নেন । বাকি এক লাখ টাকা নিয়োগপত্র হাতে পাওয়ার পর দেয়ার কথা হয়। অপরদিকে আয়া পদে ৩ জন ও নৈশপ্রহরী পদে ৩ জন পরীক্ষায় অংশ নেন। তাদের কাছ থেকেও নেয়া হয় মোটা অংকের টাকা।

সূত্র মতে, সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে মো. শহিদুল ইসলাম, নৈশপ্রহরী ও আয়া পদে জাহিদুল ইসলাম ও রাবেয়া খাতুনকে নিয়োগের জন্য চুড়ান্ত করা হয়। সূত্র আরো জানায়, সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে চুড়ান্ত প্রার্থীর কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা নেয়া হয়। এদিকে, প্রার্থী বাদল মিয়ার কাছ থেকে অগ্রিম নেয়া ২ লাখ টাকা তাকে ফেরত দেয়া হয়। যে কারণে শিক্ষক নিয়োগে অর্থ লেনদেনের বিষয়টি প্রকাশ পায়। বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদকের কাছে অর্থ লেনদেনের কথা স্বীকার করেন। অপরদিকে, নৈশপ্রহরী ও আয়া পদে নিয়োগেও অনুরুপ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানান, ওই স্কুলে শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে এক প্রকার জুয়া খেলা হয়েছে। পরীক্ষায় অংশ নেয়া একাধিক প্রার্থীর কাছ থেকে নেয়া হয়েছিল মোটা অংকের টাকা। নিয়োগপ্রাপ্তদের অর্থ বৈধ করতে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণকারী বাদ পড়া অন্য প্রার্থীদের টাকা ফেরত দেয়া হয়। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। বঞ্চিতদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

ভুক্তভোগী ওই স্কুলে কর্মরত সহকারী শিক্ষক মো. বাদল মিয়া বলেন, আমি সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়ার জন্য ৩ লাখ টাকা চুক্তিতে নগদ ২ লাখ টাকা দেই। বাকি টাকা নিয়োগ চূড়ান্ত হওয়ার পর দেয়ার কথা । তবে নিয়োগ না পাওয়ায় তার টাকা ফেরত পেয়েছেন বলেও তিনি জানান। অপর দিকে, নৈশ প্রহরী পদে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণকারী রাজ সজিব চৌধুরীর কাছ থেকে প্রধান শিক্ষকের নেয়া এক লাখ ফেরত পাননি বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার টাকা ফেরত দেয়ার কথা হয়েছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মো. আব্বাস উদ্দিন বলেন, নিয়োগ বিধি মেনেই স্বচ্ছতার সাথে পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। টাকা—পয়সা লেনদেনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এ প্রসঙ্গে চাপরাইল মজির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. সফি উদ্দিন আহমেদ (টুক্কু মিয়া) বলেন, বিধি মোতাবেক নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। লেনদেন সম্পর্কিত কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এবিএম আঃ হান্নান বলেন, শতভাগ ফেয়ার নিয়োগ হয়েছে। যদি কেউ টাকা নিয়ে থাকে, সেটা আমার জানা নেই।