মানিকগঞ্জের সিংগাইরে মিজান মেম্বারের ডিগবাজি ও ক্ষমতার দাপটে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার ধল্লা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা মিজানুর রহমানের (মিজান মেম্বার) বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবত একের পর এক নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে এলাকার লোকজন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছে। কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তোপের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর লেবাস পাল্টিয়ে ডিগবাজি দিয়ে মিজান মেম্বার স্থানীয় বিএনপি’র লোকজনের সঙ্গে মিশে হামলা ভাঙ্চুরের ঘটনা ঘটিয়ে আবারও তিনি ক্ষমতার জানান দিচ্ছেন। এ নিয়ে বিএনপি’র কর্মী -সমর্থক ও স্থানীয়দের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।

জানা গেছে, মানিকগঞ্জ- ২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও কন্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমের উকিল মেয়ে জেলা যুব মহিলালীগের সদস্য সচিব সালেহা জাহানের ছোট ভাই এ মিজানুর রহমান। তিনি উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড মেম্বার ও ধল্লা গান্ধারদিয়া গ্রামের মৃত গাদুর ছেলে। বড় বোন সালেহা জাহানএবং নেত্রী মমতাজের আশীর্বাদে মিজান মেম্বার ধল্লা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক পদ বাগিয়ে নেনমোস্তাফিজ। চলতে থাকে ক্ষমতার দাপট। একের পর এক অপকর্ম করে ও পার পেয়ে যাচ্ছেন তিনি।

এদিকে, মিজান মেম্বারের গাঁয়ে আওয়ামীলীগের তকমা থাকা সত্ত্বেও গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর লেবাস পাল্টিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। বিএনপি’র কর্মী সমর্থকদের হাতে বাস্তা বাসস্টান্ডে মারধরের শিকার হন তিনি। তারপরেও বিএনপির কিছু লোকের সাথে মিশে ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটাতে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের ওপর দমন- পীড়নে মাঠে নামে সে।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের দিন রাতে ধল্লা বাজারে অবস্থিত ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খাঁনের মালিকানাধীন পল্লী উন্নয়ন সংস্থার অফিসে লুটপাটসহ অগ্নি সংযোগ করে মিজান মেম্বার ও তার লোকজন। পরের দিন ৬ আগস্ট সন্ধ্যার দিকে ধল্লা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম ভূইয়ার ব্যক্তিগত অফিসে দুষ্কৃতিকারীদের নিয়ে হামলা করে ভাঙচুরসহ লুটপাট চালায় মিজান মেম্বার।

এ ছাড়া বিএনপি’র কর্মী সমর্থকদের শেল্টার নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ত্রাসেের রাজত্ব কায়েম করছে সে। ফলে,সেবাগ্রহীতারা পরিষদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ইতিপূর্বে মিজান মেম্বার ও তার বড় বোন সালেহা জাহানের নানা অপকর্ম নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদের জের ধরে মিজান মেম্বার ভোরের কাগজ পত্রিকার স্থানীয় সাংবাদিক মাসুম বাদশাহকে হুমকি দেয়।

ভুক্তভোগী সংবাদকর্মী থানায় জিডি করলে পুলিশ তদন্ত করে আদালতে প্রসিকিউশন রিপোর্ট দাখিল করেন। সেই সঙ্গে অভিযুক্ত মিজান মেম্বারকে ব্যাখা তলব করে উপজেলা প্রশাসন এবং তার বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রকাশ।
এদিকে,ছাত্র- জনতার তোপের মুখে শেখ হাসিনার পতনের পর মিজান মেম্বারের খোলস পাল্টানো ও ডিগবাজির বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার ঝড় ওঠে।

ধল্লার বাস্তা গ্রামের বাসিন্দা মো: রমজান আলী তার ফেসবুক আইডি “Ramjan Ali” থেকে লেখেন- একটা রানিং আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রঙ মাখিয়ে সেজে কিভাবে বিএনপি করতে আসে সেটা আমার বোধগম্য নয়। সে আবার সাবেক এমপির পালক ছেলে রানিং মেম্বার। বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কি করে বিএনপি’র লোকজন তাকে মাথায় করে নাচে।

যারা বিএনপি করেন এসব আওয়ামী লীগের দালাল থেকে সাবধান থাকবেন। এই নাকি খুব শক্তিশালী আওয়ামী-বিএনপি। ”

রমজান আলীর এমন স্ট্যাটাস নেট দুনিয়া সমালোচনার ঝড় ওঠে।কেউ কেউ লেখেন- মিজান মেম্বার আওয়ামী লীগের দালাল, সে আওয়ামীলীগ খাইছে এখন সুযোগ বুঝে বিএনপিতে ঢুকে বিএনপিকেও খাওয়ার চেষ্টা করছে। তৃণমূল নেতাকর্মীরা এ পল্টিবাজ থেকে সকলকে দূরে থাকার আহ্বান জানান।

এদিকে,স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা জানান, মিজান মেম্বার বিএনপিতে ঢুকে তার ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া ধল্লা ইউনিয়নে বিএনপি ও আওয়ামীলীগের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টির পায়তারা করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে মিজান মেম্বার ধল্লা বাজারে মিনারা নামের এক নারীকে মারধর করে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে।

ভুক্তভোগী ওই নারী থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ ঘটনা সত্যতা যাচাইয়ে ওই এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেন। পরে সাবেক এমপি মমতাজ বেগমের ছেলে পরিচয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা পড়ে। মিজান মেম্বারের এহেন কর্মকাণ্ডে এলাকার সাধারণ মানুষ ও সংবাদকর্মীরা ক্ষুব্ধ। তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

অভিযুক্ত মো: মিজানুর রহমান মেম্বার বলেন,আপনারা যা শুনেছেন সবই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কিছু মানুষ আমার পেছনে লাগায় আমি সবকিছু বাদ দিয়েছি।

এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি আবিদুর রহমান খাঁন রোমান বলেন,আমরা জানি আওয়ামীলীগ থেকে কিছু সুযোগ সন্ধানী বিএনপির সঙ্গে মিশে অকারেন্স করার চেষ্টা করছে। দলের সবাইকে সতর্ক করে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেউ যেন আওয়ামীলীগ থেকে এসে বিএনপিতে ঢুকতে না পারে। যদি কেউ এর সাথে জড়িত থাকে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।