কলারোয়ায় জনসভা

মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটানোই বিএনপির রাজনীতি : তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘বিএনপির রাজনীতি উৎপাদন ও উন্নয়নের রাজনীতি। বিএনপি উন্নয়ন ও উৎপাদনশীল দেশ গড়তে চাই। বাংলাদেশের মানুষ বিভিন্নভাবে অত্যাচারিত হয়েছে, কলারোয়ার মানুুষ, সাতক্ষীরার মানুষ তার স্বাক্ষী। দীর্ঘ ১৫ বছর পরে জনগণ এই স্বৈরাচারকে বিদায় করেছে, স্বৈরাচারকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। মানুষ অত্যাচারিত নির্যাতিত হয়েছে। বিএনপির লক্ষ্য মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশকে গড়ে তোলা। বিএনপি জনগণের সমর্থন নিয়ে যতবার দেশ পরিচালান করার সুেেযাগ পেয়েছে ততবার দেশের মানুষের জীবনের উন্নয়ন করার জন্য, দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করেছে। আমরা প্রত্যেকটি এলাকার সম্ভাবনাকে বের করে আনতে চাই, সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চাই, সেটা মানুষের জন্য, দেশের উন্নয়নের জন্য। বাংলাদেশের জনগণের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে মানুষের ভাগোন্নয়ন সম্ভব। মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন, ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটানোই বিএনপির রাজনীতি।’

রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সাতক্ষীরার কলারোয়া ফুটবল মাঠে আয়োজিত এক জনসভায় ভার্সুচায়ী প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

প্রায় ২৪ মিনিটের বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, ‘আমি ছয় হাজার মাইল দূরে আছি বাংলাদেশ থেকে। কিন্তু আমার হৃদয়, আমার মনটা পড়ে থাকে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায়।’

কলারোয়ার এই জনসভা ছিলো বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের রাজধানীর বাইরে দেশের প্রথম জনসভা।

শেখ হাসিনার গাড়িবহর হামলা মামলায় সদ্য কারামুক্ত প্রায় অর্ধশত নেতাদের গণসংবর্ধনা উপলক্ষ্যে আয়োজিত ওই জনসভায় সভাপতিত্ব করেন সদ্য কারামুক্ত সাবেক সাংসদ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব।

জনসভায় বিএনপির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, খুলনা বিভাগীয় সহ.সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, রংপুর বিভাগীয় সহ.সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক মন্ডল, বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রেস উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুর ইসলাম, কাজী আলাউদ্দীন ও ডা.শহীদুল আলম, অ্যাড. শাহানারা আক্তার বকুল, কলারোয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র গাজী আক্তারুল ইসলাম সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক তারিকুল হাসান, আইনুল ইসলাম নান্টাসহ জেলা ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশ পরিচালনা করেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রকিব মোল্যা, যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল কাদের বাচ্চু ও সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ তামিম আজাদ মেরিন।
এর আগে কারামুক্ত প্রায় ৪০জন নেতাকে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করেন নেতাকর্মীরা। কারাগারে থাকা অবস্থায় মারা যাওয়া ৪জনের পরিবারকেও অশ্রুসজল সংবর্ধনা দেয়া হয়।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রত্যেকটি অঞ্চলে তার নিজস্ব সম্ভাবনা আছে। বিএনপি চাই প্রত্যকটি অঞ্চলে যে সম্ভাবনা আছে সেই সম্ভাবনাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে আসা। সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দেশের মানুষের জীবন জীবিকার উন্নয়ন করা। দেশেকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আমরা চাই প্রত্যেকটি এলাকার উন্নয়ন হোক, প্রত্যেকটি এলাকার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে জীবন উন্নয়ন করা।’

তিনি আরো বলেন, ‘আপনাদের সন্তান হাবিব অতীতে এই এলাকার মানুষের জন্য কাজ করেছেন, এখানে উপস্থিত মানুষ হাত তুলে সমর্থন জানিয়েছেন।’

বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, ‘সাতক্ষীরা-কলারোয়া অঞ্চলে সুস্বাদু ন্যাংড়া আম উৎপাদন হয়। আম যদি সংরক্ষণ করা যায় তবে আমের কৃষক উপকার পাবে, তেমনি হিমাগার করতে পেরে ব্যবসায়ীরা দেশ-বিদেশে রপ্তানি করে ব্যবসা করতে পারবে। আম থেকে আমের রস বা জুস তৈরির কলকারখানা স্থাপন করা সম্ভব হবে। বহু বেকার যুবকের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। আমের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আমের তৈরি চাটনি বা আচার তৈরির কলকারখানার ব্যবস্থা করতে পারলে মা-বোনেরাও কাজ করতে পারবে, তারাও সাবলম্বী বা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে। এটাই হলো বিএনপির রাজনীতি। এই এলাকার আরো একটি বৈশিষ্ট আছে মাটির তৈরি টালি, এই টালি বিদেশিরা তাদের ঘরের উপরে ব্যবহার করে। এই এলাকার মানুষ শ্রম-মেধা দিয়ে টালি শিল্প গড়ে তুলেছে। বিএনপি চাই এই শিল্পকে কাজে লাগাতে, মানুষের শ্রম দিয়ে এলাকার উন্নয়ন ঘটাতে। একই সাথে দেশের উন্নয়ন করতে। যে সকল মানুষ মা-বোনেরা টালি উৎপাদনের সাথে জড়িত, আমরা যদি তাদের সহযোগিতা করি, সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা পায় তাহলে এই মানুষগুলো সুবিধা বা উপকার পাবে, টালি শিল্পকে আমরা ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করাতে পারবো।’
তিনি আরো বলেন, ‘আপনাদের পাশেই আছে মুন্সিগঞ্জ, সেখানে রিসোর্ট তৈরি হয়েছে পর্যটকদের জন্য। যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য সেই ব্যবসার সাথে জড়িতরা উপকার পাচ্ছে না। আমরা সুযোগ পেলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করে রিসোর্ট ব্যবসার উন্নয়ন সাধন করবো। এই অঞ্চলে চিংড়ি বা মাছের ঘের আছে। সেখানকার বেঁড়িবাঁধ বহু আগের, সেগুলো মজবুত করতে হবে। ঘেরের মাছ যাতে ধংস না হয়ে যায়। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সুন্দরবনকে কাজে লাগাতে হবে অর্থনৈতিক উন্নয়নে, ভাগ্য পরিবর্তনের চাকা হিসেবে। সুন্দরবনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে দেশের মানুষ সুফল পেতে পারে, বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘সম্ভাবনা, বেকারদের কর্মসংস্থান তখনই বাস্তবায়ন করা সম্ভাব যখন নির্বাচিত একটি সরকার দেশ পরিচালনা করবে, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা পাবে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘খালেদা জিয়ার সরকার দেশের মা-বোনদের বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলো। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়ার সরকার জনগণের সরকার ছিলো। সেসময় কৃষকের সেচ সুবিধার জন্য সারাদেশে খাল খনন করেছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা ও শুষ্ক মৌসুমের পানি সংরক্ষণের জন্য, কৃষকরা যেনো সেচ সুবিধা পায় সেজন্য খাল খনন কর্মসুচি আবার শুরু করবো ইনশাল্লাহ। জনগণের জন্য, এলাকার মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে হবে। দেশের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে জনগণের সরকার দরকার।

তিনি বলেন, ‘শত শত মানুষ জীবন দিয়েছে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। লক্ষ লক্ষ মানুষ গুম খুন ও গায়েবি মামালা শিকার হয়েছেন। তবে স্বৈরাচার পতন হলেও কাঙ্খিত লক্ষ্য এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যতদিন জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা না হবে ততদিন বিএনপির আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। যতদিন জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত না হবে হবে, যতদিন জনগণের প্রতিনিধি কাজ করার সুযোগ না পাবে ততদিন আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘স্বরযন্ত্র এখনো শেষ হয়নি। সজাগ থাকতে হবে। কিছু রাজনৈতিক দল প্রতিবেশি দেশের ফাঁদে পা দিয়ে কিছু বিভ্রান্তির কথা ছড়াচ্ছে। মানুষের প্রতি আহবান জানাই আমাদের সজাগ থাকতে হবে। ভিতরে বাইরের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হবে। দেশের জনতা ২০২৪ সালে পৃথিবীর অন্যতম স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে। স্বৈরাচারকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে। সকল ষড়যন্ত্রের বিষ দাত ভেঙ্গে জনগণের সাথে নিয়ে হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করবো, ততক্ষণ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

সভাপতির বক্তব্যে সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এই মাঠে ৭ বার বক্তব্য রেখেছেন। সেই মাঠ থেকে তারেক রহমানকে রাষ্ট্রনায়ক ঘোষণা করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার নেত্রী খালেদা জিয়া পালিয়ে যায়নি, পালিয়েছে স্বেরাচার হাসিনা। আমার আমেরিকা ও কানাডার ভিসা ছিলো কিন্তু আমি যায়নি। আমার নেত্রী জেল খাটবে আর আমি পালিয়ে যাবো সেটা তো হতে পারে না। যারা ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হয়েছে সেই আবু সাঈদ, আসিফ, মুগ্ধসহ সকল শহীদদের হত্যার প্রধান আসামি শেখ হাসিনা। তার ফাঁসি চাই।’

এদিকে, এর আগে আলোচিত শেখ হাসিনার গাড়িবহর হামলা মামলার ৭০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব ও বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত নেতারা ৪ বছর কারাভোগ শেষে নিজ এলাকা সাতক্ষীরার কলারোয়া আসেন।