মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে শোধ হবে জাতির পিতার রক্তের ঋণ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জাতির পিতা রক্ত দিয়ে গিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, দেশের প্রয়োজনে তিনি রক্ত দেবেন। তিনি ঠিকই রক্ত দিয়েছিলেন। তার সেই রক্তের ঋণ আমাদের শোধ করতে হবে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের মাধ্যমে।’
রাজধানীর ধানমন্ডিতে বৃহস্পতিবার জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে কৃষক লীগ আয়োজিত রক্তদান, বৃক্ষরোপণ ও আলোচনা সভায় মোবাইল ফোনে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন লন্ডনে সফররত প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘ধানমন্ডি এলাকায় লেক কাটার পরে সব গাছ তিনি নিজে পছন্দ করে লাগিয়েছিলেন। তার যে প্রকৃতি প্রেম-ভালোবাসা, দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা এবং পরিবেশ রক্ষা করার যে প্রচেষ্টা সেটা আমরা সব সময় স্মরণ করি। আজকের এ দিনে শুধু রক্তদান কর্মসূচি নয়, তার সঙ্গে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিও ঘোষণা করছি। এ কারণে যে আমাদের বাংলাদেশটা রক্ষা করতে হবে জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ যেহেতু একটি বদ্বীপ, তাই আমরা প্রতিনিয়তই প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হই। এ যুদ্ধ থেকে বাঁচানোর জন্য বাংলাদেশকে আরও ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণ করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে এটা অর্থকরীও বটে। মানুষ, পরিবার যে বৃক্ষরোপণ করে সেখান থেকে নানা ফলমূল হয়। তা নিজেরা যেমন খেতে পারে, বিক্রি করেও পয়সা পায়। যে কাঠ হয় সেটাও তারা বিক্রি করতে পারে। ভেষজ গাছ লাগালে সেটা আমাদের আয়ুর্বেদিক ওষুধের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রতি বছর বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হয়। ১৯৮৪-৮৫ সাল থেকে আমরা এটা প্রতি বছর পালন করে আসছি। আজকে জাতির পিতার উদ্দেশে বাংলাদেশের পরিবেশ রক্ষা, মানুষের জীবন মান উন্নত করার লক্ষ্যে আমরা এ উদ্যোগটা গ্রহণ করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৫ আগস্ট উপলক্ষে আমরা নিয়মিত রক্তদান কর্মসূচি পালন করে থাকি। আপনার রক্ত একজন মানুষের জীবন বাঁচাতে সহযোগিতা করে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রক্ত দিলে, রক্ত কমে না। রক্ত বাড়ে। একজন মুমূর্ষু রোগীর জীবন রক্ষা হয়। এ জীবন রক্ষার জন্য একটু ত্যাগ স্বীকার যে কোনো মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা মানবতার জন্য দরকার।’
তিনি বলেন, ‘ইদানীং আমাদের দেশে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেটা হলো ডেঙ্গুর প্রভাব। সেই ডেঙ্গুর প্রভাবমুক্ত করার জন্য আমি কতগুলো নির্দেশনা দিয়েছি। আমি মনে করি আমাদের পার্টির প্রত্যেকটা মানুষ সেটা মেনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে মশার বংশবিস্তার যাতে না হতে পারে সে জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। নিজেকে সুরক্ষিত রাখা, পরিবারকে সুরক্ষিত রাখা। নিজের ঘরবাড়ি সব কিছুকে সুরক্ষিত করা হয়। সে জন্য সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমরা সব দিকে দৃষ্টি দিয়েছি, তৃণমূল পর্যন্ত মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছি। তাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ার সুযোগ করে দিচ্ছি, উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দিয়েছি। গবেষণার সুযোগ করে দিয়েছি। আমরা খাদ্য নিরাপত্তা দিয়েছি এবং পুষ্টির জন্য আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। বাংলাদেশ সার্বিকভাবে আজকে এগিয়ে যাচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সহযোগী সংগঠনের সব নেতাকর্মী যারা মুজিব আদর্শে বিশ্বাসী, আমি তাদের এ আহ্বান জানাব তারা যেন আর্তমানবতার সেবা করে, মানুষের জন্য আত্মত্যাগ করে। এর থেকে যে তৃপ্তি পাওয়া যায়, আনন্দ পাওয়া যায় তা আর কিছুতে পাওয়া যায় না। মহৎ আদর্শের জন্য মহান ত্যাগের প্রয়োজন বলেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘অন্তত পক্ষে একজন তিনটা করে বৃক্ষরোপন করবেন। একটি বনজ, একটি ভেষজ ও একটি ফলজ বৃক্ষ। এর থেকে যত বেশি পারেন, আপনারা সকলে গাছ লাগান। উপকূলীয় অঞ্চলের জ্বলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সবুজ বেষ্টনী আমাদের একান্তভাবে দরকার। সেই অঞ্চলে যারা বসবাস করেন, আপনাদেরও ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ করা দরকার। সেই সাথে আমরা আমাদের পরিবেশ যেন রক্ষা করতে পারি।’
লন্ডনে সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমি খুব শিগগিরই দেশে ফিরে আসব। এখানে আমরা ৩ তারিখে জাতীয় শোক দিবস পালন করতে যাচ্ছি প্রবাসী বাঙালিদের নিয়ে।’
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী প্রমুখ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন