মানুষের মনে জ্বালা ধরিয়েছে…

একসময় মানুষ কাজকর্ম করেছে ঠিকই তবে তাতে ছিলো বেশি কষ্ট শান্তিশৃঙ্খলা কম ছিলো সময় বৃদ্ধি—কিন্তু সবকিছুই ছিলো আমাদের জন্য। রাষ্ট্রীয় সরকারী বেসরকারি অফিসের সকল কাজকর্ম করতে হয়েছে কাগজে কলমে। সেসময় বাস্তবিক পক্ষে এই পথচলায়ই ছিলো আমাদের প্রধান। সামাজিকভাবে যতো পেশা রয়েছে—তারমধ্যে ব্যাংকিং সেবা, সকল প্রকার ভূমিসেবা, বিআরটিএসহ বিভিন্ন কাজকর্ম সবকিছুই হাতে কলমে করতে হয়েছে আমাদের। যাতে করে বহু কষ্ট সময় কালক্ষেপণ শান্তিশৃঙ্খলা সবই যেনো হারিয়েছি তখন বা বলতে পারি অ্যানালগের সময়।

কিন্তু দিন গেছে আর ডিজিটাল দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে চলে আসা সরকারের চলমান উন্নয়ন প্রযুক্তির অবাককরা কার্যক্রমে আজ আমরা খুশি ও আনন্দিত। আর ইন্টারনেট হলো প্রযুক্তির প্রধান মাধ্যম। ইন্টারনেট এমন একটা মাধ্যম যে মাধ্যম দিয়ে মানুষের ভেতরে বাইরে সকল ধরনের কাজ আমরা হাসিল করছি। ডিজিটাল দেশ হিসেবে এমন কার্যক্রমই কিন্তু প্রাপ্য। এখন ইন্টারনেট বিরাট এক অধ্যায় হয়ে এসেছে আমাদের জীবনে। যেসময় আমরা ডাক অফিসে চিঠি পোস্ট করেছি প্রিয়জন পারিবারিক ব্যবসাবাণিজ্যসহ দূরদূরান্তর সকল কাজই ছিলো সময়ক্ষেপণ আর কষ্টের আনাগোনা। প্রয়োজনমতো ইচ্ছা বা কাজ কোনোটাই সঠিকভাবে করা দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল আমাদের সাথে অ্যানালগ।

এমনকি দূরদূরান্ত থেকে যদি কারো সাথে প্রয়োজন হয়েছে—তবুও ডাক অফিসে চিঠি পোস্টের মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন করেছি আমরা। এমনকি ডাকঅফিসের চিঠি বিলির কার্যক্রমও পুরেপুরি বন্ধ। তবে শুধু একটা কথাই আমরা বলতে পারি—অ্যানালগের যুগে আমরা আর ফিরে যেতে চাই না। যার প্রধান কারণ ডিজিটাল কার্যক্রমের অন্তরায় জীবনের সাথে আজ মিশেছে আমাদের রক্তে চলমান ইন্টারনেট। যা মেশার কোনো বিকল্পও নেই। আর থাকারও কথা নয়। কারণ আমাদের সমাজে মানুষের সকল কাজ এখন ইন্টারনেটভিত্তিক হয়ে গেছে। কিই বা হচ্ছে না ইন্টারনেটে। মানুষের কোন্ চাহিদাই বা বাদ রয়েছে।

অফিসিয়াল সকল কার্যক্রম এখন ইন্টারনেটে আবদ্ধ। দেশে বিদেশে চিঠি লেখা দেখা কথা বলা লেখাপড়ায়ও সিংহভাগ আবদ্ধ ইন্টারনেটে। এককথা বলতে গেলে বলা যায়ই, মানুষের রক্তে যেমন ঢুকেছে ইন্টারনেট তেমনী নেট ছাড়া দেশ জাতি সবই অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। যার চাক্ষুস প্রমাণ আমরা নতুন করে পেলাম কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। গত ১৬ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় আমরা বুঝেছি ইন্টারনেট ছাড়া আমরা প্রতিবন্ধি অচল। গত এক সপ্তাহ ধরে ইন্টারনেট সেবা চালু না থাকায় আমরা দেখেছি মানুষের আকুতিমিনতি—আর সময় না কাটার অসহ্যতা। শুধু তাই নয় কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সামনে রেখে দেশে কারফিউ জারি মানুষকে আরও স্তব্ধ করে রেখেছে। পুনরায় সুনসান চালু হলেও আতঙ্কটা রয়ে গেছে।

এদিকে, ব্যক্তিগত এবং প্রয়োজন মেটাতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কথা বলতে না পারাটা যে মানুষের মনে কতটা জ¦ালা ধরিয়েছে যা আমরা জানি। চারিদিকে শুধু ইন্টারনেট না পাওয়ার আহাজারি মানুষের। কবে আসবে ইন্টারনেট। কিছুই দেখতে পাচ্ছি না দেশের খবর। মিটছে না প্রতিনিয়ত প্রাপ্য কাজের। অবশ্য আমরা একটু বেশি আবেগি হয়ে গেছি—যার কারণে খবর দেখার প্রধান মাধ্যম যে টিভি চ্যানেল তাও কিন্তু অবচেতনে হারিয়ে ফেলছি। তারমানে ইন্টারনেট আমাদেরকে ভুললেও ইন্টারনেটকে ভোলার উপায় নেই আমাদের। অবশ্য এরএকটা ছোট্ট কারণও রয়েছে যেটা হচ্ছে বিনোদন। মোবাইল এমন একটা যন্ত্র যে যন্ত্রের মাধ্যমে দেশ বিদেশে সকল খবর জানতে পারি এবং বিভিন্ন বিনোদনমূলক অনেককিছুই। এককথায় বলতে গেলে আমাদের সকল প্রয়োজন মেটাতে ইন্টারনেট ছাড়া কোনো উপায় নেই। তবে বর্তমানে টিকটক ফেসবুকের প্রতি বিরাট আকারের প্রেম তৈরী হয়েছে আমাদের। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর আমরা প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ইন্টারনেট বন্ধ পেয়েছি।

এদিকে, গত ১৭ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত মিডিয়া অফিসের জন্যও খোলা হয়নি ইন্টারনেট। তবুও আমাদের পেশা তো মানুষের হাতে খবরের কাগজ পেঁৗছানো। এটা আমাদের কঠোর দায়িত্ব। কিন্তু এই দুঃসময়ে কিভাবে বের করতে পারবো খবরের কাগজ। পাঠকও উদ্গি্রব হয়ে আছে। তাই রাষ্ট্রীয় ঝামেলায় ফিরে যেতে হলো সেই অ্যানালগ সমাজে। কষ্ট হলেও মনকে মানিয়ে নিতে বাধ্য হই। ডিজিটাল প্রযুক্তির ইন্টারনেট হার্টফেল করায় বিদ্যুৎ থাকলেও খবরের কাগজ ছাপাতে বিরাট বেগ পেতে হচ্ছে গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে আমাদের। তাই ইন্টারনেট ছাড়া হাজারো কষ্ট নিয়ে এক সপ্তাহ খবরের কাগজ বের করতে হয়েছে সম্পূর্ণ অ্যানালগ সিস্টেমে।

তাহলে পাঠক আপনারা উপলব্ধি করতে পারবেন—অ্যানালগ আর ডিজিটালের তারতম্য এখন কতটুকু। আর সে কারণে ইন্টারনেট ছাড়া পুরো জাতি অচল হয়ে পড়বো। তাই আমরা স্বানন্দে সরকারের কাছে অনুরোধ করবো—দেশকে শান্ত রাখতে ও ইন্টারনেট যাতে বন্ধ না হয় তার যথাযথ ব্যবস্থা সরকার করবেন।