মানুষ বিষয়ে নতুন তথ্য পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা

নতুন গবেষণায় প্রমাণ পেয়েছে যে বিলুপ্ত মানব প্রজাতি নিয়ানথার্ডালের মস্তিষ্কের বিকাশ আধুনিক মানুষের মস্তিষ্কের বিকাশের চেয়ে ধীরগতিতে হয়েছিল। নিয়ানথার্ডাল শিশুর মাথার খুলি ও আধুনিক শিশুর মাথার খুলির তুলনামূলক পর্যালোচনা করে বিজ্ঞানীরা এমন সিদ্ধান্তে এসেছেন। সায়েন্স জার্নালে গবেষণাটি এরইমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।

এতদিন এই ধারণা ছিল আমরাই আধুনিক মানুষের এমন প্রজাতি যাদের মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে গঠিত হয়েছিল। নিয়ানথার্ডাল বিষয়ে এ গবেষণা এতদিনের প্রচলিত ধারণাকে ভেঙে দিয়েছে।

৪৯ হাজার বছর আগে মারা যাওয়া প্রায় সাড়ে ৭ বছর বয়সী এক নিয়ান্ডারথাল বালকের কঙ্কাল পরীক্ষা করে স্পেনের বিজ্ঞানীরা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছান বলে জানিয়েছে বিবিসি। উত্তর স্পেনের এল সিদরান সাইট থেকে কঙ্কালটি নেওয়া হয়েছিল। পরীক্ষার সময়ও সেটি বেশ ভালো অবস্থায় ছিল বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন।

কঙ্কালের মুখের ভেতর ছিল শিশুকালীন ও পূর্ণাঙ্গ বয়সের দাঁতের মিশ্রণ; এ কারণে বয়স নির্ধারণে সুবিধা হয়েছে বলে জার্নাল সায়েন্সে প্রকাশিত নিবন্ধে বলেন বিজ্ঞানীরা।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তারা দেখেন, ওই বয়সে নিয়ান্ডারথাল শিশুটির মস্তিষ্ক তখনকার পূর্ণাঙ্গ মানুষের তুলনায় ৮৭ দশমিক ৫ শতাংশ গঠিত হয়েছে। অথচ একই বয়সী আধুনিক মানব (হোমো স্যাপিয়েন্স) শিশু স্বাভাবিক মানুষের মস্তিষ্কের ৯৫ শতাংশ ধারণ করতে পারে।

আগের গবেষণাগুলোতে এর উল্টো ফল মিলেছিল; সে অনুযায়ী, নিয়ান্ডারথাল মানব মস্তিষ্কের বিকাশ আমাদের চেয়ে দ্রুত ছিল বলে ধারণা করা হত। বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, প্রাণিজগতে আমাদের মস্তিষ্কের বিকাশই সবচেয়ে ধীরগতির, সে কারণেই প্রজাতির অন্যান্য প্রাণী ও আদিম মানুষের তুলনায় আমাদের শৈশব তুলনামূলক দীর্ঘ হয়।

কিন্তু নতুন গবেষণা এ ধারণা পাল্টে দিল। এটি অবাক ব্যাপার। যখন শুরু করেছিলাম আমরা ভেবেছিলাম আগের গবেষণাগুলোর মতোই তথ্য মিলবে, কিন্তু পেলাম উল্টোটা, বলেন মাদ্রিদের মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল সায়েন্সের অধ্যাপক আন্তোনিও রোসাস।

রোসাস মনে করেন তারা ঠিক এবং আগের গবেষণা ভুল। কারণ তারাই প্রথম দুই ধরনের কঙ্কাল ও তার বিকাশ নিয়ে গবেষণা করেছেন।

নিয়ানডার্থাল Neanderthal) একটি জীবাশ্ম-নৃতাত্ত্বিক প্রজাতির নাম যারা প্লাইস্টোসিন যুগে বাস করত। এরা হোমো গণের অন্তর্ভুক্ত। এ জন্যই তাদের দ্বিপদী নাম Homo neanderthalensis বা Homo sapiens neanderthalensis। তাদের আবাসস্থল ছিল ইউরোপ এবং এশিয়ার মধ্য ও পশ্চিম অঞ্চল। ৬০০,০০০ – ৩৫০,০০০ বছর আগে ইউরোপে প্রথম প্রাক-নিয়ানডার্থাল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব ঘটে। এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলোকে অনেক সময় Homo heidelbergensis নামক অন্য একটি ক্ল্যাডিস্টিক প্রজাতির বৈশিষ্ট্য শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। হাইডেলবার্গেনসিসের আরেকটি অভিবাসিত রূপ হচ্ছে Homo rhodesiensis। ১৩০,০০০ হাজার বছর আগে প্রথম পরিপূর্ণ নিয়ানডার্থাল বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব ঘটে। নিয়ানডার্থাল বৈশিষ্ট্যসমৃদ্ধ আধুনিক মানুষও পাওয়া গেছে যার নাম Lagar Velho (পর্তুগাল)। ২৪,৫০০ বছর বয়স্ক এই আধুনিক মানুষের মধ্যে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের চূড়ান্ত সমন্বয় দেখা যায়।

নিয়ানডার্থাল মূলত মাংসাষী ছিল, এ কারণে শিকারেও তাদের দক্ষতা ছিল অতুলনীয়। গড়পরতায় তাদের উচ্চতা তখনকার হোমো স্যাপিয়েন্সদের সাথে তুলনীয় ছিল। পুরুষদের উচ্চতা ছিল ১৬৫-১৬৮ সেমি (৫’৫), হাড়ের শক্তিশালী গড়নের কারণে তারা বেশ ভারি ছিল। তাদের হাত ও বাহুতে অনেক শক্তি ছিল। নারীদের উচ্চতা ছিল ১৫২-১৫৬ সেমি (৫’১)।