মামলায় জর্জরিত বিএনপির ৯৫ ভাগ কেন্দ্রীয় নেতা
মামলায় জর্জরিত বিএনপির ৯৫ ভাগ শীর্ষ নেতা। বিএনপির অভিযোগ, জাতীয় নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতেই মামলাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে সরকার। এদিকে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের নামে দায়ের ২০ শতাংশ ফৌজদারি ও দুর্নীতির মামলা সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে। এসব মামলায় কমপক্ষে দুই বছর সাজা হলে, অনেকেই নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।
সিনিয়র আইনজীবীদের মতে, এসব মামলা দ্রুত বিচারের জন্য যদি কোনো পক্ষ থেকে হস্তক্ষেপ করা না হয়, তবে ৫ থেকে ৭ বছরের আগে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে না। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুটি মামলার বিচার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। অনেক জ্যেষ্ঠ নেতার মামলার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে।
ইতোমধ্যে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার সাজা হওয়ায় আগামী জাতীয় নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ অনিশ্চিত। আর কেন্দ্রীয় কমিটি এবং স্থায়ী কমিটির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় দ্রুত চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে।
বিশেষ ট্রাইব্যুনালেও অনেক মামলার বিচার চলছে। ওয়ান-ইলেভেনের পর দায়ের করা মামলা নিয়েও নেতারা উদ্বিগ্ন। উচ্চ আদালতে স্থগিত ওই মামলাগুলো ফের চালু হচ্ছে। এছাড়া আরো কিছু মামলা চালুর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির ৯৫ ভাগ নেতাই নাশকতাসহ অন্তত পাঁচটি করে মামলার আসামি। রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হওয়ার পরিবর্তে বিএনপির বেশিরভাগ নেতার সময় কাটছে আদালতে আসা-যাওয়ার মধ্যে।
তিনি বলেন, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ৮৬টি, স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়ার বিরুদ্ধে ৮৩টি, মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে ৫৩টি, মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধে ২৩টি এবং দলের অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার বিরুদ্ধে ৩৪টি মামলা হয়েছে।
এসব মামলার বেশির ভাগই ফৌজদারি অপরাধের। যেগুলো দায়ের হয়েছে হরতাল অবরোধে জ্বালাও-পোড়াওয়ের অভিযোগে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি হত্যা মামলাও রয়েছে। FFV ফৌজদারি মামলার পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনের অনেক মামলাও বেশ এগিয়ে গেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রয়েছে ৩৬টি মামলা। এর মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা ৬০ দিনের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। অর্থ পাচার মামলায় ৭ বছর কারাদ- হওয়ায় নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এছাড়া সারাদেশে বিএনপির প্রায় পাঁচ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অন্তত ২৫ হাজার মামলা রয়েছে।
অন্যদিকে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া শতাধিক নেতাকর্মী রাজনৈতিক কর্মকা- এড়িয়ে চলছেন। কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতাদের প্রায় প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই মামলা চলমান। এরই মধ্যে বেশিরভাগ নেতাই আদালতে হাজিরা দিতে হয় নিয়মিত।
বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম আইনজীবী ও দলের আইন বিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া জানান, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ৩৬টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি দুদকের করা মামলা, বাকি মামলাগুলোর মধ্যে হত্যা, নাশকতা ও পুলিশের কাজে বাধা দেয়াসহ রাষ্ট্রদ্রোহের অভিয়োগর রয়েছে। তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে যত মামলা রয়েছে সবগুলোই এখন বিচারাধীন।
বিএনপির দফতর সূত্রে জানা গেছে, দলটির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ও কেন্দ্রীয় বেশির ভাগ নেতার বিরুদ্ধেও নাশকতার মামলা রয়েছে। বিএনপি ছেড়ে যাওয়া শমসের মবিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে ৬ মামলা আছে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশের বাইরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ভারতে গ্রেফতার আছেন।
গত বছরের মে মাসে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে তার সন্ধান পাওয়া যায়। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে শিলং পুলিশের মামলা বিচারাধীন থাকায় তিনি দেশে আসতে পারছেন না। এছাড়া ২০১৪ সালের প্রথম দিকে চিকিৎসার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা এখনও দেশে ফেরেননি। তার নামে মামলায় থাকায় তিনি ফেরার আসামি।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, এই সরকার মামলাবাজ। আমাদের প্রায় প্রত্যেককেই আদালতেই পড়ে থাকতে হয়। একটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে এইরকম অগণতান্ত্রিক আচরণ অতীতের কোনও সরকারই করেনি। এমনকি পাকিস্তান আমলেও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ৫০ থেকে ১০০টি মামলা ছিল না।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন