মারধরের অভিযোগ দেওয়ায় রাতভর নির্যাতন, ডেকে নিয়ে যান তারই বন্ধু আমিনুল

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) এক শিক্ষার্থীকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার ঘটনায় অভিযোগ দেওয়ায় পুনরায় ওই শিক্ষার্থী শাহরীনকে রাতভর বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। মারধরের পূর্বে ডেকে নিয়ে যান তারই বন্ধু আমিনুল। মঙ্গলবার (০৪ জুন) দিবাগত রাত দুইটায় যবিপ্রবির শহীদ মসিয়ূর রহমান হলে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ও সংশ্লিষ্ট হল প্রভোস্ট ড. মোঃ তানভীর ইসলামকে মৌখিকভাবে অভিযোগ জানিয়ে বিচার চেয়েছেন।

ভুক্তভোগী জানান, সোমবার কথা-কাটাকাটির জেরে আমাকে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ায় ঘটনায় বিচার চাওয়ায় ঘুম থেকে তুলে রাত দুইটায় ৩০৬ নং কক্ষে ডেকে নিয়ে যায় আমার বন্ধু আমিনুল ইসলাম ও সিয়াম। কক্ষে আগে প্রবেশ করে আমিনুল এবং আমি প্রবেশের সাথে সাথেই আমার উপর অতর্কিত হামলা করে। এসময় এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি মারলে রুমের মেঝেতে লুটিয়ে পড়ি। তখন তারা আমাকে পা দিয়ে পাড়াতে থাকে প্রায় ১০-১২ জন। এসময় তারা আমাকে বলতে থাকে কেন প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিস? এসময় তারা আমার মোবাইল কেড়ে নিয়ে আমার ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেই। এক পর্যায়ে তারা আমাকে মোটা রড দিয়ে আমার সারা শরীরে পেটাতে শুরু করে। ভোর পাঁচটা পর্যন্ত চলে দফায় দফায় এমন নির্যাতন। ঐসময় আমার মনে হচ্ছিল আমিও মনে হয় আবরার ফাহাদের মতো মরে যাবো। এসয়ম মারধরে অংশগ্রহণ করে আশিকুজ্জামান লিমন (পিইএসএস), ইসাদ (পিইএসএস), রায়হান রহমান রাব্বি (পদার্থবিজ্ঞান), বেলাল হোসেন (এফবি), শেখ বিপুল (পিইএসএস), রাইসুল হক রানা (ফার্মেসি) সহ আরও কয়েকজন। তাঁরা সবাই শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো: সোহেল রানার অনুসারী।

জানা যায়, এরপর যেন কাউকে না জানাতে পারে সেজন্য তার বন্ধু আমিনুল ইসলাম শাহরীনের ফোন নিয়ে রেখে দেয়। একপর্যায়ে ঘটনা জানাজানির ভয়ে সকাল দশটার দিকে মোটরসাইকেলে করে শহরে নিয়ে চলে যায় আমিনুল ও রাজীব। পরে জানাজানি হলে চাপে পড়ে দুপুরের দিকে শাহরীন কে তার গ্রামের বাড়ি পৌঁছে দেয় তারা। শাহরীন বাড়ি পৌঁছালে তার মাকে অজ্ঞাত নাম্বার থেকে কল দিয়ে বাড়ি বোম মেরে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে জানান শাহরীন।

এ ঘটনায় শাহরীনের বন্ধু আমিনুলের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

এ ঘটনায় যবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতিকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

এবিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আমার কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ জানিয়েছে। তাকে এতই ভীতসন্ত্রস্ত মনে হচ্ছিল যে কথা বলতে পারছিলো না। সে জানিয়েছে তাকে আবরার ফাহাদের মতো মারা হয়েছে। এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, সোমবার (০৩ মে) ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান (পিইএসএস) বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাহরীন রহমানের মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার ঘটনায় একই বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাহীনুরের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দেন শাহরীন।