মার্চে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষে স্থানীয় সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী সপ্তাহে এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। মার্চ মাসে শুরু হয়ে কয়েক দফায় এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলবে। মার্চে প্রথম দফায় শতাধিক উপজেলায় ভোট গ্রহণ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ) আইন অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদের মেয়াদ পরিষদের প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। ওই পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্তির আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে। সে অনুযায়ী, এর মধ্যে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালের ১০ মার্চ নির্বাচন শুরু হয়ে পাঁচ ধাপে জুনে গিয়ে শেষ হয়।
এবারও পাঁচ থেকে সাত ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষা, মার্চে রোজা শুরু ও এপ্রিলে ঈদের বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয়েছে। প্রথম ধাপের নির্বাচনের বিষয়ে চলতি সপ্তাহেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে ইসি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, উপজেলা পরিষদ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় সরকারের বিভাগ।
গ্রামীণ জনপদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও জনগণের জীবনমান উন্নয়নের প্রশ্নে উপজেলা পরিষদই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকে। দেশে বর্তমানে ৪৯৫টি উপজেলা পরিষদ রয়েছে। বেশির ভাগ উপজেলার মেয়াদ মার্চ থেকে জুনের মধ্যে শেষ হবে। এ ছাড়া সংসদ নির্বাচনের পদত্যাগের কারণে বেশ কয়েকটি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ শূন্য।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে, তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।
দ্রুতই পুরো কমিশন বসে এ বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে। তিনি বলেন, কত উপজেলায় নির্বাচন হবে, তা এই মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে এই মুহূর্তে ৪০০ উপজেলায় নির্বাচনের প্রয়োজন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলাগুলোতেও শতভাগ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট করবে কমিশন। এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বলে তিনি জানান।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি ইসির মাঠ কর্মকর্তাদেরও উপজেলা নির্বাচনসংক্রান্ত তথ্য দিতে বলেছে ইসি। এসংক্রান্ত চিঠির অনুলিপি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮-এর ১৭(১)(গ) ধারা অনুসারে পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ক্ষেত্রে ওই মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ থেকে পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে পঞ্চম উপজেলা পরিষদের শপথ গ্রহণ ও প্রথম সভার তারিখের তথ্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছে ইসি।
ইসির অনুমোদন সাপেক্ষে আগামী সপ্তাহে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে জানান ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। তিনি বলেন, অন্যান্যবারের মতো এবারও প্রথম ধাপে শ খানেক উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হতে পারে। চার বা পাঁচ ধাপে ভোট শেষ করা হতে পারে।
রোজার সময় তো ভোট করা হবে না। রোজার আগে প্রথম ধাপ ও পরে অন্য ধাপগুলো হবে। সে ক্ষেত্রে উপজেলার সংখ্যা ও ভোটের তারিখ কমিশন সভায় চূড়ান্ত হবে। তিনি জানান, ভোটের জন্য ২০০ উপজেলা প্রস্তুত রয়েছে। তবে কয় ধাপে, কয়টি উপজেলার বা প্রথমে কোন কোন উপজেলায় নির্বাচন হবে সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
উপজেলা পরিষদ চালুর পর ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৯০ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হলেও পরে উপজেলা কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর আবারও উপজেলা পরিষদ চালু করে। ওই বছর তৃতীয়বার নির্বাচন হয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন