‘মাসুদ রানা’র স্রষ্টা কাজী আনোয়ার হোসেন আর নেই
পাঠকনন্দিত মাসুদ রানা খ্যাত কাজী আনোয়ার হোসেন (৮৫) আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বুধবার (১৯ জানুয়ারি) বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
তার পরিবারের পক্ষে বোন সনজীদা খাতুন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কাজী আনোয়ার হোসেনের পুত্রবধূ মাসুমা মাইমুর এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘নিভে গেছে দীপ জনমের তরে, জ্বলিবে না সে তো আর। দূর আকাশের তারা হয়ে গেছে আমার ছেলেটা। আমার ছোট্ট ছেলেটা। আর কোনোদিনও আমার পিছু পিছু ঘুরে খুঁজবে না মায়ের গায়ের মিষ্টি গন্ধ। কোনোদিনই না। কিন্তু মাকে ছেড়ে থাকবে কীভাবে ওই অন্ধকার ঘরে আমার ছেলেটা? একা, শুধু একা? কী সব বকছি জানি না। আব্বা (কাজী আনোয়ার হোসেন) আর নেই। চলে গেছেন আমাদের ছেড়ে। ’
লেখক, অনুবাদক ও প্রকাশক কাজী আনোয়ার হোসেন দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। তার পুত্রবধূ বলেন, গত ৩১ অক্টোবর কাজী আনোয়ার হোসেনের প্রোস্টেট ক্যানসার ধরা পড়ে। মাঝে পাঁচ বার হসপিটালাইজড ছিলেন। চিকিৎসার সুযোগ খুব একটা পাওয়া যায়নি। একটা ব্রেন স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক হয়ে সব শেষ হয়ে গেল। ১০ জানুয়ারি থেকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।
১৯৩৬ সালের ১৯ জুলাই ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন বরেণ্য এই লেখক-প্রকাশক। তার পুরো নাম কাজী শামসুদ্দিন আনোয়ার হোসেন। ডাক নাম নবাব। তার পিতা প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও সাহিত্যিক কাজী মোতাহার হোসেন, মাতা সাজেদা খাতুন।
১৯৫২ সালে সেন্ট গ্রেগরি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন কাজী আনোয়ার হোসেন। এরপর জগন্নাথ কলেজ থেকে আইএ ও বিএ পাস করেন। ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এমএ পাস করেন। পড়াশুনা শেষ হওয়ার পর রেডিওতে তিনি নিয়মিত গান গাইতে শুরু করেন। তার তিন বোন সনজীদা খাতুন, ফাহমিদা খাতুন ও মাহমুদা খাতুন এখনও রবীন্দ্র সঙ্গীতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
১৯৬২ সালে কণ্ঠশিল্পী ফরিদা ইয়াসমিনকে বিয়ে করেন কাজী আনোয়ার হোসেন। ১৯৬৩ সালের মে মাসে বাবার দেওয়া দশ হাজার টাকা ও দুজন কর্মচারী নিয়ে সেগুনবাগিচায় প্রেসের ব্যবসা শুরু করেন। পরবর্তীকালে যার নাম পাল্টে রাখা হয় সেবা প্রকাশনী। এরপর তার হাত ধরে বাংলাদেশে পেপারব্যাক গ্রন্থ প্রকাশিত হওয়া শুরু করে।
সেবা প্রকাশনীর কর্ণধার হিসেবে কাজী আনোয়ার হোসেন ষাটের দশকের মধ্যভাগে মাসুদ রানা নামক গুপ্তচর চরিত্র সৃষ্টি করেন। এর আগে কুয়াশা নামের আরেকটি জনপ্রিয় চরিত্র জন্ম নিয়েছিল তার হাতে। কুয়াশা চরিত্রটি নিয়ে তিনি প্রায় ৭৬টির মতো কাহিনি রচনা করেছেন। তিনি ছদ্মনাম হিসেবে ‘বিদ্যুৎ মিত্র’ ও ‘শামসুদ্দীন নওয়াব’ নাম ব্যবহার করতেন।
কাজী আনোয়ার হোসেনের এক মেয়ে ও দুই ছেলে আছে। তার মেয়ে শাহরীন সোনিয়া কণ্ঠশিল্পী। বড় ছেলে কাজী শাহনূর হোসেন এবং ছোট ছেলে মায়মুর হোসেন লেখালেখি এবং সেবা প্রকাশনীর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন