মাস্টার্স পড়ুয়া এক ভ্যানচালকের গল্প!

অভাবের সংসার ছিল বাবা আনছার আলী গাজীর। মা ফজিলা খাতুন গৃহিণী। বাবা ভ্যান চালিয়ে কোনো রকমে সংসার চালাতেন। ৭ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়।

‘অভাবের তাড়নায় এক সময় চলে আসি সাতক্ষীরা শহরে। উপায় না পেয়ে রিকশা চালানো শুরু করি। শুরু হয় জীবন যুদ্ধের সংগ্রাম। তবে লেখাপড়া করার প্রতি আমার আগ্রহ ছিল ছোটবেলা থেকেই। একদিকে রিকশা চালাই, অন্যদিকে সাতক্ষীরা নাইট স্কুলে ভর্তি হয়ে ২০০৯ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৩.৬৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হই।’

নিজের সংগ্রামী জীবনের কথাগুলো এভাবেই তুলে ধরেন সাতক্ষীরা সদরের মাগুরা গ্রামের ভাড়াটিয়া ভ্যানচালক মো. বজলুর রহমান (২৫)। বাবার বাড়ি খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার বামিয়া গ্রামে।

তিনি বলেন, এসএসসি পাসের পর সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে ভর্তি হই। ২০১১ সালে এইচএসসিতে জিপিএ ৩.৮০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি। এরপর অনার্স সাতক্ষীরা সিটি কলেজে। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ২০১৫ সালে সিজিপিএ ২.৯৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হই। বর্তমানে মাস্টার্সে পড়ছি সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে।

একদিকে, ভ্যান চালাই অন্যদিকে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি অভাব-অনটনের পরিবারে ভ্যান চালিয়ে উপার্জিত টাকা থেকে কিছু মা-বাবার জন্য পাঠাই।

নিজের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা শহরের এ ভ্যানচালক বলেন, বিয়ে করেছি। বর্তমানে তিন বছরের একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। নাম ইয়ারিন রহমান।

আক্ষেপ ও দুঃখের সঙ্গে বজলুর রহমান বলেন, একটা চাকরির জন্য অনেক জায়গায় আবেদন করেছি। কোথাও চাকরি হয়নি আমার। আমার টাকা নেই। ঘুষ দিতে পারব না, তাই হয়তো চাকরি হয় না। এছাড়া আমি একজন ভ্যানচালক। আমার গুরুত্ব সবার কাছেই কম।

আমি কারও কাছে সহযোগিতা চাই না জানিয়ে বজলুর রহমান বলেন, কেউ যদি আমার একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দেন তবে চির কৃতজ্ঞ থাকব।

এ নিয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মো. মহি উদ্দীন বলেন, বিষয়টি দ্রুততার সঙ্গে করা সম্ভব নয়। একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগোতে হবে। তবে আগামীতে যোগাযোগ রাখলে তার ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।