মা কোথায় জানে না ছোট্ট শিশুটি

কেঁদেই চলেছে শিশুটি। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে একটা কথাই শুধু বলছে, মা কোথায়? নিউ ইয়র্কের একটি ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে তাকে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জিরো টলারেন্স নীতির কারণে শরণার্থী মা-বাবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন শিশুদের রাখা হচ্ছে এখানে।

ওই সেন্টারেরই এক প্রাক্তন কর্মী গোপনে বাচ্চাদের বেশ কিছু ভিডিও ধারণ করেন। মার্কিন টিভি চ্যানেলেও সেগুলো দেখানো হয়েছে। শরণার্থী শিশুদের মা-বাবার কাছ থেকে আলাদা করা হবে না এমন নির্দেশিকায় কয়েক আগেই স্বাক্ষর করেছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। কিন্তু সম্প্রচারিত ভিডিওতে দেখানো হয়েছে যে, শিশুদের দুর্দশার বিষয়টি শরণার্থী-বিতর্কের কেন্দ্রেই রয়েছে।

ইস্ট হারলেম কায়ুগা সেন্টার নামে নিউ ইয়র্কের এক শরণার্থী কেন্দ্রে কাজ করতেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মী। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভ্রান্ত নীতির প্রতিবাদে গত সপ্তাহে ইস্তফা দেন তিনি। শরণার্থী কেন্দ্রে কাজ করার সময়ে নিজের মোবাইল ফোনে টুকরো টুকরো ভিডিও ধারণ করেছিলেন তিনি। ইস্তফা দেওয়ার পরে সেগুলো তুলে দেন এক সাংবাদিক বন্ধুর হাতে। টিভি চ্যানেলটি ওই কর্মীর একটি অডিও সাক্ষাৎকারও সম্প্রচার করেছে।

ওই ভিডিওতে ডিটেনশন সেন্টারের ভেতরের পরিবেশ দেখা গেছে। অনেকটা স্কুলের ক্লাসঘরের মতো। শরণার্থী শিবিরের ওই কর্মী জানিয়েছেন, তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মা-বাবার বিষয়ে জানার চেষ্টা করতে। কিন্তু সেটা একটা দুঃসাধ্য কাজ। তার প্রথম কারণ অবশ্যই ভাষা। ইংরেজি তো দূরের কথা অধিকাংশ বাচ্চা স্প্যানিশও বলতে পারে না। কাঁদতে কাঁদতে যেটুকু বলে, তার থেকে একটা কথাই শুধু বোঝা যায়, তারা তাদের মা-বাবাকে খুঁজছে।

যেমন ভিডিওর শিশুটিকে সেন্টারের কর্মীরা জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তার কোনও অসুবিধা হচ্ছে হচ্ছে কিনা বা কোথাও কষ্ট হচ্ছে কিনা। মেয়েটির মুখে শুধু একটাই শব্দ ছিল ‘মাদ্র’ (মা)! আর শুধু কাঁদছিল। শেষমেশ ওই কর্মী বাচ্চাটিকে জড়িয়ে তাকে সান্ত্বনা দিতে শুরু করেন। তার কথায়, আমাদের কড়া নির্দেশ দেওয়া থাকে, যেটুকু প্রয়োজন, বাচ্চাদের সঙ্গে তার থেকে একটুও বেশি কথা বলা যাবে না। কোনও রকম ঘনিষ্ঠ আচরণের তো প্রশ্নই ওঠে না। বাচ্চাটিকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে আমি সেই নিয়ম ভেঙেছি। কিন্তু ওর অসহায় অবস্থা দেখে নিজেকে থামাতে পারিনি।

এই কর্মীর কাছেই জানা গেছে, ডিটেনশন সেন্টারে যেসব বাচ্চা রয়েছে, তারা নেহাতই শিশু। কিশোর বয়সীদের সংখ্যা অনেক কম। সেই কর্মীর প্রশ্ন, এত ছোট বাচ্চারা তো নিজেরা সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশে ঢুকে পড়েনি। ফলে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে সীমান্তেই এদের জোর করে মা-বাবার কাছ থেকে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে।

এখানেই শেষ নয়। গোপনে রেকর্ড করা এক অডিও ক্লিপে শোনা গেছে, কেউ একজন বাচ্চাদের স্প্যানিশ ভাষায় বলছেন, খবরদার কোনও সাংবাদিকের সামনে মুখ খুলবে না। তা হলে কিন্তু আর কখনওই মা-বাবার কাছে ফিরে যেতে পারবে না।