মিয়ানমারে জাতির পিতার ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালিত

যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সাথে ১৫ আগষ্ট (মঙ্গলবার) বাংলাদেশ দূতাবাস, ইয়াঙ্গুনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এঁর ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয়।

দিবসটি উপলক্ষে দূতাবাস কর্তৃক দিনব্যাপী কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। আয়োজিত কর্মসূচির প্রথম পর্বে ছিলো আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুস্পার্ঘ্য অর্পণ, জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের সকল শহিদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন, দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ, জাতির পিতার উপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, আলোচনা অনুষ্ঠান, কোরআনখানি এবং জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের সকল শহিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া-মোনাজাত। দ্বিতীয় পর্বে ছিলো স্থানীয় দুটি এতিমখানায় শিশুদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ।

মিয়ানমারে নিযূক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোঃ মনোয়ার হোসেন পি.এইচ.ডি আলোচনা সভার মূল বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি বক্তব্যের শুরুতেই বাংলাদেশের মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে নির্মমভাবে নিহত তাঁর পরিবারের সকল শহিদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়াও তিনি ৩০ লক্ষ শহিদ, সম্ভ্রমহারানো দুই লক্ষ মা-বোনসহ সকল বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে শহিদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন। রাষ্ট্রদূত ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ পর্যন্ত বাঙালির প্রতিটি ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর অবিস্মরণীয় নেতৃত্ব এবং স্বাধীনতা পরবর্তী অতি অল্পসময়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় ভূমিকার প্রশংসা করেন। অসাধারণ মহানুভবতা, মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও প্রজ্ঞার কারনে তিনি কিভাবে ‘বঙ্গবন্ধু’ হিসেবে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেন রাষ্ট্রদূত তা তথ্যসহ তুলে ধরেন। দিবসটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিনি তৎকালীন আন্তর্জাতিক ও দেশীয় ষড়যন্ত্রের বিষয়টি তুলে ধরেন।

এছাড়াও রাষ্ট্রদূত জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করার বিষয়টিকে ইতিহাসের ভয়াবহতম, নিষ্ঠুর ও অমানবিক একটি অধ্যায় বলে উল্লেখ করে অবিলম্বে বিদেশে পলাতক বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করা হবে মর্মে আশা ব্যক্ত করেন। তিনি আরো বলেন যে, বঙ্গবন্ধু সর্বদা শোষিত-নির্যাতিত মানুষের পক্ষে সংগ্রাম করে গেছেন। আর এ সংগ্রামের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তিঁনি শুধু কোটি-কোটি বাঙ্গালীরই নয় বরং বিশ্বব্যাপী স্বাধীনতাকামী মানুষের জন্যও চিরন্তন প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। রাষ্ট্রদূত সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচী ও দেশের অব্যহত উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন। এ প্রসঙ্গে তিনি সামাজিক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশের অনন্যসাধারণ অর্জনে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার বৈশ্বিক স্বীকৃতির বিষয়টি তুলে ধরেন। রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘রুপকল্প ২০৪১’, ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সবাইকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।

দূতাবাসের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তাগণ তাদের বক্তব্যে জাতির পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন।

অনুষ্ঠানের শেষভাগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শাহাদত বরণকারী তাঁর পরিবারের সকল সদস্যের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া-মোনাজাতের মাধ্যমে জাতীয় শোক দিবসের প্রথম পর্বের কর্মসূচি সমাপ্ত হয়। মূল অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বে সকালে পবিত্র কোরআন খতমের মাধ্যমে সকল শহিদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়। দ্বিতীয় পর্বে, দূতাবাসের পক্ষ থেকে মান্যবর রাষ্ট্রদূত জাতির পিতার ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে ইয়াঙ্গুনে অবস্থিত দুটি এতিমখানায় প্রায় দেড়শতাধিক শিশুদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন।

অনুষ্ঠানে মিয়ানমারে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত কর্মকর্তা, ঔষধ ও পোষাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী, ক্রীড়া সংস্থার সাথে যুক্ত কর্মকর্তা এবং ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক এন.জি.ও এর প্রতিনিধিসহ বাংলাদেশ কমিউনিটির সদস্যবৃন্দ, দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ ও তাদের পরিবারবর্গ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে আমন্ত্রিত অতিথিদের মাঝে তবারক বিতরণ করা হয়।