মির্জা আব্বাস ও মোশাররফের দুর্নীতির মামলার বিচার শেষ পর্যায়ে

দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন কি না, সে প্রশ্ন যখন ঘুরপাক খাচ্ছে, তখন দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়ার তিন বছর কারাদণ্ড হয়েছে। আদালত সূত্র বলছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরও দুই সদস্য মির্জা আব্বাস ও খন্দকার মোশাররফ হোসেনের দুর্নীতির মামলার বিচারও শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। খবর প্রথম আলো’র।

মামলা দুটির তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য-জেরা চলছে। এরপর আত্মপক্ষ সমর্থন ও যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের জন্য দিন ঠিক করবেন আদালত।

দুর্নীতি দমন কমিশনের কৌঁসুলি মীর আহমেদ আলী সালাম বলছেন, প্রতি সপ্তাহে মামলার শুনানি হচ্ছে। এভাবে চললে আগামী এক মাসের মধ্যে মামলার বিচার শেষ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বৃহস্পতিবার বলেন, মিথ্যা দুর্নীতি মামলায় বিএনপি নেতাদের সাজা দিয়ে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্য ষড়যন্ত্র চলছে। প্রতি সপ্তাহে মামলার শুনানির তারিখ পড়ছে। আদালতে তাঁদের হাজির হতে হচ্ছে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ কে এম মোশাররফ হোসেনের মামলার বিচারকাজ শেষ পর্যায়ে এসেছে।

দুর্নীতির মামলায় তিন বছর আগে দণ্ডিত পলাতক আসামি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার আরও একটি দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা হবে ২৮ নভেম্বর।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদের বিরুদ্ধে করা জ্ঞাতআয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায়ও প্রতি সপ্তাহে শুনানির তারিখ পড়ছে।

বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ, এ কে এম মোশাররফ ও আবদুল্লাহ আল নোমানের বিরুদ্ধে মামলা হয় আওয়ামী লীগ সরকারের সময়। আর মির্জা আব্বাস ও মওদুদ আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা হয় এক-এগারোর পটপরিবর্তনের পর। এসব সব মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব মামলায় যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তার শাস্তি ১০ বছর থেকে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে দুদকের করা অর্থপাচার মামলাটির বিচার চলছে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এ। আদালত সূত্র বলছে, মামলার তদন্ত কমকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা চলছে। এ মামলায় আজ বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির হন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এর আগে মোশাররফ গত ১১ নভেম্বর এবং ৪ নভম্বের শুনানির দিন থাকায় আদালতে হাজির হয়েছিলেন।

মোশাররফের আইনজীবী বোরহান উদ্দিন বলেন, তড়িঘড়ি করে মামলার বিচার শেষ করার জন্য প্রতি সপ্তাহে শুনানির দিন রাখা হচ্ছে।

সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে দুদক ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করে। এতে বলা হয়, তিনি মন্ত্রী হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। তিনি লন্ডনের একটি ব্যাংক হিসাবে ৯ কোটি ৫৩ লাখ ৯৫ হাজার ৩৮১ টাকা জমা রাখেন। এই মামলার বিচার শুরু হয় ২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর।

মির্জা আব্বাস
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে জ্ঞাতআয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলার বিচার চলছে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা চলছে।

আদালত সূত্র বলছে, এ মামলায় আজ শুনানির দিন থাকলেও মির্জা আব্বাস আদালতে হাজির হননি। এর আগে এই মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ১৩ নভেম্বর, ৮ নভেম্বর ও ৫ নভেম্বর।

মির্জা আব্বাসের আইনজীবী আবদুর রেজাক খান বলেন, প্রতি সপ্তাহে মামলার তারিখ ফেলা হচ্ছে। মির্জা আব্বাসকে আদালতে হাজিরও হচ্ছেন। দ্রুত শেষ করার চেষ্টা আছে।

সাবেক পূর্তমন্ত্রী মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে আয়ের সঙ্গে সংগতিবিহীন ৭ কোটি ৫৪ লাখ ৩২ হাজার ২৯০ টাকার সম্পদ অর্জন এবং ৫৭ লাখ ২৬ হাজার ৫৭১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ১৬ আগস্ট মামলা করে দুদক। ২০০৮ সালের ১৪ মে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

আবদুল্লাহ আল নোমান
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের বিরুদ্ধে সম্পদের হিসাব জমা না দেওয়ার অভিযোগের মামলাটির বিচার চলছে এখন ঢাকার বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।

এ মামলার সর্বশেষ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ১৪ নভেম্বর। নোমানের আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ প্রথম আলোকে বলেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে আবদুল্লাহ আল নোমানকে হয়রানি করা হচ্ছে।

বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের বিরুদ্ধে মামলা হয় ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। ওই বছরের ১৯ আগস্ট তাঁর বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় মামলা হয়। ২০০০ সালের ৩০ মে তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

এ কে এম মোশাররফ হোসেন
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার বিচার চলছে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-২ এ। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা চলছে।

আদালত সূত্র বলছে, এ মামলার সর্বশেষ শুনানি অনুষ্ঠিত হয় গত ১৪ নভেম্বর ও ৪ নভেম্বর।

দুদকের করা এ মামলার অভিযোগ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে এ কে এম মোশাররফ হোসেন কানাডার প্রতিষ্ঠান নাইকো রিসোর্স লিমিটেড থেকে ৯৫ লাখ টাকা মূল্যের একটি গাড়ি এবং কানাডা-আমেরিকা ভ্রমণের জন্য ৫ হাজার ডলার নিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ২০১২ সালে মামলা করে দুদক।

মওদুদ আহমেদ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদের বিরুদ্ধে করা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলার বিচার চলছে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এ। এ মামলায় বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। শুনানির দিন থাকায় গত ১৮ নভেম্বর আদালতে হাজির হন মওদুদ আহমেদ। এ ছাড়া চলতি মাসের ১১ নভেম্বর এবং ৪ নভেম্বর মামলার শুনানি হয়েছে মওদুদের মামলার।

জ্ঞাত আয় বহির্ভূত ৯ কোটি ৪ লাখ ৩৭ হাজার টাকার সম্পদ অর্জন এবং ৪ কোটি ৫০ লাখ ১৮ হাজার ৫৭৩ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ১৬ জানুয়ারি মওদুদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এ মামলায় পরের বছর ২০০৮ সালের ১৪ মে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। গত বছরের ২১ জুন আদালত মওদুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।

সাদেক হোসেন খোকা
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মামলার বিচার চলছে ঢাকার বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে। দুদকের করা এ মামলায় আগামী ২৮ নভেম্বর রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য আছে।

আদালত সূত্র বলছে, মামলায় খোকার বিরুদ্ধে মেয়র থাকাকালীন আরও তিনজনের সঙ্গে যোগসাজশে মোট ৩৭ লাখ ১৯ হাজার ৯০০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, খোকাসহ চারজন পরস্পরের যোগসাজশে বনানীর ওই মার্কেটের বেজমেন্টে ‘কার পার্কিংয়ের’ ইজারার অর্থ আত্মসাত্ করেন। অন্য তিন আসামি হলেন বনানীর ঢাকা সিটি করপোরেশনের সুপার মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল বাতেন, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান আজাদ ও পার্কিং স্থানের ব্যবস্থাপক এ এইচ এম তারেক।

এর আগে ২০১৫ সালের ২০ অক্টোবর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের মামলায় সাদেক হোসেন খোকার ১৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। রায়ে সাদেক হোসেনের ১০ কোটি ৫ লাখ ২১ হাজার ৮৩২ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে তা রাষ্ট্রের অনুকূলে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ২ এপ্রিল দুদক সাদেক হোসেন খোকার বিরুদ্ধে রমনা থানায় এই মামলা করে।

বিএনপি নেতা এবং তাঁদের আইনজীবীদের অভিযোগ, নির্বাচনে অযোগ্য করার জন্য তড়িঘড়ি করে মামলার বিচার শেষ করার জন্য উপর থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে।

খন্দকার মোশাররফ এবং মওদুদ আহমেদের আইনজীবী বোরহান উদ্দিন বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশে তাঁর মক্কেলদের বিরুদ্ধে দুদক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। এখন প্রতি সপ্তাহে দিন ফেলা হচ্ছে। নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত থাকলেও তাঁদের মক্কেলদের আদালতে হাজির হতে হচ্ছে।

দুদকের কৌঁসুলি খুরশীদ আলম খান বলেন, সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ এনেই দুদক এসব মামলা করেছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কোনো মামলা করেনি দুদক। মামলার শুনানির দিন ঠিক করেন আদালত, এই এখতিয়ার একমাত্র আদালতের। সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগের প্রমাণ পেয়েই পেয়েই বিএনপি রফিকুল ইসলাম মিয়াসহ অন্যদের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

খুরশীদ আলম বলেন, সংবিধান অনুযায়ী দুই বছরের অধিক কারাদণ্ড হওয়ায় রফিকুল ইসলাম মিয়া নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না, যদি না সাজা উচ্চ আদালতে স্থগিত হয়।