মিয়ানমারে এখনো সেনা অভিযান চলছে : জাতিসংঘ

মিয়ানমারের রাখাইনে এখনো সেনা অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি মার্ক লেমকর্ক। তিনি বলেন, সেজন্য এখনো প্রতিদিন হাজারো রোহিঙ্গা ভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। এই সেনা অভিযান বন্ধ করে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি। মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজারের একটি হোটেলে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।

এসময় লেমকর্ক বলেন, নতুন আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৬০ ভাগ শিশু। এসব শিশুর মধ্যে আবার ৩০ ভাগের বয়স পাঁচ বছরের নিচে আর ৭ ভাগের বয়স এক বছরের নিচে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৩ ভাগ নারী সন্তানসম্ভবা আর ৭ ভাগ নারী নবজাতক শিশুর মা।

তিনি আরো জানান, গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আসা নতুন রোহিঙ্গার সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এখনো রোহিঙ্গারা ভয়ে পালিয়ে আসছে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন আসা রোহিঙ্গারা ৯.৬ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। তারা যে পরিমাণ জায়গায় বসতি স্থাপন করেছে তা ৮৮৯টি ফুটবল মাঠের সমান।

সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন তুলে ধরেন ইউনিসেফের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর অ্যান্থনি লেক এবং আন্ডার সেক্রেটারি ও ইমারজেন্সি রিলিফ কো-অর্ডিনেটর মার্ক লেমকর্ক।

জাতিসংঘের এই দুই প্রতিনিধি বলেন, নতুন আসা রোহিঙ্গাদের প্রতি পাঁচটি পরিবারের মধ্যে একটিতে কোনো পুরুষ না থাকায় দেখভালের দায়িত্বে আছে নারী। আর ৫ ভাগ পরিবার রয়েছে শিশুপ্রধান।

তারা বলেন, দুই লাখ রোহিঙ্গা শিশুই কোনো শিক্ষার আলো পায়নি। অর্ধেক রোহিঙ্গার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ দরকার। রোহিঙ্গাদের ৯০ ভাগ বলেছে, তারা দিনে একবার করে খেতে পাচ্ছে। ফলে তারা চরম অপুষ্টিতে ভুগছে। পাঁচ বছরের নিচে প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন অপুষ্টিতে ভুগছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ৩০ ভাগ রোহিঙ্গা বিশুদ্ধ পানির অভাবে ভুগছে। গত সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী ৪ হাজার ৭৯০ জন ডায়রিয়া রোগী পাওয়া গেছে ক্যাম্পগুলোতে। এটা যে কোনো মুহূর্তে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

এসময় বলা হয়, নতুন আসা রোহিঙ্গাদের জন্য মাসে গড়ে ১৫ মিলিয়ন ডলারের ত্রাণ দরকার। দেড় লাখ নারী-শিশুর জন্য পুষ্টিকর খাবার দরকার। তিন লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গার জন্য জরুরি ভিত্তিতে স্যানিটেশন ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা দরকার।

জাতিসংঘের এই দুই কর্মকর্তা বলেন, জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবে। তবে যতদিন রোহিঙ্গারা যাচ্ছে না, ততদিন তাদের মৌলিক অধিকার পূরণে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে জাতিসংঘ এক হয়ে কাজ করবে।