মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দেয়া ভারতীয়দের স্মরণে হচ্ছে স্মৃতিস্তম্ভ
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নিহত ভারতীয় সেনাদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় এই শিগগির এই স্মৃতিস্তম্ভের কাজ শুরু হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
বৃহস্পতিবার জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে ভারত সরকার কর্তৃক ‘মুক্তিযোদ্ধা বৃত্তি’র চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ কথা জানান।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান অসামান্য। প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার সে দেশে বসেই যুদ্ধ পরিচালনা করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্রের সিংহভাগের যোগানদাতাও ছিল ভারত। পাশাপাশি সাহায্য করেছে রাশিয়া।
গেরিলা যোদ্ধাদের সঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সেনারা সাদা পোশাকে যেমন বাংলাদেশে অভিযান চালিয়েছে, তেমনি ডিসেম্বরের শুরুতে ভারতীয় সেনাবাহিনী সরাসরি যুদ্ধে জড়ায়। গঠন হয় বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ড। আর এই কমান্ডের নেতৃত্বেও ছিল ভারতীয়রা।
আর ১৬ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যৌথ বাহিনীর কাছেই আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী।
বাংলাদেশকে পাকিস্তানের কবল থেকে মুক্ত করার যুদ্ধে বিপুল সংখ্যক ভারতীয় সেনা প্রাণও দিয়েছেন। আবার সারা বিশ্বেই নানা সময় যুদ্ধের পর মিত্র বাহিনী দেশে অবস্থান করলেও ভারতীয় সেনাবাহিনী স্বল্পতম সময়ে বাংলাদেশ ছেড়ে যায়।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘ভারত আমাদের চিরস্থায়ী বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত সমর্থন না দিলে নয় মাস না, কত বছরে এই যুদ্ধ শেষ হতো তা বলে বোঝানো যাবে না। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কোনোভাবেই ছিন্ন করা যাবে না।’
‘তাই আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর নিহত সৈনিকদের স্মরণে আখাউড়ায় স্মৃতিস্তম্ভ করতে যাচ্ছি। এই স্মৃতিসৌধের মাধ্যমে আমরা আমাদের ভারতীয় যুদ্ধ বন্ধুদের চিরদিন স্মরণ করব।’
২১০০ শিক্ষার্থী পাচ্ছে ভারত মুক্তিযোদ্ধা বৃত্তি
চলতি বছরে ভারত সরকার উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ে ২১০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে মুক্তিযোদ্ধা বৃত্তি দিচ্ছে।
এর মধ্যে আজকের অনুষ্ঠানে ঢাকা বিভাগের ৩৮৬ জনের মধ্যে ৩০১ জনের মাঝে চেক বিতরণ করা হয়।
এরপর রংপুর, রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বরিশাল, যশোর ও ময়মনসিংহে পর্যায়ক্রমে চেক দেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা জানান, ২০০৬ সালে ভারত সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরাধিকারীদের জন্য এই বৃত্তি চালু করে। উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া হয়। স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ২৪ হাজার টাকা করে চার বছর এই বৃত্তি দেওয়া হয়।
উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা ১০ হাজার টাকা করে দুই বছর এই বৃত্তি পায়। এর আওতায় এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ৯৩৬ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে সাড়ে ১৬ কোটি টাকা।
নতুন বৃত্তি প্রকল্পের আওতায় পরবর্তী পাঁচ বছরে মোট ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হবে। এজন্য ব্যয় হবে ৩৫ কোটি টাকা।
এখন থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ২০ হাজার টাকা ও স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ৫০ হাজার টাকা করে বৃত্তি দেওয়া হবে।
ভারতে বিনামূল্যে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা
মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে সে দেশের সামরিক হাসপাতালে ১০০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বিনামূল্যে চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছে বলে জানান হর্ষবর্ধন শ্রিংলা।
২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে ভারত সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে তিনটি উদ্যোগের ঘোষণা দেয়। এই চিকিৎসা সুবিধা ছাড়া অন্য দুটি হলো: সব মুক্তিযোদ্ধার জন্য পাঁচ বছরের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা ও নতুন মুক্তিযোদ্ধা বৃত্তি চালু।
ভারতীয় হাইকমিশনার জানান, বাংলাদেশের সব জেলা থেকে ১০০ জন রোগীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই তালিকা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
‘আমরা প্রতিটি রোগীর বিশেষ চিকিৎসা সেবার উপযুক্ত হাসপাতাল নির্ধারণ করছি।’
ভারতীয় ভিসা পেতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে জানিয়ে শ্রিংলা বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা ভিসা কেন্দ্রে সাক্ষাতের তারিখ ছাড়াই আবেদন জমা দিতে পারবেন। তারা পাঁচ বছরের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা পাবেন। এখন পর্যন্ত এক হাজার ৫১ জন মুক্তিযোদ্ধা এই সুবিধা নিয়েছেন।’
তিস্তা চুক্তি সরকারের চলতি মেয়াদেই
দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির সমাধান এ সরকারের আমলেই হবে বলে বিশ্বাস করেন মোজাম্মেল হক।
মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে আমিও সফরসঙ্গী ছিলাম। সেখানে দেখেছি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জোর দিয়ে বলেছেন তার এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রীর চলতি মেয়াদেই তিস্তা চুক্তি হবে।’
তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারতে জটিলতার একটি দূর হয়েছে জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী বলেন, ‘এরই মধ্যে প্রাদেশিক সরকারের বাধা দূর করে সেদেশের আদালতে একটি রায় দিয়েছেন। এখন প্রাদেশিক সরকারের অনুমোদন ছাড়াও কেন্দ্রীয় সরকার চুক্তি করতে পারে। তাই আমরা আশা করছি শিগগিরই তিস্তা চুক্তির সমাধান হবে।’
ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কে আপাতত সবচেয়ে বড় কাঁটা হয়ে রয়েছে তিস্তার পানিবণ্টন সমস্যা। ২০১১ সালেই তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরে চুক্তির খসড়াও প্রস্তুত ছিল। কিন্তু শেষ পর্যায়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আপত্তিতে আটকে যায় এই চুক্তি।
গত বছরের ৭ থেকে ১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে ৩৫টি বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হলেও প্রত্যাশিত তিস্তা চুক্তি হয়নি।
তবে সফরের দ্বিতীয় দিন ৮ এপ্রিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বর্তমান সরকারের আমলেই তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি করার অঙ্গীকার করেন।
গত ১১ মার্চ রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ভারত সফরেও তিস্তা চুক্তির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সেদিন আবদুল হামিদকে মোদি জানান, এ বিষয়ে মমতা বন্দোপাধ্যায়কে রাজি করানোর চেষ্টা চলছে।
সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় কেশব গোখলে তার বাংলাদেশ সফরেও ‘শিগগির চুক্তি সইয়ের চেষ্টা’ চলার আশ্বাসের কথাই বলছেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন