মুহাম্মাদ (সা.)-এর যে গুণের আমলে তৈরি হয় জান্নাতের পথ
‘রাসুলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবনে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। তিনিই কল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণ এবং অন্যায়মূলক কাজ থেকে বিরত থাকতে মুসলিম উম্মাহর জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় আদর্শ। সত্যবাদিতাও এমনই একটি গুণ ও পালনীয় আমল। যে গুণের আমলেই জান্নাতের পথ তৈরির শুভ সূচনা করেছিলেন বিশ্বনবি।
বিশ্বনবির সত্যবাদিতা ছিল এমনই একটি শক্তিশালী গুণ; অজ্ঞতা ও অপরাধ প্রবণতার যুগে এই একটি বিশেষ গুণেই তিনি সবার কাছে বিশ্বস্ত হিসেবে সমাদৃত ছিলেন। গোটা মানবজাতীর জন্য জান্নাতের পথ তৈরির কঠিন দিনেও সত্যবাদিতার গুণে উজ্জ্বল অতুলনীয় ছিলেন।
সত্যবাদিতার একটি গুণ যে কেউ নিজের মধ্যে লালন-পালন করবে, সে দুনিয়াতে যেমন সমাদৃত হবে; তেমনি পরকালের জান্নাতের পথেও এগিয়ে থাকবেন তিনি।
জীবনের সূচনালগ্ন থেকে যখন তার কোনো সহায়-সম্বল শক্ত অবস্থান ছিল না তখনও তিনি সত্যবাদিতার শক্তিশালী গুণে নিজের স্বভাব-চরিত্রকে মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন। আল্লাহ তার এ গুণের কারণই দিয়েছেন বিশেষ সনদ। তিনি বলেছেন-
‘নিঃসন্দেহে আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী, মহান আখলাকের অধিকারী।’
কেমন সত্যবাদী ছিলেন বিশ্বনবি
সত্যবাদিতা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সত্যবাদিতা। কেমন সত্যবাদী ছিলেন তিনি? যে সত্যবাদিতায় জান্নাতের পথ তৈরির শুভ সূচনা হয়। কত গুরুত্বের সঙ্গেই না তিনি তাঁর সঙ্গী-সাহাবিদের সত্যবাদিতার শিক্ষা দিয়েছেন! সত্যবাদিতার অনন্য গুণের অধিকারী হওয়ার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করেছেন।
বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যত বিপদই আসুক না কেন, তিনি ছিলেন সত্যবাদী। তাঁর এ সত্যবাদিতা তাকে যুগশ্রেষ্ঠ আমানতদারের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
তিনি সত্যবাদিতার এ প্রসিদ্ধি একদিনে পাননি। নানা অনুকূল-প্রতিকূল সব পরিস্থিতিতে আরবের কুরাইশের মাঝে তাঁর জীবনের দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়েছিল। এ পথপরিক্রমায় কথা-কাজ, আচার-আচরণ সব তাদের সামনে ছিল। তাঁর শৈশব, কৈশোর, যৌবনও তাদের সামনে সত্যবাদিতার গুণে উজ্জ্বল। তিনিই যুগের শ্রেষ্ঠ তুলনাহীন সত্যবাদী। তিনিই যুগশ্রেষ্ঠ তুলনাহীন আমানতদার।
বিশ্বনবির সত্যবাদিতার দৃষ্টান্ত
তার সত্যবাদিতার অনন্য দুইটি দৃষ্টান্ত বিশ্ববাসীর জন্য পথপ্রদর্শক। রাসলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর যখন প্রথম ওহি নাজিল হয় তখন তিনি ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বাড়ি ফিরলেন। ওই সময় উম্মুল মুমিনিন হজরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা যে কথাগুলো বলে তাঁকে সান্ত্বনা দিয়েছেন, একজন স্ত্রীর কাছে স্বামীর জন্য তা তাঁর উন্নত কর্ম ও চরিত্রের এক অসাধারণ সনদ। হজরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহার কথাগুলো হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ বুখারিতে এভাবে ওঠে এসেছে-
১. আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মুল মুমিনিন খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেছিলেন-
‘আমি আজ যে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি, এতে আমার প্রাণের আশংকা হচ্ছে।’
হজরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন- ‘না’, তা হতেই পারে না! আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন! আল্লাহ পাক কখনো আপনাকে অপদস্থ করবেন না, (আল্লাহ পাক তো আপনাকে সম্মানিত করবেন,) কারণ-
> আপনি আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেন;
> আপনি সত্য কথা বলেন;
> অন্যের ভার বহন করেন;
> মেহমানদারী করেন;
> প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ান- (এইসকল গুণের অধিকারী যিনি, তাকে আল্লাহ পাক সম্মানিত করবেন, তাকে তিনি কখনো অপদস্থ করবেন না।)’ (বুখারি)
এ ঘোষণার সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে ১৫ বছর দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করেছেন হজরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা। তিনিই সনদ দিয়েছিলেন-
‘আপনি সত্য কথা বলেন।’
২. সাফা পাহাড়ের ঘটনা। প্রকাশ্যে প্রথম ইসলামের দাওয়াত ও আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণার দিনের ঘটনা। সে দিন প্রথমে সবাই এক বাক্যে তাঁকে ‘আল-আমিন’ বা বিশ্বাসী সনদ দিয়েছিলেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘(কুরআন মাজীদে নিকটাত্মীয়দের দাওয়াতের আদেশ নাজিল হওয়ার পর) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাফা পাহাড়ে উঠলেন এবং উচ্চস্বরে বললেন-
‘ইয়া সাবাহাহ্!’ অর্থাৎ বিপদ! বিপদ!
কুরাইশের লোকেরা পাহাড়ের সামনে উপস্থিত হল। তিনি তাদের লক্ষ্য করে বললেন-
‘আমি যদি তোমাদের বলি যে, একটি শত্রুদল এই পাহাড়ের ওপার থেকে তোমাদের উপর আক্রমণ করবে তোমরা কি আমার কথা বিশ্বাস করবে?’
সকলে বলল-‘আমরা আপনাকে কখনো মিথ্যা বলতে দেখিনি।’ তখন তিনি বললেন, আমি তোমাদের জন্য এক কঠিন আযাবের আগের সতর্ককারী। (বুখারি)
ইসলামের প্রথম যুগে পুরো কুরাইশ জাতির কাছ থেকে তিনি সত্যবাদিতার সনদ পেয়েছিলেন তাদের এ কথায়-
‘আমরা কখনো আপনাকে মিথ্যা বলতে দেখিনি।’
এ সত্যবাদিতার পথে হাটলেই রচিত হবে জান্নাতের সহজ পথ। যে পথের দিশা দিয়েছেন স্বয়ং বিশ্বনবি। হাদিসের ঘোষণাও এমন-
‘সত্যবাদিতা মানুষকে সব সময় ভালো কর্মের দিকে পরিচালিত করে। আর ভালো কর্ম জান্নাতের দিকেই নিয়ে যায়। পক্ষান্তরে মিথ্যাবাদিতা পরিচালিত করে মন্দ কর্মের দিকে আর মন্দ কর্ম জাহান্নামের দিকে (নিয়ে যায়)।’ (বুখারি)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, সত্যবাদিতার মাধ্যমে জান্নাতের দিকে ধাবিত হওয়া। মিথ্যা থেকে বিরত থাকা। নিজেদের নবি জীবনের অনন্য আদর্শ সত্যবাদিতার গুণে আলোকিত করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সত্যবাদিতার গুণে নিজেদের সাজানোর তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত জান্নাতের পথ তৈরির করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন